শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • খাগড়াছড়িতে বিজিবি-পুলিশ ও পাহাড়ী তিন সংগঠনের সংঘর্ষে আহত-২৪, আটক-১৯

খাগড়াছড়িতে বিজিবি-পুলিশ ও পাহাড়ী তিন সংগঠনের সংঘর্ষে আহত-২৪, আটক-১৯

খাগড়াছড়িতে বিজিবি-পুলিশ ও পাহাড়ী তিন সংগঠনের সংঘর্ষে আহত-২৪, আটক-১৯

খাগড়াছড়ি, ৭ জুন, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় কল্পনা চাকমা অপহরণের শুনানী নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে বিজিবি পুলিশ ও তিন পাহাড়ী সংগঠনের পাল্টা-পাল্টি সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে কল্পনা অপহরণের শুনানী বিষয়ে আয়োজিত বিক্ষোভে সংঘর্ষে ঘটনায় বিজিবি, পুলিশসহ ২৪জন আহত হয়েছে। দাওয়া-পাল্টা-দাওয়ার ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯জন আটক করা হলেও ৬জনকে রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতরা হলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কলেজ শাখার সম্পাদক এন্টি চাকমা(২০), সোনাবি চাকমা(১৯), ইতি চাকমা(১৮), মহালছড়ির রুপা চাকমা(২১), সুমিতা ত্রিপুরা(১৯)।

তবে পরে সুমিতা ত্রিপুরাকে পুলিশ ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে একজন হাবিলদারসহ তিনজন বিজিবি সদস্য ও একজন ডিএসবি সদস্যসহ ৬ পুলিশ সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে। হামলায় আহত বিজিবি সদস্যরা হলেন, হাবিলদার হাবিবুর রহমান(৫০), সৈনিক কামরুজ্জামান(২৬), সৈনিক মো: রুবেল(২৪)। ডিএসবি‘র সদস্য মো: জাফর আহম্মেদ ও পাহাড়ী তিন সংগঠনের সদস্যসহ ১৫জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুপুরের পর থেকেই খাগড়াছড়ি সদর স্বর্নিভর এলাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদের কর্মীরা পাল্টা-পাল্টি ভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর করেছে বলে খবর পাওয়া যায়।

বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞালিক পরিষক সদস্য থৈচিং মারমা’র মৃত্যুতে রামগড় উদ্দেশ্যে যাওয়া শহরে শান্তিনগর মোড়ে পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদে এসএম মাসুদ ও মো: মাইন উদ্দিন নেতৃত্বে হামলা করে পতাকাবাহী পিকআপটি ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এতে ড্রাইভার মিন্টু চৌধুরী রেন্দি(৩৫), সুইসাপ্রু মারমা খাদ্য(৪২), মংসা মারমা(৩২), পাইক্রই মারমা(৫৫), মামা মারমা(৫৩), চিংবাই মারমা আম্যে(৩৬), মংগল মা ক্রাঞো মারমা(৪৫) কানুনগো স্ত্রী আওয়াবাই মারমা(৩৭), রাবাই মারমা(৩০) অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । পুলিশ প্রশাসন বলছে পরিস্থিতি অবনতি সাথে সম্পৃক্ত দোষী ব্যক্তিদের কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলায় আইন শৃংখলা সেনা ও পুলিশ বাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে।

এ ঘটনা এলাকার ছড়িয়ে পড়লে পাশ^বর্তী উপজেলা ও জেলা সদর শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তি ঘটনা খবর পাওয়া গেছে। দুপুর দেরটায় দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে মানিকছড়ি হাতিমুড়া এলাকায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ১টি ফ্রি-আপে আগুন ধরে সম্পূর্ন ভষ্ভিূত করে ফেলে। পুলিশ উদ্ধার করে আলামত সংগ্রহ করেছে।

রামগড়ে ১টি সিএনজি ভাংচুর করা হয়েছে এবং মহালছড়ি উপজেলাতে কলা বুঝাই ১টি পিকআপে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলা গন্জ পাড়া আলিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানা মোড়ে মাদ্রাসা ছেলেরা দেখে দেখে পাহাড়ীদের যাত্রীবাহি টম টম ও মটর সাইকেল আটকানো অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকার পরিস্থিতি অবনতি আশংকা করছে সংশ্লিষ্ট সচেতন মহলরা। খাগড়াছড়ি টার্মিনাল এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি করে। বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে সাধারণ শ্রমিকেরা। পুরো পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য আইন-শৃংখলাবাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, রামগড় জালিয়াপাড়া রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকে দেয়। বেলা ২টার দিকে যৌথখামার এলাকায় একটি সিএনজি ও একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে এবং গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ ও বিজিবির টহলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মানিকছড়ির খাগড়াছড়ি রোড়ে পিছলাতলা নামক স্থানে, কাঠাল বোঝাই পিকআপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ’র সমর্থকরা। পুলিশ গেলে এসময় তারা পালিয়ে যায়।

রাংগামাটি-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়কের চম্পাঘাট এলাকায় যাত্রীবাহি বাস ভাংচুর’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে পানছড়ি থানা আওয়ামীলীগ সভাপতির গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এর সত্যতা নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে জানান, জেলাতে ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র হামলায় বিজিবি,পুলিশসহ ৯জন আহত ও গাড়ীতে আগুন দিয়েছে। জেলাতে উপজাতীয় মহিলাদের হামলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৯সদস্য আহত হয়েছে। অটককৃতদের মামলা রুজু করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হবে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার এসআই(তদন্ত) মো: মাসুদ রানা জানান, ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশের ৩জন সদস্যসহ ৫জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ১৯জনকে আটক করা হয়েছে।

৩২বিজিবি অধিনায়ক মো: হাসানুজ্জামান চৌধুরী জানান, পূর্ব কোনো কর্মসূচি বিহীন হঠাৎ বেলা দশটার দিকে স্বর্নিভর বাজারে সমাবেশ করতে চেষ্টা করে ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। এ সময় পুলিশ নিষেধ করে। কিন্তু পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে বিজিবির কাছে সহযোগীতা চায়। বিজিবি পুলিশের সহযোগীতা করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছা মাত্রই সমবেত ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্মীরা এলোপাথারী ইট পাটকেল ও গুলতি ছুড়তে থাকে। এ সময় ইটপাটকেল ও গুলতির আঘাতে ৩জন বিজিবিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়।

নিরপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১০টা দিকে শহরের স্বর্নিভর এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পূর্ব অনুমতি না থাকায় মিছিল করা যাবে না বলতেই পুলিশ এর উপর হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ বিজিবি সহায়তা কামনা করলে বিজিবির সদস্যরা এসে যোগ দেয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা বিজিবির সদস্যদের উপরও হামলা অব্যাহত রাখে। এতে ৩বিজিবি ও ৬পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৩জনকে আটক করলেও পরে ৭জনকে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বর্বর হামলা ও গণ ধরপাকড়ের প্রতিবাদ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগের মিছিলে বিনা উস্কানীতে পুলিশ ও বিজিবি’র বর্বরতম ও পাশবিক হামলা এবং গণধরাকপড়ের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, খাগড়াছড়িতে পূর্বঘোষনা অনুযায়ী হিল উইমেন্স ফেডারেশন কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার শুনানী বিষয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে স্বানির্ভর বাজারে সকালে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল। বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি বিনা উস্কানীতে মিছিলে আগত শত শত নারীর উপর হামলে পড়ে এবং বর্বরতম ও পাশবিক উপায়ে ভব্যতার কোনো মাত্রা বজায় না রেখে নারীদের মারধর করতে থাকে। নারীরা এই দিকবিদিক পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে তাদের পুলিশ ও বিজিবির’র পুরুষ সদস্যরা আটক করে। এ পর্যন্ত সংগঠনের সমর্থক প্রায় ২৫জনকে আটক করা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দরা বলেন, যখন স্বনির্ভর বাজারে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী জনতার উপর আক্রমণ করার হচ্ছিল তখন সেখান থেকে মাত্র কয়েকশত গজ দূরে সেটলারদের সংগঠন পার্বত্য বাংগালী ছাত্র পরিষদকে উস্কানীমূলকভাবে পাহাড়ি বসতির কাছে উপজেলা মাঠের কাছে সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে। সেটলারদের সমাবেশ করতে দেয়া ও পাহাড়ি নারী সংগঠনকে বাধা দেয়ার মাধ্যমে প্রশাসন ঘৃণ্য নজির স্থাপন করেছে বলে নেতৃবৃন্দ বিবৃতি বলেন।

তিন সংগঠন নারী সমাবেশের উপর বিনা উস্কানীতে হামলা অথচ অন্যদিকে পাহাড়ি বসতির কাছে সেটলারদের উস্কানিমূলক সমাবেশ করতে দেয়ার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মত ব্যক্ত করে বলেন, সাম্প্রতিককালে পার্বত্য চট্ট্রগামে একের পর এক হামলা, আটক, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যাচার করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একইসাথে সেটলারদের দিয়ে যেকোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের সাধারণ সচেতন জনগণ ও বিশ্ববাসী এই সকল ধরণের নির্যাতন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বিষয়ে সজাগ সতর্ক থাকার কারণে এবং পার্বত্য জুম্ম জনগণের পক্ষে জনগম সংঘটিত হওয়ায় পরিস্থিতিকে ভিন্নদিকে মোড় নেয়ার জন্য বারবার এই ধরণের হামলা একনাগাড়ে ঘটানো হচ্ছে বলে নেতৃবৃন্দ মত প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ একই সাথে দেশের সকল সচেতন জনগণকে আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে যেন কেউ বা কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে এবং তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ যেন দেশের মধ্যেও উগ্রবাদী শক্তি তথা সাম্প্রদায়িক পক্ষ মাথাচাড়া দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে লুঙুদু, দিঘীনালা হামলা ও আজকের স্বনির্ভরে নারী জনতার উপর পুরুষ পুলিশ ও বিজিবির বর্বরতম পাশবিক অভব্য হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও এর পেছনে কী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তা উদঘাটন করার জন্য বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনসহ পার্বত্য জুম্ম নাগরিক সমাজকে নিয়ে একটি গণতদন্ত টিম গঠন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। একই সাথে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক উস্কানীদাতা পুলিশ ও বিজিবি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানান। হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি দপ্তর সম্পাদক নীতি শোভা চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ।

উল্লেখ্য, যে, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান মামলার তদন্তের রির্পোট চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন। এই তদন্ত রির্পোট কল্পনা চাকমার বড় ভাই প্রত্যাখান করে আদালতে নারাজী পিটিশন দায়ের করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বারবার শুনানীর নামে শাসক গোষ্ঠী বিচারিক আদালতকে প্রভাবিত করে অপরাধীদেরকে আড়াল করার জন্য চেষ্টা করছে।

৮জুন, ২০১৭ইং রাঙামাটি পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনের উপর কালিন্দী কুমার চাকমার আদালতে যে নারাজী আবেদন করেছেন তার উপর শুনানী হবে। এই শুনানির মাধ্যমে অপহরণ কারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন আজকের মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে।

অপরদিকে কল্পনা চাকমা'র চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও নারী আত্মরক্ষা কমিটি। বুধবার(৭ জুন) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।

সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা বলেন, সারা বাংলাদেশে সরকার বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করায় কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী এবং তার সহযোগিদের এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার না করে বরং অপরাধীদের বাচানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কল্পনা চাকমা অপহরণ ২১বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও এই রাষ্ট্র তার বিচার করতে ব্যর্থ।

নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহব্বায়ক এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মা-বোনেরা কোথাও কেউ নিরাপদ নয়, তাই নারীদের প্রতিটি পাড়ায়, এলাকায় আত্মরক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।

ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তিপ্রভা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জারি থাকায়, কোন ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আশা করা যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তিনি ৮জুন কল্পনা চাকমা’র অপহরণ মামলার শুনানিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে চিহ্নিত অপরণকারী লেঃ ফেরদৌসের শাস্তির দাবি জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা বলেন, ৮জুন কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার অধিকতর শুনানি তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে শুনানীর নামে অপরাধীদের বাঁচাতে সরকার কালক্ষেপন ও তালবাহানা করছে। ১৯৯৬সালে ১১জুন দিবাগত রাতে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় কল্পনাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেসময় চট্টগ্রামস্থ ২৪পদাতিক ডিভিশন অপরাধীদের বাচানোর জন্য ৫০হাজার টাকা পুরস্কার এবং নানা নাটক সাজিয়েছিল। ৫এপ্রিল পিসিপি নেতা রমেল হত্যা করার পর লাশ পরিবার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়েছিল। রমেল হত্যার দায় এড়ানোর জন্য রমেলকে সন্ত্রাসী তকমা লাগিয়ে নানা নাটক সাজিয়েছিল। তিনি সরকারের ফ্যাসিষ্ট শাসন ও সেনা-সেটলারের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণকে প্রতিরোধ আন্দোলন করার আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া বক্তারা স¤প্রতি লংগদুতে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেপ্তারপর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে মিটিং-মিছিল করার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ থেকে শুরু হয়ে ফুরোমোন রাস্তামূখে এসে শেষ হয়। মিছিল ও সমাবেশে এলাকার ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী প্রায় তিন শতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান মামলার তদন্তের রির্পোট চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করেন। এই তদন্ত রির্পোট কল্পনা চাকমার বড় ভাই প্রত্যাখান করে আদালতে নারাজী পিটিশন দায়ের করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে বার বার শুনানীর নামে শাসক গোষ্ঠী বিচারিক আদালতকে প্রভাবিত করে অপরাধীদেরকে আড়াল করার জন্য চেষ্টা করছে।

আগামী ৮ জুন, ২০১৭ইং রাঙামাটি পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনের উপর কালিন্দী কুমার চাকমার আদালতে যে নারাজী আবেদন করেছেন তার উপর শুনানী হবে। এই শুনানির মাধ্যমে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন আজকের মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে।

এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত