বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

খাগড়াছড়ির সবুজ পাহাড়ে তামাকের বিষ

খাগড়াছড়ির সবুজ পাহাড়ে তামাকের বিষ

খাগড়াছড়ি, ১৫ মে, এবিনিউজ : বছরের পর বছর স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি দখল করে নিচ্ছে বিষাক্ত তামাক চাষ।তামাক চাষের কারনে সবুজ পাহাড় বিষাক্ত হয়ে পড়ছে ।ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ থেকে বাদ যাচ্ছে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকাও।সরকারি হিসেবে তামাক চাষ কমে আসার কথা থাকলেও তামাক চাষের জমি বাড়ছে। তামাক চাষের কারনে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় সহ্রাধিক চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে বনের মুল্যবান কাঠ । অভিযোগ রয়েছে সবই হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ,বন বিভাগকে ম্যানেজ করে । অদৃশ্য কারনে যেন টোবাকো কোম্পানীর কাছে সকলে জিন্মি ।

অতিরিক্ত তামাক চাষের কারনে জেলার সবজি সহ নানা ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, তামাক চাষের কারনে শুধু শষ্য উৎপাদন হ্রাস ,বনভুমি উজাড়, পরিবেশের ক্ষতিই শুধু নয়,বেড়েছে চাঁদাবাজি । তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের দুর্বল নীতি বা অবস্থান দেশের কৃষি জমি ধ্বংস, খাদ্য সংকট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয় গুলোকে প্রকট করে তুলবে। জমি কৃষকের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। প্রচুর রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার তামাক চাষের একটি বড় ক্ষতিকর দিক। নানাবিধ কারণে বিগত ১০ বছরে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমান ৩২৮ ভাগ বেড়েছে। এ রাসায়নিক ও কীটনাশক মাটির উরবরতা হ্রাস, পানি ধারণ ক্ষমতা নষ্ট এবং ক্ষয় বৃদ্ধি করছে। এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী, পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক পানির উপর নির্ভরশীল।

খাগড়াছড়ি জেলা মাইনী চেংগী নদী কুলবর্তী জমিতে ব্যাপক হারে ক্ষতিকর তামাক চাষ করে এবং এর ফলে জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক গিয়ে নদী-জলাশয়ের পানিতে মেশায় সে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক গুলো পানির সাথে মিশে গিয়ে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট করছে এবং এর ফলে পানি বাহিত রোগের সম্ভবনা বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে মাছে ডিম পাড়ার সময়ে তামাকের কীটনাশক পানির সঙ্গে মেশার ফলে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ক্রমশ মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তামাক পাতার কারণে এমন সব পোকার আগমন ঘটে যা আশেপাশের ফসলী জমির ফসলকে আক্রমণ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিগত বছর গুলোতে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে দুটি কোম্পানি তামাকের বিষ ছড়ালেও চলতি বছর নতুন করে আরও একটি কোম্পানি চাষীদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে গত বছরের চেয়ে জেলায় এ বছর তামাক চাষও দ¦ীগুন বেড়েছে। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোঁয়া ব্যাপক।তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য নির্মিত হয়েছে ধুমঘর। সেখানে প্রতিদিন জ্বালানো হচ্ছে সরকারি রিজার্ভ ফরেষ্টর শত শত মণ বনজ সম্পদ মুল্যবান কাঠ। এ সব ধুমঘর থেকে বের হবে বিষাক্ত ধোঁয়া। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক হুমকি।বহুমাত্রায় তামাক চাষের কারণে খাগড়াছড়ি জেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবিদরা।

খাগড়াছড়ি জেলা মাইনী, ফেনী, চেঙ্গী, ধলিয়া, মানিকছড়ি ধুরং খালের যে দিকে চোখ যায় শুধু তামাক আর তামাক। এত দিন খাগড়াছড়িতে বৃটিশ এ্যামেরিকান টোবাকো কোম্পানী ও ঢাকা টোবাকো কোম্পানি তামাক চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেও চলতি বছর যোগ হয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। তামাক চাষের জন্য আগাম টাকা, সার কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে টোবাকো কোম্পানি গুলো।ফলে ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ করছে কৃষকেরা। বিষাক্ত তামাক চাষের ফলে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন হুমকীর মুখে পড়েছে তেমনি ফসলের জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। শিশু শ্রমিক ব্যবহার নিষেধ থাকলেও তামাক চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু ও নারী শ্রমিক। তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ-ব্যধি।শ্রমিকদের দেয়া হচ্ছেনা জীবনরক্ষাকারি ওষধ ও পোষাক ।

খাগড়াছড়ি জেলায় তামাক চাষের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননা টোবাকো কোম্পানীর কোন কর্মকর্তা বরং তামাক বিষয়ে রিপোর্ট না করতে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেন কোম্পানীর লোকজনরা ।খাগড়াছড়িতে তামাক কেম্পানীর বিলাশ বহুল গাড়ি সরকারি দপ্তরে এ্যামেরিকান টোবাকো কোম্পানীর আকর্শনীয় ডায়রী ক্যালেন্ডার,প্রতিবছর সাংবাদিক ও ভিআইপিদের খাবার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান হয় । আবার অনেক কর্মকর্তাকে দেয়া হয় আকর্ষনীয় সিগারেট উপটোকন ।এসব সবই তামাক চাষের কারন ।

খাগড়াছড়ি কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কর্মকর্তা তরন ভট্টাচার্য্য জানান, চলতি বছর জেলায় তামাক চাষ গত বছরের চেয়ে ৪২ হেক্টর বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, তামাক চাষ রোধে কৃষি বিভাগের পক্ষে মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির সাথে লড়াই করার সক্ষমতা নেই। এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা কেননা কৃষকরা নগদ লাভে বিশ^াসী ।তামাক চাষ থেকে কৃষকদের ফেরাতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন ।তিনি জানান,পাহাড়ের মাটি আবহাওয়া কৃষির জন্য অত্যন্ত ভালো ।জেলার বিভিন্ন উপজেলার ভালো কৃষিজমি গুলো দখল করে আছে টোবাকো কোম্পানী গুলো।

খাগড়াছড়ির নবাগত জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম তামাকের ক্ষতিকর দিকের কথা উল্লেখ করে বলেন তামাক চাষে কৃষকদের নিরৎসাহিত করে অন্য ফসলে ফেরানোর জন্য কার্যক্রম চলছে বলে জানান।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, কোন জমিতে এক বার তামাক চাষ করা হলে সে জমিতে আর কোন ফসল ফলানো যায় না। এ ভাবে তামাক চাষ অব্যাহত থাকলে এক দিকে বিষাক্ত তামাকের ছোবলে পরিবেশ যেমন হুমকীর মুখে পড়বে তেমনি অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটে পড়বে জেলাবাসী।

এবিএন/মো. ইব্রাহিম শেখ/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত