
খাগড়াছড়ি, ২০ জুন, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওযা অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায়ও খোলা হয়েছে আরো একটি আশ্রয় কেন্দ্র। সেখানে ঝুঁকিতে বসবাসকারী বেশ কিছু পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্র্রে নিয়ে আসা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে খাবারসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়িতে টানাবর্ষণে জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। এ জেলায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। সম্ভাব্য পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণস্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা সরে যেতে রাজি হয়নি।
শুক্রবার খাগড়াছড়ি পৌর শহরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিশ শারমিন এর নেতৃত্বে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌর শহরের, কলাবাগান, নেন্সিবাজার, শালবন, হরিনাথ পাড়া এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৩০টি পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে মানিকছড়ি সদরে মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবার সকালে একটি আশ্রয় কেন্দ্র্র খোলা হয়েছে। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের তিনবেলা খাবার ও নগদ অর্থ সাহায্য প্রদানসহ আরো আশ্রয় কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে আশ্রিতরা বলছেন সরকার যেন তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়।
এদিকে আশ্রয় কেন্দ্র্র স্থায়ী সমাধান নয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম আরো জানান, লোকজনকে পাহাড় কাটা থেকে বিরত রাখতে প্রশাসন কাজ করছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিলাছড়া এলাকার পাহাড় কাটার ঘটনার কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলার পাহাড় ধসে খাগড়াছড়ির রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৩জন নিহত এবং আরো সাতজন আহত হন।
অপরদিকে স¤প্রতি সময়ে তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে শতাধিক প্রাণ ঝরে গেলেও খাগড়াছড়িতে দিনদুপুরে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় পাহাড় খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রোববার(১৮ জুন) সর্বশেষ পাহাড় ধসে খাগড়াছড়ির রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৩জন নিহত ও ২জন আহত হলেও সেদিন দুপুরে জেলা সদরের শিলাছড়া এলাকায় ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই বুলডোজার ব্যবহার করে পাহাড় কাটা হয়েছে। স্থানীয় একটি বৌদ্ধ বিহারে সড়ক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম থেকে চালকসহ বুলডোজারটি ভাড়া করে আনা হয়েছে পাহাড় কাটার জন্য। গত দশদিন ধরে পাহাড়ের উপর অংশ থেকে মাটি কাটার কারণে সড়কের পাশে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পাহাড় কাটার কাজ চলছে।
বুলডোজার চালক নজরুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটার জন্য চট্টগ্রাম থেকে বুলডোজারটি আনা হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে মাটি ধসের ঝুঁকি থাকা শর্তেও বিহার কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করতে হচ্ছে।
মাটি কাটার দায়িত্বে থাকা ভিক্ষুর কাছে পাহাড় কাটার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিহারের কাজ করতে কারো অনুমতি লাগে না।ঘনঘন পাহাড় ধসকে প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানানো হলেও কোন প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কদমতলী এলাকার বুলবুল আহমেদ জানান, শালবন হরিনাথ পাড়া গ্যাপ এলাকার পাহাড় খেকো মো: শহীদ মিয়া ও মো: জয়নাল মিয়ার নাম উল্লেখ করে এলাকাবাসী গত ১৪জুন জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রতিনিয়ত তারা পাহাড় কেটেই চলেছে। এতে করে এলাকার ১০-১২টি পরিবার পাহাড় ধসের ভয়ে শঙ্কিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতির(বেলা) নেটওয়ার্ক সদস্য মো: আবু দাউদ জানান, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের শালবন, কুমিল্লাটিলা, সাতভাইয়া পাড়া, কলাবাগান, সবুজবাগসহ অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ব্যাপক ভাবে পাহাড় উজাড় ও মাটি কাটার অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোন ভূমি চোখে দেখা যায় না। বর্ষা মৌসুমে লোক দেখানো মাইকিং ও অভিযান করা হয়। রৌদ্র উঠলে অভিযানও উধাও হয়ে যায়। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানই পারে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমাতে।
অন্যদিকে গত দু’সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় প্রশাসনের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থায় দু’টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিতদের মাঝে উপজেলা প্রশাসন চাউল ও নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি বিকেলে নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি কেন্দ্রের ৯টি পবিরাবের ৩০জনের মাঝে কাপড় বিতরণ করা হয়েছে।
টানা বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ভাঙ্গার আশঙ্কায় শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন মাঠে নেমেছে। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে দ্রুত সরে যেতে প্রশাসনের মাইকিংয়ের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় বিকেল নাগাদ দু’ছড়ি পাড়া ও মুসলিম পাড়ার দু’টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫টি পরিবার আশ্রয় নিলেও দু’ছড়ি পাড়ার আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে ইতোমধ্যে অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। ফলে সদরের মুসলিমপাড়া কেন্দ্রে আশ্রিত ৯টি পরিবারের ৩০জনের মাঝে শনিবার বিকেল ৩টায় সিন্দুকছড়ি জোনের উদ্যোগে কাপড় বিতরণ করা হয়। বিতরণকালে সিন্দুকছড়ি জোনের ক্যাপ্টেন মো: তৌহিদুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান মো: শফিকুর রহমান ফারুক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আবদুল জব্বার, ইউপি সদস্য মো: কামাল হোসেন ও ইউপি সচিব মো: মোশারফ হোসেন মজনুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আবদুল জব্বার জানান, আশ্রিতদের পবিরাব প্রতি দৈনিক ৫কেজি চাউল, নগদ টাকা ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/ইমরান