![খাগড়াছড়িতে সমাবেশের অনুমতি না মিললেও সমধিকার হরতাল-অবরোধ পালিত](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/05/22/khagrachari-2pbcp-protest-s_79141.jpg)
খাগড়াছড়ি, ২২ মে, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সমঅধিকার আন্দোলন ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ও হরতাল পালিত হয়েছে। রোববার তিন বাঙালি সংগঠনের পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজে মধ্যে হরতাল-অবরোধ শান্তিপূর্ন ভাবে পালিত হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইস্যূতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের একাংশ রোববার খাগড়াছড়িতে শাপলা চত্বরের মুক্ত মঞ্চে মহাসমাবেশের আহ্বান করলেও শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ করেনি।
পরবর্তী ইস্যু ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল ইসলাম হত্যাকান্ডেসহ ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলোর গুম অপহরণ ও অব্যাহত চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের ডাকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ও বাঙালি ছাত্র পরিষদের হরতাল পালিত হয় বলে জানানো হয়।
অবরোধ ও হরতালের কারণে জেলায় আভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লা সকল সড়কে যানবাহন বন্ধ রয়েছে। হরতাল-অবরোধের কারণে জেলার ৯টি উপজেলা সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছেড়ে যায়নি দুরপাল্লার গাড়িও। সরকারী চাকুরীজীবি, স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রীদের গন্তব্য স্থলে প্রখর রোদে হেতে যেতে দেখা গেছে। এখনো পর্যন্ত শহরের আংশিক খুললেও অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। সকালে দোকানপাট বন্ধ থাকলের দুপুরের পরে ব্যবসায়ী খুলতে শুরু করে। হরতালের সমর্থনে জেলা সদরের বাইরেও বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে পিকেটিং হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে এখনো কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে জেলা সদরে হরতাল আহবানকারিদের মাঠে দেখা না গেলেও উপজেলা গুলোতে রাজ পথে রয়েছে পিকেটাররা। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় দোকানপাট বন্ধ রেখে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুটি হরতাল-অবরোধ পালন করতে দেখা গেছে।
অনুরূপ দাবী জানিয়ে রোববার শহরের শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের অপর অংশ এবং সমঅধিকার আন্দোলন। একই স্থানে দুটি সংগঠনের সমাবেশ আহবানের কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন কাউকেই অনুমতি দেয়নি। বাঙ্গালীদের পৃথক তিনটি সংগঠনের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাউদ্দিন জানান হরতাল শান্তি পূর্ণভাবে হয়েছে। হরতালের কারনে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই জন্য শহরের ও জেলার গুরুত্ব পূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অপহরণ, খুন, গুম, চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে একই দিন এবং একই স্থানে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন সমাবেশ ও পুরো জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেয়। একই ইস্যূতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের মাঈন-মাসুম অংশটি একই দিন জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে। ফলে দেখা দেয় উভয়ের উত্তেজনা। শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের একটি অরুনিমা কমিউনিটি সেন্টারে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের একটি অংশ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রোববার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ সফল করতে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর মো: আব্দুল মজিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আলকাছ আল মামুম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব আলী চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিক সম্মেলনে মহাসমাবেশের দিন হরতাল ডাকায় বাঙালি ছাত্রপরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাঈন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুম রানার বিরুদ্ধে বাহিষ্কার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান এয়াকুব আলী চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামাতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেন, আলকাছ আল মামুন ভূইয়া ও এয়াকুব আলী চৌধুরী। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে মহাসমাবেশের সমর্থনে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাধায় তা পন্ড হয়ে যায়। অপর অংশ সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে মাঈন ও এসএম মাসুম রানার নেতৃতাধীন অংশটি অবস্থান নেয় সদর উপজেলা পরিষদ মাঠ এলাকায়। ফলে সংঘাতের আশঙ্কায় শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান আবদুস সামাদ মোড়ল জানান, ত্রিমুখী কর্মসূচির কারণে প্রশাসন কোন পক্ষকে অনুমতি দেয়নি।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, অনুমতি না থাকায় রোববার কোন পক্ষকেই মাঠে নামতে দেওয়া হবে না।
পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, আইন-শৃঙ্ঘলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন রোববার পৌর শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তিনি জানান, সমাবেশের অনুমতি না পেলেও রোববার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালিত হয়।
পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: মাঈন উদ্দিন জানান, রোববার জেলায় সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়।
পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতা ও মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ জানান, ‘২১ তারিখে যারা হরতাল আহ্বান করেছে তাদের সাথে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের দুরতম সম্পর্কও নেই’-কেন্দ্রীয় কমিটি ।
এদিকে ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অপহরণ, গুম, খুন, চাঁদাবাজি বন্ধ ও তাদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্বারের দাবিতে রোববার(২১ মে) খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ। শুক্রবার(১৯ মে) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের একটি টং রেস্টুরেন্ট এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ হরতাল ঘোষণা করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: মাঈন উদ্দীন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর এসএম মাসুম রানা, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, জেলা সহ-সাংগঠনিক পারভেজ আলম, জেলা সহ- সাংগঠনিক আশরাফুল রণি, দপ্তর সম্পাদক বাবু মৃদুল বড়ুঁয়া, জেলা প্রচার সম্পাদক শাহীন আলম, পৌর সভাপতি মো: রাশেদুল ইসলাম, কলেজ সভাপতি(ভারপাপ্ত) ওমর ফারুক ও কলেজ সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাতসহ অন্যান্য উপজেলাসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে এসএম মাসুম রানা বলেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটি ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১মে খাগড়াছড়ি জেলার সকল উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, এখন একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের জেলা, উপজেলা ও সকল অঙ্গসংগঠনকে বাদ দিয়ে বাঙালিদের নাম ভাঙ্গিয়ে পকেট ভারী করার জন্য তথাকথিক কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। সংবাদ সম্মেলনে হরতাল সফল করতে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
অপরদিকে খাগড়াছড়ির বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের ২১মে অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি। শনিবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় অরুনিমা কমিউনিটি সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, বাঙ্গালি ছাত্রপরিষদসহ জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ। লিখিত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতী সন্ত্রাসী কর্তৃক অব্যাহত ভাবে চলা চাঁদাবাজি, খুন, গুম, ধর্ষণ, অপহরণ বন্ধের দাবি করে সা¤প্রতিক সময়ে মহালছড়ি উপজেলার মোটর সাইকেল চালক সাদেকুল হত্যার বিচার ও বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের নিন্দা প্রকাশ করা হয়। এসময় উল্লেখিত বিষয় সমুহের প্রতিবাদে রোববার খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ সফল করতে সকলের প্রতি সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন, কেন্দ্রীয় নাগরিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী চৌধুরী, নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলার আহ্বায়ক বেগম নুরজাহান, কেন্দ্রীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ রানা, সাধারণ সম্পাদক রাঙ্গামাটি মো: জাহাঙ্গীর আলম, মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহিম মনির।
‘পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নামে ইতিমধ্যে যে বা যারা রোববার ২১মে তারিখে হরতারলের আহ্বান করেছে, মহাসমাবেশ নাই বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং মহাসমাবেশকে বানচালের চেষ্টা করছে তাদের সাথে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের দূরতম কোন সম্পর্কও নেই। তারা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের দালাল, তারা চাঁদাবাজ, খুনি, সন্ত্রাসীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে’-বলে দাবী করেছে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি। ‘এহেন ঘৃন্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার’ জানিয়ে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মো: আবদুল মজিদ কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ, জে.এস.এস সংস্কার গ্রুপের অব্যাহত চাঁদাবাজি, হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধের দাবীতে, নিরীহ বাঙ্গালী মটর সাইকেল চালক সাদেকুল হত্যার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ি মুক্ত মঞ্চে(শাপলা চত্ত্বর) রোববার ২১ মে ২০১৭ইং তারিখে এক বিশাল মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত মহা সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন-ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ, আহ্বায়ক, মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সংগ্রামী চেয়ারম্যান ইঞ্জি: আলকাছ আল মামুন ভুঁইয়া। উক্ত মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা থাকবেন, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পষিদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট এয়াকুব আলী চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ রানা, ছাত্র পরিষদের উপদেষ্টা শেখ আহম্মদ রাজু, আবু তাহের, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলার সভানেত্রী বেগম নুর জাহান, ছাত্র নেতা ইব্রাহীম মনির, সাহাদাৎ ফরাজি শাকিব, ছাদেকুর রহমান, লোকমান হোসাইন, শাহাদাত হোসাইন, তাহেরুল ইসলাম সোহাগ, ইউসুফ পাটোয়ারী, আসাদ উল্যাহ, শাহাদাত হোসেন কায়েস, নজরুল ইসলাম মাসুদ, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মহানগর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা মহানগর, ঢাকা মহানগর এবং সকল উপজেলার বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ উক্ত সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।
নামধারী একটি মহল পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কতিপয় সন্ত্রাসীদের হাতে আপমর জনসাধারণ জিম্মি হয়ে আছে। তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ নাগরিকগণ নিজ দেশে পরবাসী হিসেবে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণ সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ কর্তৃক হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষন, মুক্তিপন, চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আজ দিশেহারা। গত ১২/০৪/২০১৭ইং তারিখে নানিয়াচর নিরীহ বাঙ্গালী মটর সাইকেল চালক সাদেকুল‘কে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে অসংখ্য নিরীহ বাঙ্গালী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যার স্বীকার হয়। এ সকল খুন ও হত্যার কোন সঠিক বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। আজ নির্যাতিত পার্বত্যবাসী এ সকল হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সকল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এলাকার সাধার জনগণ নিরাপত্তার জন্য সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকল স্থরের জনগোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টি আকর্শন করছি। আজ আমরা সমবেত হয়েছি সকল অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। এ সকল অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে পার্বত্য এলাকায় নির্যাতিত নিপীড়িত পার্বত্যবাসীর পক্ষে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ উক্ত মহাসমাবেশ’।
অন্যদিকে বাঙালী ছাত্র পরিষদের দু’গ্রুপের পর মাঠে নামলো সমঅধিকার: ২১ মে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দিয়েছে। রোববার ২১মে খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ আহ্বান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন। সম-অধিকার আন্দোলন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ অঞ্চলের চাঁদাবাজী, খুন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং সর্বশেষ মোটর সাইকেল চালক সাদেকুলকে নৃশংসভাবে হত্যাসহ সকল হত্যার প্রতিবাদে এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিকট থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবীতে ২১মে রোজ রোববার সকাল-সন্ধ্যা সমগ্র খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক অবরোধ ও সকাল ১০ঘটিকায় খাগড়াছড়ির জেলা শহরের মুক্তমঞ্চে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স, সংবাদপত্র বহনকারী গাড়ী ও ফায়ার সার্ভিস এই অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য, একই দাবীতে একই দিন খাগড়াছড়িতে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের দুই অংশ পৃথক পৃথকভাবে হরতাল ও মহাসমাবেশ ডেকেছে। এক গ্রুপের ডাকা হরতাল কর্মসূচী মধ্যে সম-অধিকার কিভাবে সমাবেশ করবে জানতে চাইলে জেলা সমঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বাইরে থেকে লোক আনবো না। স্থানীয়ভাবে যারা আছে তারাই পায়ে হেঁটে সমাবেশে অংশ নেবে। কিন্তু ঐ একই স্থানে ছাত্র পরিষদের আরেকটি গ্রুপ সমাবেশ ডেকেছে। সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা আমাদের মতো আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে সমাবেশ করবো।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ই এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুল ইসলামকে(২৩) মহালছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটির ঘিলাছড়ি উদ্দেশ্যে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার পর ছাদিকুল ইসলাম নিখোঁজ হন। তিনদিন পর ১৩ই এপ্রিল বিকেলে রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি এলাকায় ছাদিকুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত লাশ মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গতঃ গত ১৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটি জেলাধীন নানিয়াচর উপজেলায় ঘিলাছড়ি এলাকায় মোটর সাইকেল চালক ছাদিকুলকে মাটি চাপা অবস্থায় সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় ছাদিকুলের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত চিরজ্ঞিব চাকমা ও কৃষ্ণ বিকাশ চাকমা নামে দুই জনকে ১৫ মে সোমবার রাঙ্গামাটি সদরের সাপছড়ির হামারপাড়া থেকে আটক করে পুলিশ।
এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর