
ঢাকা, ১০ এপ্রিল, এবিনিউজ : বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সই করতে পারে ভারত। রবিবার ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু'র এক প্রতিবেদনে এমনটাই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি একটি আলোচিত বিষয়। চার দিনের এ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না এটা এখন নিশ্চিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি চুক্তির মতো বাংলাদেশ তিস্তার পানির ‘ন্যায্য’ হিস্যা চায় ভারতের কাছে। তবে এ নদীর ন্যায্য ভাগাভাগি এখনো হয়নি। তিস্তার পানি চুক্তি না করতে পারার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ১৯৮৩ সালে তিস্তার পানির প্রায় সমবণ্টন নিয়ে প্রথম প্রস্তাব ওঠে। তবে এরপর আর ওই প্রস্তাবের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আবার এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে’ একটি ‘(খসড়া) চুক্তি’ তৈরির জন্য দুই দেশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় দুই দেশের ঘোষণা ছিল আরও উৎসাহব্যঞ্জক। দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় সে সময় ‘যত দ্রুত সম্ভব সব পক্ষকে একত্র করে একটি চুক্তিতে উপনীত’ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তীতে দুই দেশের সম্পর্ক নানা পর্যায়েই উন্নত হতে থাকে। তবে আজকের এই ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এক জটিল সময়ের মুখে। দুই বছর পরে এক কঠিন নির্বাচনের মুখে পড়তে হবে হাসিনার সরকারকে। সেই নির্বাচনে পানির ভাগাভাগির এ বিষয়টি হবে অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু।
দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক করিম বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সব চুক্তিও যদি বাস্তবায়ন হয়, বাংলাদেশের অনেক মানুষ একটি প্রশ্নই করবে- তিস্তা চুক্তি হলো না কেন?
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তার পানি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এ নিয়ে চুক্তি করতে গেলে মমতা ব্যানার্জিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এখন দিল্লিতে সব পক্ষের প্রধানেরা একত্র হয়েছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে একটি ভালো ফল আসবে- এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
অবশ্য তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে মিলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জোরালো আশ্বাস। তিনি বলেছেন, তার এবং শেখ হাসিনার সরকারই এই চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। তাদের সরকার দ্রুত এটা নিষ্পত্তি করবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের মুম্বাইভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপ’ জানিয়েছে, তিস্তা অববাহিকায় অনেক হিমবাহ গলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তার গড় প্রবাহ ছয় হাজার কোটি কিউবিক মিটার। বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এ পানির বেশির ভাগটা প্রবাহিত হয়। তবে এ নদীর প্রবাহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে শুকনো মৌসুমে, অক্টোবর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত। এ সময় তিস্তায় গড় প্রবাহ থাকে ৫০ কোটি মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি। আর এর অনিবার্য পরিণতি হলো বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর শুকনো মৌসুমে খরা।
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করেন, বিশালকায় কিছু জলাধার নির্মাণ করে শুকনো মৌসুমে ব্যবহারের জন্য সেখানে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়। এসব জলাধার নির্মাণ করতে হবে ভারতকে। কারণ, সে দেশে পর্বত থেকে নেমে আসা পানির উৎস আছে; যেটি বাংলাদেশের নেই।
হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে পড়েছে। এ নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়টি সম্ভবত প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়। সিকিমের প্লাবন ভূমির প্রায় পুরোটা এবং বাংলাদেশের ২ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। এ নদীর ওপর নির্ভর করে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা।
তিস্তার পানি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এ নিয়ে চুক্তি করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এখন দিল্লিতে সব পক্ষের প্রধানেরা একত্র হয়েছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে একটি ভালো ফল আসবে, এ প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি