![মানিকগঞ্জে নদীর পাড়ের ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/06/20/abnews-24_84278.jpg)
মানিকগঞ্জ, ২০ জুন, এবিনিউজ : সরকার বাঁধ দিচ্ছে নদী ভাঙ্গন রোধ করতে আর সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা নদী তীরবর্তী ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে। ফলে আশপাশের ফসলি জমিসহ একটি গ্রাম ভাঙ্গনের আশংকা করছে স্থানীয়রা। দেখার যেন কেউ নেই। প্রথমে এ চক্রটি জমির মালিকদের মাটি কেনার প্রস্তাব দেয়। তাদের কথা না শুনলে পাশের জমি ঘেষে গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে। এতে ফসলী জমি মালিকদের বিপদে পড়তে হয়। ফলে ভাঙ্গনের ভয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চক পালপাড়া মৌজার কালিগঙ্গা নদী তীরবর্তী ফসলি জমির মালিকেরা এমনি ভাবে জানাচ্ছিলেন তাদের অভিযোগের কথা। সিংগাইরের কালিগঙ্গা নদীর চক পালপাড়া এলাকার নদীর তীরে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা এ এলাকার নদীর তীরবতী ফসলি জমি শ্রেণী পরিবর্তন না করে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ফলে আশপাশের ফসলি জমিসহ চক পালপাড়া গ্রাম ভাঙ্গনের আশংকা করছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের কালীগঙ্গা নদীর ভাঙ্গন কবলিত ফতেপুর বার্তা গ্রামের দক্ষিনে চক পালপাড়া মৌজায় বেশ কয়েক বিঘা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে পার্শ্ববর্তী নদী তীরবর্তী ফসলী জমিতে চলছে ভেকু লাগিয়ে অবিরাম মাটি কাটা।
স্থানীদের অভিযোগ গত বছর চলতি মৌসুমে এ মাটি কাটা চক্রটি প্রায় ১ কিলোমিটার নদীতীরবর্তী ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে। ফলে অনেকের জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়। গত বছরের মত এবারো ওই চক্রটির অন্যতম চান্দহর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও চক পালপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের পুত্র সেলিম রেজার নেতৃত্বে চালাচ্ছে অবৈধ মাটি বিক্রির জমজমাট ব্যবসা। গত ১ মাস ধরে অব্যাহতভাবে মাটি কাটার ফলে আতংকিত হয়ে পড়ছেন পার্শ্ববর্তী ফসলি জমির মালিকেরা। জমির মালিকদের অভিযোগ, প্রথমে এ চক্রটি জমির মালিকদের মাটি কেনার প্রস্তাব দেয়। তাদের কথা না শুনলে পাশের জমি ঘেষে গভীর করে মাটি কেটে নেয়। ফলে ফসলী জমি মালিকদের বিপাকে পড়তে হয়। ফলে জমি ভাঙ্গনের ভয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। ইতিমধ্যে ওই এলাকার শুকুর মোল্লা, লেলিন মোল্লা, মোবারক ও বখতিয়ারের জমি থেকে মাটি কেটে সাবাড় করা হয়েছে। তাদের পাশের ফসলি জমির মালিক নূরুল ইসলাম, শাহাদাত, এরশাদ আলী, লিমন শেখ, আব্দুল হালিম ও হারুন মোল্লা আতংকে রয়েছে তাদের জমি ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ার। স্থানীয় জমির মালিক আব্দুল আলীম জানায়, নদী ভাঙ্গন রোধে বার্তা গ্রামে সরকার বাধ দিচ্ছেন আর এ এলাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মাটি কেটে বিক্রি করছে।
স্থানীয় হারুন মোল্লা জানায়, এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন মাটি কেটে বিক্রি করছে। আমার মত অনেককে চাপ দিচ্ছে জমির মাটি বিক্রির জন্য। মাটি কাটার কাজে সংশ্লিষ্ট মনির হোসেন মিন্টু জানায়, এ সব মাটি ট্রলার যোগে নদীপথে জাজিরা- সাপেরচর ইটভাটা শুলোতে বিক্রি করা হয়। নির্বিঘ্নে এ মাটির ব্যবসা চালিয়ে যেতে প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অর্থকরী দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় বলেও একটি সূত্র দাবী করেন। মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সেলিম রেজা জানায়, স্থানীয় লোকজন নিজেরাই তাদের জমি থেকে মাটি বিক্রি করছে। আমি এর সাথে জড়িত নই। সিংগাইরের চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল জানায়, বৈধভাবে স্থানীয় যুবলীগের সেলিম, হাসান, মিন্টু, নাসির ও রায়হান মাটির ব্যবসা করছে। তবে শ্রেনী পরিবর্তন ও নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের নিদের্শ প্রসঙ্গ তুললে এ বিষয়ে কথা বলতে এড়িয়ে যান তিনি। সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এলিনা আক্তার জানায়, এভাবে তো নদীর তীরবর্তী ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে পারবে না। অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অন্যায় ভাবে মাটি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. যুবায়ের জানায়, চক পালপাড়া মৌজার কালিগঙ্গা নদী তীরবর্তী ফসলি জমিতে আইন ভঙ্গ করে যদি মাটি বিক্রি করা হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/তোহা