
ঢাকা, ১২ জুন, এবিনিউজ : সিএ বা চাটার্ড একাউন্টেন্সি পড়াশোনায় একজন ছাত্রছাত্রীকে শুরুই করতে হয় প্র্যাকটিক্যাল কোর্স দিয়ে। এজন্য একজন স্টুডেন্টকে কোনো একটা সিএ ফার্মে ঢুকতে হয় এবং আইসিএবি এর মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হয়। ফার্মে প্রভিশনাল পিরিয়ড শেষ করার পরেই কেবল এই নিবন্ধিত ডিগ্রি ছাত্রছাত্রীর কাজে আসে। সিএ এর আর্টিকেলশিপ রেজিস্ট্রেশনের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়।
বাংলাদেশে সিএ পড়াশোনা: বাংলাদেশে সিএ পড়াশোনার মান এখন অনেক উন্নত। বাংলাদেশে বর্তমানে অনুমোদিত সিএ ফার্মের সংখ্যা প্রায় ২০০টি। আগ্রহী শিক্ষার্থীকে সিএ পড়তে হলে অবশ্যই আইসিএবি অনুমোদিত যেকোনো সিএ ফার্মের মাধ্যমে আইসিএবিতে নিবন্ধিত হতে হবে।
যোগ্যতা: আইসিএবি এর একটি নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। সে অনুযায়ী এসএসসি এবং এইচএসসি অথবা সমমানের উভয় পরীক্ষা মিলে যদি কোনো শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট এবং কমপক্ষে একটিতে এ প্লাস পায় তাহলে সে সিএ পড়তে পারবে। স্নাতক পাশের পরও (যে কেউ যে কোনো বিষয় থেকে) সিএ পড়তে পারবে। সে ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই স্নাতক পযন্ত সকল একাডেমিক পরীক্ষা মিলিয়ে কমপক্ষে ৭ পয়েন্ট থাকতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া: আগ্রহী শিক্ষার্থীকে প্রথমে আইসিএবি নিবন্ধিত ফার্মের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। তারপর পছন্দ অনুসারে সিএ ফার্মে বায়োডাটা (সিভি) ড্রপ করতে হবে। সিএ ফার্ম যদি শিক্ষার্থীকে তাদের যোগ্য মনে করে তাহলে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তার মেধা যাচাই করে তাকে আর্টিকেল স্টুডেন্ট হিসাবে মনোনয়ন করবে। তারপর ফার্মের নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ফার্মে যোগদানের পরবর্তী ২/৩ মাস তাকে প্রভিশন পিরিয়ড হিসাবে কাজ করতে হবে। তারপর তাকে ঐ ফার্মের মাধ্যমে আইসিএবি- তে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। নিবন্ধনের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ বছর তাকে ঐ সিএ ফার্মের অধীনে কাজ করতে হবে।
সিএ পড়াশোনার খরচ: সিএ ফার্মে কাজ করার সময়ে শুরুর দিকে কোনো খরচ লাগে না। কেবল আইসিএবি- তে নিবন্ধন করার সময়ে ৩০,০০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া আর কোনো বার্ষিক ফি দিতে হয় না। পরীক্ষার ফি হিসেবে প্রতি সেশনে নলেজ লেভেলে প্রতি বিষয়ের জন্য ১,৩০০ টাকা, অ্যাপ্লিকেশন লেভেলে প্রতি বিষয়ের জন্য ৩,০০০ টাকা এবং এগুলো ছাড়াও অ্যাডভান্স লেভেলে প্রতি বিষয়ের জন্য ৫,০০০ টাকা দিতে হয়। স্টাডি কেসের পরীক্ষার ফি ১০,০০০ টাকা। এছাড়া প্রতি লেভেলেই স্টুডেন্টদের এককালীন কোচিং করতে হয় আর এজন্যও তাদের ফি প্রদান করতে হয়। নলেজ লেভেলের জন্য কোচিং ফি নিবন্ধনের সাথেই যুক্ত হয়ে যায়। এছাড়াও অ্যাপ্লিকেশন লেভেলের কোচিং ফি ১৫,০০০ টাকা, অ্যাডভান্স লেভেল এক্সেপ্ট কেস স্টাডির জন্য ১৫,০০০ টাকা এবং অ্যাডভান্স স্টেজ কেস স্টাডির জন্য ২৫,০০০ টাকা দিতে হয়।
ছাত্রছাত্রীদের মাসিক ভাতা: সিএ পড়াশোনায় শুধু ছাত্রছাত্রীরাই খরচ করে তা না বরং ছাত্রছাত্রীরা ফার্মে কাজ করাকালীন মাসিক বেতনও পেয়ে থাকে। সিএ ফার্মগুলো তাদের ফার্ম পলিসির উপর নির্ধারণ করে ছাত্রছাত্রীদের মাসিক একটা সম্মানী দিয়ে থাকে। আইসিএবি নির্ধারিত এই সম্মানীর পরিমাণ খুব একটা কমও না। আইসিএবি ছাত্রছাত্রীদের এই সম্মানীর পরিমাণটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রী ৩,০০০ টাকা, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রী ৩,৫০০ টাকা, তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রী ৪,০০০ টাকা এবং চতুর্থ বর্ষের ছাত্রছাত্রী ৪,৫০০ টাকা করে প্রতি মাসে সম্মানী পেয়ে থাকে।
সিএ এবং এসিএ ডিগ্রি: যখন একজন ছাত্র/ছাত্রী সফলতার সাথে আর্টিকেলশিপ শেষ করেন তখন তিনি সিএ(সিসি) শিরোনামের ডিগ্রিটি লাভ করেন। সিএ(সিসি) মানে হলো সিএ কোর্স সম্পন্ন। থিউরিটিক্যাল কোনো পার্ট পাস না করেও একজন সিএ ডিগ্রিধারী উপার্জন করতে পারেন। প্র্যাকটিক্যাল এবং থিউরিটিক্যাল পার্ট পাস করার পরে একজন স্টুডেন্ট এসিএ ডিগ্রি লাভ করেন। সিএ কোর্স সফলভাবে সম্পন্নকারী একজন নিজেকে এসিএ বা অ্যাসোসিয়েট চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন এবং আইসিএবি এর সদস্যপদের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
চাকরির সুযোগ: তবে ফার্মে আর্টিকেলশিপ চলাকালীন সময়ে (৩ বছর) কোনো ছাত্র/ছাত্রী চাকরি করার পারমিশন পান না। একমাত্র সিএ(সিসি) কোর্স কমপ্লিট করার পরই একজন ছাত্র/ছাত্রী চাকরি করার সুযোগ পান।
বেতন: প্রার্থীর কোয়ালিটি এবং মার্কেট অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই একজন এসিএ এর স্যালারি নির্ধারিত হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন:
শবনম জাহান
ইন্টার্নাল অডিটর (রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন)
লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স লিমিটেড।
এবিএন/জসিম/ইমরান