শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

ফেনী জেলার ভারতীয় সীমান্ত মাদকের নিরাপদ রুট

ফেনী জেলার ভারতীয় সীমান্ত মাদকের নিরাপদ রুট

ফেনী, ১৭ মার্চ, এবিনিউজ : ফেনী জেলার ভারতীয় সীমান্তের কমপক্ষে শতাধিক স্পট দিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে প্রাণঘাতী মাদক। এতে এই দুই জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। বিভিন্ন উপজেলা, গ্রাম-পাড়া মহল্লায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। এর ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। তবে জেলায় ঢোকা মাদকের সিকি ভাগও উদ্ধার হয় না বলে জানিয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।

এদিকে ফেনী সীমান্ত জেলা হওয়ায় এখানেও মাদক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ৬টি উপজেলার অলি-গলিতে মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠায় মাদকের ভয়াল থাবায় স্কুল ও কলেজগামী যুবক ও কিশোররা বিপথগামী হয়ে পড়েছে। উপজেলাগুলোতে পাড়া, মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা মাদক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে বিশেষ করে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাস থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য বিভিন্ন বাহিনী আটক করে। এছাড়া মাদক বহনের কারণে আটক হয়েছে ৫৩৫ জন এবং মামলা হয়েছে ৪৫৬ জনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি ফেনীর ফুলগাজীর বদরপুরের খানবাড়ী এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় নওশের আলী নামে এক আনছার সদস্য নিহত হন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন ফেনী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানাসহ আরো ১০ জন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল সাংবাদিকদের জানান, এ এলাকা দিয়ে র্দীঘদিন ধরেই মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। সে তথ্য রয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ফেনীর ১১৯ কিলোমিটার সীমান্তে মাদক চোরাচালানি সিন্ডিকেট অনেকটা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। তারা বিপুল মাদক মজুদ গড়ে তোলার টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই মাদকের নিরাপদ আখড়া হয়ে উঠেছে ফেনীর সীমান্ত এলাকা। এলাকাটি মাদক ও নিষিদ্ধ সামগ্রী ঢোকার নিরাপদ রুট। শুধু মাদক নয় এ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশও ঘটে অহরহ। চোরাচালানিরা প্রতিনিয়ত দেদার নিয়ে আসছে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা, হেরোইন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, হুইস্কিসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে তরুণ ও বিভিন্ন বয়সের লোকজন রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।

সরেজমিন সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, ও পরশুরাম এলাকায় প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য এনে মজুদ করছে। এসব মজুদকৃত ফেনসিডিলসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য পরে তা রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন মাধ্যমে সরবরাহ করছে। ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল বাংলাদেশে পাচার হয়ে এলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাদক পাচার করে আনায় চোরাচালানিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। চোরাচালানি ও মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে ইতোমধ্যে সব সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্তে টহল তৎপরতা জোরদার করেছে এবং চোরাচালানিদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে।

ফেনীর বিজিবির-৪ ব্যাটালিয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাদক প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও সমাজের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজিবি জিরো টলারেন্স দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশসহ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছে। স¤প্রতি পূর্ব ছাগলনাইয়া বিজিবি ক্যাম্পে এক মতবিনিময় সভায় ফেনীর জায়লস্করস্থ-৪ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আমাদের উপর অ্যাজেন্ডা হচ্ছে সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ রাখা। পুরো সীমান্তকে সিলগালা করে দেয়া সম্ভব নয়। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকাকে সিলগালা করে দেয়া হয়, অন্যথায় নয়। গত ডিসেম্বর মাসে চার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করে বিজিবি। ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, মাদকের ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্সে অবস্থানে রয়েছেন।

এবিএন/মোহাম্মদ ইসমাইল/জসিম/ইমরান

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত