শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে চাঁদা না দিলে ঘাটের ট্রাক নড়ে না

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে চাঁদা না দিলে ঘাটের ট্রাক নড়ে না

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে চাঁদা না দিলে ঘাটের ট্রাক নড়ে না

মানিকগঞ্জ, ১৯ মে, এবিনিউজ : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে পণ্যবোঝাই ট্রাক ফেরি পারাপারে নির্ধারিত টাকার থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছে বিআইডব্লিউটিসি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে। নিয়মবহির্ভূতভাবে চাঁদা আদায়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ট্রাকচালক ও মালিকরা। অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা না দিলে ট্রাক ফেরি ঘাটে বসে থাকতে হয় দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত এ টাকা দিতে হচ্ছে ট্রাক চালকদের। দক্ষিনাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশপথ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট। এ রুটে প্রতিনিয়ত পরিবহন পারাপারের পাশাপাশি পণ্যবোঝাই ট্রাক পারাপার হয়। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে প্রায় হাজার খানেক পণ্যবোঝাই ট্রাক পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে পারাপার হয়ে থাকে। এ ট্রাক পারাপারের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ১৪৬০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী ফেরি পারাপারে ছোট গাড়ি সাড়ে ২০ টন ও বড় গাড়ি সাড়ে ২৩ টন মালামাল পরিবহন করতে পারবে। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি হলে প্রতিটনের জন্য ১২০ টাকা হারে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করতে হয়। পচনশীল পণ্যবোঝাই ট্রাক সব সময় ও বাকি ট্রাকগুলো রাতে পারাপারের নিয়মের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রীবাহী পরিবহনের পাশাপাশি ট্রাক পারাপারের কাজে নিয়োজিত থাকে বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। দিনে ট্রাক পারাপারের জন্য সিরিয়াল দেওয়ার কথা বলে প্রতি ট্রাক থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে। আর তাদের এ অবৈধ চাঁদাবাজিতে সহায়তা করে থাকে স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। আর ট্রাকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত হাতিয়ে নেওয়ার বাইরেও পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিসির কর্মরতদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এ দিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও ওজন স্কেলের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। কম্পিউটার নষ্ট এই অজুহাতে মালবাহী ট্রাকগুলো থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ট্রাক টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর পর আরো একটি চক্র ঘাট উন্নয়নের কথা বলে কাভার্ডভ্যান, চালবোঝাই, পাথরবোঝাই ট্রাক থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং মিনি ট্রাক থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা তুলছে। জিরো পয়েন্ট বা ফেরি ঘাটে গাড়ি প্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। বাণিজ্য শাখার ম্যানেজার খন্দকার তানভীর হোসেন জানায়, আমার জানামতে ট্রাক থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। পচনশীল পণ্য ছাড়া রাতে ট্রাক পারাপারের নিয়মের কথা থাকলেও কেন দিনে পারাপার হচ্ছে ট্রাক এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ম্যানেজার খন্দকার তানভীর হোসেন। তিনি সবশেষে বলেন, যে কোনো তথ্য জানতে চাইলে ডিজিএম স্যারের কাছে যেতে হবে। নামপরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রাক চালক জানান, ওভারলোড না হলে ১৪৬০ টাকা ভাড়া। ওভার লোড হলে ১২০ টাকা করে প্রতি টনে বেশি দিতে হয় আর না দিতে পারলে মাল কমিয়ে ফেরিতে উঠতে হয়। গোপনে টাকা দিলে কিসের মাল কমাবো, তখন পারলে আরো বেশি করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তারা। ওভারলোডে মাল না এনেও আমাদের কাছ থেকে ১৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ২১০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে টিকিট কাউন্টারের লোকজন। না দিলে কয়েক দিনের সিরিয়ালে ফেলে দেয়। একদিন ঘাট এলাকায় থাকলে হেলপারসহ আমরা তিনজনের খাবার খরচ বাবদ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা খরচ হয়। যার কারণে বাধ্য হয়ে কিছু টাকা বেশি দিয়ে পারাপার হই।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট শাখার ডিজিএম মোহাম্মদ আজমল হোসেন প্রথমে ট্রাকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন আমি ঘাটে কি টিকিট বিক্রি করি? ওখানে যে অফিসার আছে সে ভালো বলতে পারবে। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানায়, আমি যোগদান করার আগে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালের বেশ নাজুক অবস্থা ছিল। চাঁদাবাজিতে ভরে গিয়েছিল পাটুরিয়া ঘাট এলাকা। আমি আসার পরে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে এই বিআইডব্লিউটিসির কয়েকজন স্টাফকে আটক করে বিদায়ী ডিজিএম নাছিম সাহেবের কাছে দেই। ডিজিএম তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আবার চাদাবাজি শুরু হয়েছে বলে আমি ডিবি পুলিশ মোতায়েন করেছি। এখন তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বলে শুনেছি।

এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত