![মুন্সীগঞ্জের বেদখল খালটি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/06/15/dsc05560_83433.jpg)
মুন্সীগঞ্জ, ১৫ জুন, এবিনিউজ : মুন্সীগঞ্জের পাঁচঘড়িয়াকান্দির খালটি পুন:উদ্ধারে সর্বাত্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা। খালটি ক্রমান্বয়ে দখল হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা দেখেও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যেন না দেখার ভান করছেন। এমন এক মুহুর্তে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানার সবুজে সাজাই মুন্সীগঞ্জের কার্যক্রম মানুষের মাঝে রেখা কেটেছে।
মুন্সীগঞ্জের পৌরসভার পাঁচঘড়িয়াকান্দি থেকে মুন্সীরহাট খালের দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মুন্সগঞ্জ জেলা শহরের দ্বিতীয় অন্যতম এই খালটি বহু কালের সাক্ষ্য বহন করে চলছে। এ খালের বিভিন্ন অংশে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। খাল দখল করে নির্মিত হচ্ছে বড় বড় অট্টালিকা ও বসতবাড়ি। বিশ্বের নামীদামী শহরে লেক বা খাল তৈরী করে আর আমাদের দেশে কোন গুনে খাল ভরাট করে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। সরকারের কর্ম-পরিকল্পনাও তাই ছিল।
জনসাধারণের খালের অপর দিকে চলাচলের জন্য ব্রিজ নির্মাণ করছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে। আর এখন ব্রিজ আছে ঠিকই খালের অস্তিত্ব দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কারো কোন কিছু করার বা বলার নাই। এলাকা বাসির অভিযোগ পৌরসভা থেকে আমরা সিটিকরর্পোরেশনে উন্নত নাগরিক হবো ঠিকই কিন্তু সুযোগ সুবিধা পাবো না।
পাঁচঘড়িয়াকান্তির এ প্রশস্ত খালে এক সময় চলত নৌকা। খালের পানি খুব স্বচ্ছ হওয়ায় মানুষ তা পানও করত। খালের মনোরম দৃশ্যে মুগ্ধ করতো মানুষকে। দিনভর মাছ ধরতো এখালে জেলেরা বা এলাকাবাসী। ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে এ খাল দিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে রাজনৈতিক অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি বানিয়ে যে যেভাবে পেরেছে, খালটি দখল করেছে। এতে শুকিয়ে গেছে খালের পানি। হারিয়ে গেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
পাঁচঘড়িয়াকান্দি খালটির অবস্থান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সরকারি হরগঙ্গা কলেজের পূর্ব দিক দিয়ে সোজা মুন্সীরহাট গিয়ে পৌছেছে। ঐতিহ্যবাহী অতি সম্প্রতি খাল এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে খালটির দখলের নানা চিত্র দেখা গেছে এবং অনেকের সাথে আলাপ করে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এলাকার জনসাধারণের দাবি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খালটিকে যেন রক্ষা করে সাধারন মানুষের জীবন যাপনের মান রক্ষা হয়। সুন্দর নগরায়ন ও উন্নত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেই জনগনের দাবী। এলাকার মানুষ আরোও বলছেন যদি এভাবে যার যার জমি ও বাড়ী লপ্ত নিয়ে খাল ভরাটের উৎসব চলে তবে অত্র এলাকাতে বস্তির চেয়েও খারাপ আকার ধারন করবে বলে সাধারন জনগনের ধারণা।
নয়াকান্দির সুনিল চন্দ্র মন্ডল বলেন, এক সময় এই নদী দিয়ে নৌকা চলাচল করে ধলেশ্বরী নদীতে বের হতো। মাছ ধরা হতো এই খালে। সেই সময় এ খাল থেকে যে মাছ ধরেছি সে মাছ এখন আর কোথাও পাওয়া যায় না। তিনি বলেন ২০ বছর যাবৎ খালটি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান খালটি পুন:খনন করেছিলেন। জমির দুই পাশের লোকজন ময়লা ফেলতে ফেলতে খালের গভীরতা নষ্ট করে ফেলেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মুন্সীগঞ্জ জেলার সদস্য ও সাবেক যুবলীগ নেতা সাইফুল বিন সামাদ শুভ্র বলেন, ইসলামপুরের মোড় থেকে মুন্সীরহাট পর্যন্ত এ খালটি বিস্তৃত ছিল। খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করতো। এই খাল দিয়ে প্রচুর পরিমানে মাছ ধরা হতো। বছরে ২ বার সেড করে মাছ ধরা হতো। তিনি আরো বলেন, খালটিতে অনেকগুলো কালভার্ট রয়েছে। খালইষ্ট অঞ্চলের খাল বন্ধ করে দেওয়ায় ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করবে। ২০ বছর যাবৎ খালটি বন্ধ করে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। জমির মালিকগণ চা বিক্রি করে মহা উৎসবও পালন করতো যেমন নৌকা বাইচ ছিলো বর্ষার প্রধান উৎসব। তিনি আরো বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ভূমিদস্যুরা খালটিকে দখল করে নিয়েছে। এই খালটি দিয়ে বড় বড় ধানী নৌকা চলাচল করতো। ধানের চাতাল ছিল নদীর পাড়ে। চাতাল থেকে ধান চাল নেয়ার জন্য বড় বড় ব্যবসায়ীরা আসতো এই নদী ঘেষা খালটি দিয়ে। খালটিতে ড্রেন করে ভরাট করে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনার কথা শুনেছি। তা কতদূর বাস্তবায়ন হবে জানি না। তবে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে খালটি পুন:উদ্ধার করে ড্রেন করে রাস্তা করে দিলেও ভালো হয়। এই সমাজে সকলেই বুঝতে শুরু করছে লোকালয় বসতি এলাকায় খাল, লেক ও নালা খুবই জরুরী জলাবদ্বতার হাত থেকে বাচার জন্য।
সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, মুন্সীরহাট বাজার থেকে ভরাট করে বিশাল অট্টালিকা তৈরী খালের মুখ বন্ধ করে পার্কিং (গাড়ী রাখার) ব্যবস্থা করে রেখেছে। কলেজের পিছনে বড় বড় অট্টালিকা তৈরী করে খালের দৃশ্যমান অবস্থাটুকুও নষ্ট করে ফেলেছে। খালটিতে এখনো ৬টি ব্রীজ-কালভার্ট দৃশ্যমান। সাঁকো রয়েছে প্রায় ১০-১২টি। এমন সুন্দর একটি খাল এভাবে নষ্ট হয়ে গেলে একসময় সমাজ ও পরিবেশেরে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিবেশের বিপর্যয় নেমে আসবে। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। এখনই সু-সময় মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর কে আধুনিক শহরে রুপান্তর করে একটি উপযোগী, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নগরায়নে সহায়তা করা।
সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সুরাইয়া জাহান কে অবগত করে বিষয়টি জানালে তিনি জানান, সরকারী খাল ভরাট করলে তা বে আইনি ভাবে করেছে। যাহারাই সরকারী খাল ভরা করছে তাদের দিয়েই ভরাট উচ্ছেদ করবেন বলে আস্বাস দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, সরকারী খাল কি করে ব্যক্তি স্বাথে ভরাট করবে তাও দেখবেন বলে জানান।
এ বিষয় মুন্সীগঞ্জ জেলাপ্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, যদি সরকারী খাল ভরাট করে থাকে তাদের দিয়েই খালের ভরাট উচ্ছেদ করবো। খাল পুর্ণ:উদ্ধার করার জন্য আমি সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। স্বনামধন্য এই খালটি উদ্ধার হোক এবং আগের রুপে ফিরে আসুক এমনটাই আশা করছেন মুন্সীগঞ্জবাসী।
এবিএন/আতিকুর রহমান টিপু/জসিম/ইমরান