মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ওসি মনিরুলের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান এখন শোকস্তব্ধ

ওসি মনিরুলের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান এখন শোকস্তব্ধ

ওসি মনিরুলের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান এখন শোকস্তব্ধ

নোয়াখালী, ২৬ মার্চ, এবিনিউজ : মাত্র একদিন আগেই বিয়ের আনন্দে মুখর হয়েছিল যে বাড়ি সে বাড়িতে এখন নেমে এসেছে শোকের কালোছায়া। গত শুক্রবারই ছোট ভাই শামীমের বিয়েতে ছুটি নিয়ে সস্ত্রীক বাড়ি গিয়েছিলেন জালালাবাদ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম সোহেল (৪০)। সিলেটে অভিযান শুরুর পর বোম্ব ডিস্পোজাল বিশেষজ্ঞ হওয়ায় ডাক পড়ে তার। বাড়িতে হইহুল্লোর আর অতিথিদের রেখে ছুটে যান দায়িত্ব পালনে। একদিন পরেই ফিরলেন। কিন্তু নিথর দেহ নিয়ে।

সিলেটে জঙ্গি আস্তানার পাশেই বোমা বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে ওসি মনিরুল একজন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলা সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের এওজবালিয়া গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডে। তিনি ওই গ্রামের মন্নান নগর চৌরাস্তা সংলগ্ন নুরুল ইসলাম ডাক্তার বাড়ির মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে জানাজা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।

ছোট ভাই শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করে বণিক বার্তাকে জানান, ২০০৪ সালে উপ-পরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগ দেন মনিরুল। ২০১৪ সালে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশে যোগ দেন।

শামীম আরো জানান, গতকাল শনিবার রাতে মনিরুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে যান সিলেটে। রোববার দুপুরে সিলেট পুলিশ লাইনসে জানাজা শেষে বিকাল ৩টায় মরদেহ নিয়ে রওয়ানা হন তারা। আজ রবিবার রাত ৯-১০টার মধ্যে মনিরুলের মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছার কথা। সোমবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।

এদিকে মনিরুলের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের বাড়িতে শনিবার মধ্যরাত থেকে মানুষের ঢল নামে। সন্তানকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মনিরুলের বৃদ্ধা মা ফিরোজা খাতুন। হতবিহ্বল স্ত্রী পারভিন। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি হয়তো নিশ্চিত নয় শিশুপুত্র পারাভি, তাই এ-কোল থেকে ও-কোলে তার যাওয়া-আসা।

নোয়াখালীর সুধারাম থানার একাধিক পুলিশ সদস্য জাতীয় পতাকা আর করুণ সুরে বিউগল বাজিয়ে প্রিয় সহকর্মীকে শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুতি নিয়ে প্রতীক্ষায় তার বাড়িতে।

মনিরুলের প্রতিবেশী ও সহকর্মী লক্ষ্মীপুর জেলার কমল নগর থানার উপ-পরিদর্শক শাহ্ আলম জানান, প্রতিবেশী হিসেবে নয় তার (মনিরুল) সঙ্গে সখ্য ছিল সহকর্মী হিসেবে। মনিরুল ও শাহ্ আলম একই গ্রামের বাসিন্দা। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও দায়িত্বশীল ছিলেন মনিরুল। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ও সহকর্মীদের সকল অনুরোধ তিনি হাসি মুখে গ্রহণ করতেন।

শাহ্ আলম বলেন, সব সময় কর্মব্যস্ত থাকতে পছন্দ করতেন স্যার (মনিরুল)। মাঝে মধ্যে বলতাম স্যার এভাবে বেশি দৌড়াদৌড়ি করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। প্রতিউত্তরে তিনি বলতেন, ‘কী করবো দায়িত্বে ফাঁকি দেয়াওতো এ পেশায় নেই’। তার কাছ থেকে অনেক সময় অনুপ্রাণিত হতাম আমরা।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকার সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলের’ পাশে সন্ধ্যা ও রাতে পর পর দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম সোহেল নিহত হন। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত