![ফেনীতে বাড়ছে বেপরোয়া যান চলাচল : ৩ মাসে ঝরেছে ১০টি প্রাণ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/04/09/abnews-24.comaaabbbmmm_71625.jpg)
ফেনী, ০৯ এপ্রিল, এবিনিউজ : ফেনী শহর দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চলাচলের কারনে গত ৩ মাসে প্রাণ ঝরছে ১০ জনের। ফেনী শহরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সহ জেলার অভ্যন্তরীন সড়কে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া যান চলাচলের কারনে এসব সড়কগুলো এখন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে গত ৩ মাসে প্রায় ১০ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে শহরের ট্রাংক রোডে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দুটি মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক (ট্রাংক রোড), ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ বিভিন্ন রূটে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয় না। অনেক সময় এক শ্রেনীর অসাধু পুলিশ সদস্যরা টাকা নিয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা করে দেয়ায় চালকরা পার পেয়ে যায়। মহিপাল ও ফতেহপুরে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ফলে যানজট এড়াতে ফেনী শহরের উপর দিয়ে যাত্রীবাহী বাস সহ ভারী যানবাহন চলাচল করছে। শহরে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে গাড়ী চলাচল করলেও তারা নির্বিকার। শহরের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাংক রোডের খেজুর চত্বর সংলগ্ন হাকিমস্ এর সামনে ডিভাইডার পার হয়ে শক্তি ঔষুধালয়ের দিকে যাওয়ার পথে কভার্ডভ্যান চাপায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আবু সাঈদ জয় (৪৫) নিহত হয়। এর আগের দিন বুধবার দুপুরে শহরের চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্ট গাড়িটি দ্রুত গতিতে আসার সময় শান্তি কোম্পানী রোডের মাথায় ডিভাইডারের সাথে জোরে ধাক্কা দেয়। আরো ৫/৬ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে আশপাশের লোকজনর এগিয়ে এসে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে শহরতলীর পাঁচগাছিয়া বাজারের রাস্তা পার হওয়ার সময় মোটর সাইকেলের ধাক্কায় ছেমনা খাতুন নামের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনি পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মৃত আব্দুস সোবহানের স্ত্রী। ২১ শে মার্চ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাংক রোডের সেন্ট্রাল হাই স্কুল সংলগ্ন স্থানে কভার্ডভ্যান চাপায় ইমাম হোসেন প্রিন্স নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। সে বিরিঞ্চির কামাল হাজারী রোডে মির্দাবাড়ীর মো. ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে মোটর সাইকেল নিয়ে লালপুলের দিকে যাচ্ছিলেন। ৬ মার্চ ফেনী শহরতলীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিসিক রাস্তার মাথায় চট্টগ্রাম অভিমুখী একটি কভার্ডভ্যান চাপায় দাগনভূঞা পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী তাজুল ইসলাম নিহত হয়েছে। ওইদিন কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে দাগনভূঞার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তাজুল ইসলাম। নিহত তাজুল শহরের বিরিঞ্চি এলাকার মৃত আবদুল হাইয়ের ছেলে। ৫ মার্চ ফেনী শহরতলীর রানীরহাট বাজার সংলগ্ন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় কাউছার পাটোয়ারী নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী সিএনজি অটোরিক্সার ধাক্কায় নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় মো. মোস্তাফা নামের আরো সিএনজি যাত্রী সহ দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রুবেল ছাগলনাইয়ার চাঁদগাজী ইউপির মাটিয়াগোদা গ্রামের এনামুল হক পাটোয়ারীর ছেলে। ৩০ জানুয়ারি রাতে ফেনী সদর উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফাজিলপুর নামক এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ফেনী পল্লী বিদ্যুত সমিতির ছাগলনাইয়া অঞ্চলের ডিলার মোবাশ্বের খোন্দকার সোহেল (২৬) নিহত হয়েছেন। নিহত মোবাশ্বের খোন্দকার সোহেল ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজপানুয়া গ্রামের বড় বাড়ির আজিজুল বারী খোন্দকার নান্টুর ছেলে।
১৭ জানুয়ারি ফেনী শহরের অদূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া এলাকায় মহাসড়ক পারাপারের সময় প্রাইভেটকার চাপায় আসমা আক্তার নামে এক গৃহবধু নিহত হয়েছে। নিহত আসমা আসমা সদর উপজেলার মোটবি ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাহার মিয়ার স্ত্রী। ১৪ জানুয়ারি শহরের রামপুর রাস্তার মাথায় স্টার লাইনের তেলবাহী ট্রাকের ধাক্কায় রিক্সারোহী এক নারী ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। একইদিন ফেনী-নোয়াখালী সড়কের দক্ষিন কাশিমপুরে ট্রাক চাপায় আরমান হোসেন নামের এক মোটর সাইকেল চালক নিহত হয়েছে। নিহত আরমান দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহিগুনী এলাকার মৃত মো. মোস্তফা মিয়ার ছেলে। এ ঘটনার দুইদিন পর নিহতের ভাই নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মীর গোলাম ফারুক জানান, সড়ক দূর্ঘটনা কমানোর জন্য পরিবহন চালক-শ্রমিকদের পাশাপাশি জনসাধারনকে সচেতন হতে হবে। জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম সহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে জনসাধারণকে সামাজিকভাবে সচেতন করতে হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুর্ঘটনা রোধে সার্বক্ষনিক সতর্ক রয়েছে।
এবিএন/মোহাম্মদ ইসমাইল/জসিম/তোহা