শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

মানিকগঞ্জে মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত গৃহিণীরা

মানিকগঞ্জে মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত গৃহিণীরা

মানিকগঞ্জ, ০৭ জুন, এবিনিউজ : মানিকগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের গৃহিণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে মুড়ি তৈরির কাজে। রমজান মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক গুন। গৃহিনীদের হাতে ভাজা স্বাদে ভরপুর ও সুগন্ধ এই মুড়ি কদর সারা বছরের চাইতে রমজানে অনেক বেশি। বিশেষ করে মানিকগঞ্জের নবগ্রাম, ধলাই, উপাজানি ও সরুপাই গ্রামের গৃহবধূরা পরম মমতা দিয়ে এই মুড়ি তৈরি করছে। সরেজমিন মানিকগঞ্জ-হরিররমাপুর সড়ক সংলগ্ন সরুপাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাজেরা বেগম বাড়িতে হাতে ভাজা ভুষিভাঙ্গা মুড়ির সুবাস। পরিবারের সবাই ব্যস্ত মুড়ি তৈরির কাজে। প্রথম রজমানের দুই এক দিন আগে থেকে প্রতি দিন তারা দুই থেকে চার মন মুড়ি মাটির চুলোয় ভেজে বিক্রি করছে। পাইকাররা এখান থেকে মুড়ি কিনে জেলা শহরের বড় বড় দোকানে নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া এই অঞ্চলের সু-স্বাদু মুড়ির কদর এতোই বেশি যার ফলে জেলার গন্ডি পেরিয়ে তা চলে যাচ্ছে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শুধু হাজেরা বেগমের বাড়িতেই নয় এই গ্রামের কমপক্ষে আরো ১০টি বাড়িতে চলছে মুড়ি তৈরির ধুম। অপর মুড়ি কারিগর গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বললেন, স্বামীর সংসারে যেদিন পা রেখেছি সেদিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি মুড়ি তৈরিতে। ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরেই মিশে আছি মুড়ি ভাজার কাজে। মুড়ি তৈরি ও বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা পেয়েছি। আমার বাড়ির হাতে ভাজা মুড়ির নাম ডাক অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ইউনুছ মিয়া নামের এক মুড়ি তৈরীকারী ও বিক্রেতা পাইকারী বলেন, হাতে ভাজা মুড়ির কদর সব চাইতে বেশি থাকে রমজান মাসে। আমরা যে মুড়ি তৈরি করি তাতে কোন ধরনের ভেজাল নেই। নেই কোন ক্ষতিকার রাসায়নিক পদার্থ। যার কারনে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি। তবে সারা বছরের চাইতে রোজার সময় এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। প্রতি কেজি বিক্রি করি ৮৫-৯০ টাকা। অনেক কষ্ট হয় তার পরও পুর্ব পুরুষের এই পেশাকে ছাড়তে পারি না।

মুড়ি তৈরির কারিগর আব্দুল মান্নান জানান, ভুষিভাঙ্গা মুড়ির ধান আনতে হয় বরিশাল থেকে। সেখান থেকে প্রতি মণ ধান আনতে খরচ পড়ে যায় ১২শ টাকার ওপরে। এক মন ধানে ২২ থেকে ২৪ কেজি মুড়ি হয়। হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করতে পরিশ্রম হয় ঠিকই কিন্ত এই মুড়ি বিক্রি করেই আমাদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ধলাই গ্রামের সকিনা বেগম জানান, সারা বছরের চাইতে রমজান মাসে আমাদের তৈরি হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেক বেশি। মুড়ি ভেজে সারা যায় না। মাথার উপর পাইকাররা দাড়িয়ে থাকে। তবে বরিশাল থেকে চড়া দামে ধান কিনে আনার কারনে লাভ কম হয়। আব্দুস সালাম জানায়, বাজারে মেশিনে সার দিয়ে ভেজাল মুড়ি তৈরি করায় আমাদের মুড়ি উৎপাদন অনেক কমে গেছে। কারন ঐসব মুড়ি প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। আর আমাদের কাছ থেকে এক কেজি মুড়ি কিনতে হলে কমপক্ষে ৮৫-৯০ টাকা লাগে। পার্শ্ববর্তী দিঘুলিয়া গ্রামের মো. মজনু বিশ্বাস জানায়, এক সময় এই গ্রাম গুলো মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রত্যেকটি বাড়িতে মুড়ি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আধুনিক মেশিন দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে মুড়ি উৎপাদন করায় এ অঞ্চলের মানুষ হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে গেছে। এছাড়া সরুপাই গ্রামের তাহের আলী, আকবর ও আফজাল হোসেনের বাড়িতে চলছে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরির ধুম। মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড বাজারের পাইকার দোকানি মো. শাহ আলম জানায়, প্রায় এক যুগ ধরে মুড়ি ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। তবে গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি শহরের মানুষের কাছে কদর বেশি। সেখান থেকে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় কিনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করি। কারন এই মুড়িতে কোন ভেজাল নেই। আর রমজান মাসে ইফতারের জন্য এই মুড়ির চাহিদা বেশি।

এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত