বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

মানিকগঞ্জে আলোর পাঠশালা বন্ধের উপক্রম

মানিকগঞ্জে আলোর পাঠশালা বন্ধের উপক্রম

মানিকগঞ্জ, ০৪ জুলাই, এবিনিউজ : নিজের বাবা দরিদ্রতার কারনে দিতে পারেনি পড়াশোনার খরচ। টাকার অভাবে ভাল কোন শিক্ষকের কাছেও প্রাইভেট পড়া হয়নি তার। তারপরও নিজের মনোবল নিয়ে মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাস্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ বর্ষে পড়াশুনা করছে সানী রহমান মিন্টু। অর্থের অভাবে যেন কারো পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায় সেই তাগিদ থেকেই সে গড়ে তুলেছেন এক ব্যতিক্রমী আলোর পাঠশালা। যেখানে পড়তে লাগে না কোন টাকা পয়সা। বরং সেখানে বিনামূল্যেই পাওয়া যায় খাতা কলমসহ শিক্ষা উপকরণ। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের শিক্ষিত যুবক সানী রহমান মিন্টু। মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত এ যুবক নিজে টিউশনি করে যা আয় করেন তা দিয়ে স্থানীয় দরিদ্র অসহায় দিনমজুরদের সন্তান, যারা অন্য সহপাঠীদের সাথে তাল মিলাতে না পেরে পড়াশুনায় পিছিয়ে পরছিল, সেই সমস্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে সে গড়ে তোলেন আলোর পাঠশালা।

৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিন্টু তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামে গড়ে তুলেছেন শিক্ষার আলো পাঠশালা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে গিলন্ড, জয়নগর ও শৈলকুড়া গ্রামের অস্বচ্ছল কৃষক, দিন মজুর, রিকশা চালকের সন্তানদের বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়ানো হয়। ৩ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় একটি এনজিওর কিস্তি আদায়ের ঘরেই চলছিল এ আলোর পাঠশালা। ২০১৪ সাল থেকে তিনি সম্পূর্ন বিনামূলে সকাল ৬ টা থেকে সাড়ে ৮ পর্যন্ত ৩য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি ছাত্র ছাত্রীদের ২ ব্যাচে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন। তার ব্যতিক্রমী এ পাঠশালা বতমানে ৬০ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। ছাত্র ছাত্রীরা ভালো ফলও পাচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু ঘরের মালিক হটাৎ কয়েক দিন ধরে ঘর খালি করার চাপ দিচ্ছে নিয়মিত। ফলে সত্যিকারের আলো ছাড়ানো বিদ্যালয়টি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

স্বামী পরিত্যক্ত রাশি বেগম জানায়, তার মেয়ে ৪থ শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। অর্থাভাবে মেয়েকে তিনি প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। তাই সে বিনামূল্যে মিন্টুর কাছে মেয়েকে পড়তে পাঠান আলোর পাঠশালায়। আরেক অভিভাবক পান্নু মিয়া জানায়, মিন্টু দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়ায় আমাদের মত গরীবদের দুঃখ বোঝে। আমাদের সন্তানরা বিনে পয়সায় তার কাছে পড়াশোনা করে।

আলোক পাঠশালায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পিতা মন্টু মিয়া জানায়, তার মেয়ে এখানে পড়াশোনা করে ভাল ফলাফল করেছে। পাঠশালার ঘরের মালিক মিন্টুকে আর পড়াতে দিবে না। তাহলে ৬০জন শিক্ষার্থী নিয়ে মিন্টু এখন কোথায় গিয়ে দাড়াবে। আলোর পাঠশালাটির শিক্ষক সানী রহমান মিন্টু জানায়, গিলন্ড এলাকায় একটি এনজিওর সমিতি ঘরে দরিদ্র ছেলে মেয়েদের বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ানো হয়। বর্তমানে এখানে ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৩য় শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এখানে পড়ানো হয়। শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা পাওয়া যায় সেখান থেকেই পাঠশালার দরিদ্র ছেলে মেয়েদের খাতা কলম কিনে দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত চলে তার পাঠশালা। ছেলে মেয়েদের পড়া প্রস্তুত করে পাঠানো হয় বিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাল্য বিবাহ, যৌতুক, মাদক বিরোধী ও পাখির আবাসন গড়ে তুলার জন্য উৎসাহ দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন ঘরের মালিক এখানে পড়াতে দিবে না। সে নিয়মিত চাপ দিচ্ছে ঘরটি ছেড়ে দেবার জন্য। এখন আমি এ ঘর ছেরে দিলে আলোর পাঠশালায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যাবে।

মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানায়, আলোর পাঠশালায় স্থানীয় ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়ানো হয়, তা একটি মহতি উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে ৭ শতাংশ জমি লিজ দেওয়া হয়েছে, নিচু হওয়ায় সেখানে মাটি ফেলা হয়েছে। ঘর তৈরি করতে আরোও মাটি ফেলতে হবে। আর মিন্টু যে ঘরে বর্তমানে পাঠদান করে আসছে সেখানে সে যেন আরোও কিছু দিন পাঠদান করাতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত