খাগড়াছড়ি, ১৯ এপ্রিল, এবিনিউজ: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দুর্গম গুইমারা উপজেলা ও জেলা সদর দেবতা পুকুরের আশা-পাশ গ্রামে অজ্ঞাতনামা রোগে শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু আক্রান্ত হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ৩০জন ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে সিট না থাকায় রোগীদের স্থান হয়েছে ফ্লোরে। হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা বলছে, এটি গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এদিকে দুর্গত এলাকায় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা হলেন কৃঞ বালা ত্রিপুরা(২২), কবিতা ত্রিপুরা(৩০), বহি বালা ত্রিপুরা(১৭), দীকা ত্রিপুরা(১৬), মায়া বালা ত্রিপুরা(২৬), খাজ বালা ত্রিপুরা(১৮), বানু বিথি ত্রিপুরা(৩০), দিনু ত্রিপুরা(২১), কলইমা ত্রিপুরা(১৭), সাগরিকা ত্রিপুরা(১০), টিপায়ন ত্রিপুরা(১১), মহন ত্রিপুরা(১৬), সনদি রাম ত্রিপুরা(৩৫), কলোইসা ত্রিপুরা(১৬) ও বহেন ত্রিপুরা(১৫)।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গুইমারা উপজেলার গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দূর্গম তৈমথাং গ্রামের-নারী, শিশুসহ শতাধিক গ্রামবাসী। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাদের মধ্যে ২২জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রথমে গুইমারা উপজেলা প্রত্যন্ত দূর্গম তৈমথাং গ্রামে গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৭৫জন নারী-পুরুষ অসুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে সোমবার গুইমারায় গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে একই গ্রামের বেড়ে শতাধিক আক্রান্ত হয়েছে। গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন জেলার গুইমারা উপজেলার দূর্গম তৈমথাং গ্রামের নারী, শিশুসহ শতাধিক গ্রামবাসী। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাদের মধ্যে ২২জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী দয়া কুমার ত্রিপুরা জানান, সোমবার সকাল থেকে ঐ গ্রামের মানুষগুলো হঠাৎ করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না-কাটি ও পাগলামি শুরু করে এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৭৫জন নারী পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।
হাসপাতালে আসা দয়া কুমার ত্রিপুরা নামে রোগীর এক আত্মীয় জানান, সোমবার সকাল থেকে ওই গ্রামের লোকজনের মাঝে কেউ কেউ হঠাৎ কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে এমন রোগের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নয়ন ময় ত্রিপুরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এটি একটি গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠবে। এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা: আব্দুস সালাম জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ। মানসিক ভাবে এটি ছড়ায়। আক্রান্তদের মানসিক ভাবে আস্বন্ত করতে পারাতে এ রোগের চিকিৎসা। জেলার সিভিল সার্জন ডা: আব্দুস সালাম ও আরএমও নয়ন ময় ত্রিপুরা নিজেই মঙ্গলবার দুপুরে এলাকা পরিদর্শন করে গ্রামবাসীদের ভয় না পেতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গুইমারায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে, সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা জানান, খাগড়াছড়ির দেবতা পুকুরের আশ-পাশ দুর্গম তৈমাতাই গ্রামে এ অজ্ঞাত রোগটি দেখা দেয়। প্রথমে রোগী অস্বাভাবিক আচারণ করে অনেকটা হিংস্র আচারণ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
খাগড়াছড়ি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সকাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ৩০জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে এলাকাটি দুর্গম হওয়ার কারণে অনেক রোগীকে আনা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এটি গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জন নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে গেছে।
উল্লেখ্য ২০১৩সালে ওই গ্রামে এমন রোগে একইভাবে শতাধিক আক্রান্ত হয়েছিল।
এবিএন/ চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর