শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় সাংবাদিকের ওপর যুবলীগ নেতার হামলা
নিন্দার ঝড়, শাস্তি দাবি, হামলাকারী যুবলীগ নেতা বহিস্কার

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় সাংবাদিকের ওপর যুবলীগ নেতার হামলা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় সাংবাদিকের ওপর যুবলীগ নেতার হামলা

খাগড়াছড়ি, ১০ জুলাই, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙা উপজেলায় সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের ওপর হামলা করেছে উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি শওকত আকবর। রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় মাটিরাঙা উপজেলা বাজারে দৈনিক ভোরের কাগজের মাটিরাঙা উপজেলা প্রতিনিধি অন্তর মাহমুদের ওপর হামলা করা হয়। তবে কেন অন্তর মাহমুদের ওপর হামলা করা হয়েছে এবিষয়ে কেউ কিছু জানাতে পারেনি। হামলার পর থেকে অন্তর মাহমুদের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সে মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বর্তমানে জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মাটিরাঙা উপজেলা প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ভূইঁয়া অন্তর মাহমুদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামলার পর অন্তর মাহমুদ মাটিরাঙা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন পর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মাটিরাঙা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: সাহাদাত হোসেন টিটু সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের ওপর হামলার ঘটনা স্বীকার করে জানান, অভিযোগকৃত অনুযায়ী পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা: সব্যসাচী নাথ জানান, সাংবাদিক অন্তর মাহমুদ রোববার বিকেল ৩টায় আহতাবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র ভর্তি পর জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন। তাঁর বাম পাশের কোমরের নিচে আঘাতের চিহ্ন আছে।

যোগাযোগ করা হলে হামলা শিকার খাগড়াছড়ি সদর হাসাপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত অন্তর মাহমুদ বলেন, একেবারে অন্যায় ভাবে আমার উপর হামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, এটা শুধু আমার উপর হামলা নয়-পুরো সাংবাদিক সমাজের উপর হামলা।

এবিষয়ে কথা বলতে মাটিরাঙা উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি শওকত আকবরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় উপজেলা যুবলীগ থেকে শওকত আকবরকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন। জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন আরো জানান, সাংবাদিদের ওপর হামলা অত্যন্ত নিন্দাজনক। যুবলীগে কেউ সংগঠনের গণতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযোগ পেলে শওকত আকবরের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ, খাগড়াছড়ি রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি চাইথোয়াই মারমা, সম্পাদক মো: জুলহাজ উদ্দিন, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন(কেইউজে) এর সভাপতি নুরুল আজম, সাধারণ সম্পাদক কানন আচার্য, খাগড়াছড়ি প্রতিদিন ডটকম’র সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদারসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। জেলার মাটিরাঙ্গায় উপজেলায় সাংবাদিকের উপর চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে এর বিচার দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে পানছড়ি প্রেস ক্লাব। এ ঘটনায় পানছড়ি প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে এর বিচার দাবী করে বিবৃতি দিয়েছে পানছড়ি প্রেস ক্লাব এর সভাপতি নতুন ধন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান করিব সাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছ, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান অলিসহ পানছড়িতে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। অবিলম্বে দোষী মাটিরাঙা উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি শওকত আকবরের শাস্তি দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সাংবাদিক অন্তর মাহমুদ’র উপর চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। দৈনিক ভোরের কাগজের উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক নুর নবী(অন্তর মাহমুদ)‘কে প্রকাশ্যে মরাধর করে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি মো: শওকত আকবর। রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় মাটিরাঙ্গা বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে যুবলীগ নেতা শওকত আকবর কর্তৃক হামলার শিকার হয়ে আহত অবস্থায় প্রথমে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাংবাদিক অন্তর মাহমুদ।

ঘটনার সময় উপজেলার সকল সাংবাদিকরা জানতে পারলে আহত অন্তরকে নিয়ে সবাই সেনাবাহিনীর জোনে যান এবং অন্তর মাহমুদসহ তাদের সকল সাংবাদিকদের প্রাণের নিরাপত্তা চান। শওকত আকবরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, থানার দালালীসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় অন্তর মাহমুদকে নিয়ে সহকর্মীরা মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত ডাক্তার আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার হাতে, কোমরে, বেশ জখমের চিহ্ন ও ফুলে রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ৯জুলাই রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় অন্তর মাহমুদ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরলে দোকানের শাটার খুলতে গেলে পাশের কুলিং কর্ণারের সামনে রাখা কাঠের বোঝা থেকে লাটি নিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে শওকত আকবর। এসময় নানা অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং ৪০হাজার টাকা চাঁদা চায়। সাংবাদিকরা এ খবর জানতে পেরে আহত অন্তরকে মাহমুদকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার হাসপালে ভর্তি করেন। অন্তর মাহমুদের তার হাতে, কোমরে, বেশ জখমের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড় ওঠেছে। সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারী শওকত আকবরের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবী করেন খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব, খাগড়াছড়ি রিপোটার্স ইউনিটি(কেআরইউ), খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন(কেইউজে), দৈনিক অরন্য বার্তা, খাগড়াছড়ি প্রতিদিন ডটকম’র, পাহাড়ের আলো ডট কম’র, দৈনিক সবুজ পাতার দেশ পরিবারসহ খাগড়াছড়ি দক্ষিনাঞ্চল প্রেসক্লাব, রামগড় প্রেসক্লাব, উপজেলা প্রেসক্লাব গুইমারা, মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাব, পানছড়ি প্রেস ক্লাব’র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। অভিলম্বে এ হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হোক।

অপরদিকে জেলার মাটিরাঙ্গা সাংবাদিক অন্তর মাহমুদ’র উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রাথমিক সদস্য পদসহ মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে শওকত আকবরকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন তার ব্যাক্তিগত ফেইস বুকে স্টাটাস দিয়ে বহিস্কারের তথ্য নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যুবলীগে সন্ত্রাসীর কোন স্থান নেই। আমরা এই ঘটনার জন্য সাংবাদিক ভাইদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি।

খবর পেয়ে জেলার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং ইলেক্ট্রনিক্ম মিডিয়ার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিক অন্তর মাহমুদের চিকিৎসার খবর নেন এবং ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। জেলার মাটিরাঙায় যুবলীগ নেতা শওকত আকবরের হামলায় গুরুত্বর আহত সাংবাদিক অন্তর মাহমুদকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন খাগড়াছড়ির সাংবাদিক নেতারা। রোববার রাতে মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অন্তর মাহমুদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আনার পর সাংবাদিক নেতারা তাকে দেখতে যান। তাকে দেখতে হাসপাতালে যান খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, সহ-সভাপতি মো: জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন(কেইউজে) সভাপতি নুরুল আজম, সাধারণ সম্পাদক কানন আচার্য, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি প্রতিদিন ডটকম’র সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, তৃতীয় দৃষ্টি’র সম্পাদক কফিল মাহমুদসহ অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ। এসময় সাংবাদিক নেতারা আহত অন্তর মাহমুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত শওকত আকবরের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টাস্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

রোববার রাতেই খাগড়াছড়ি হাসপাতাল থেকে মামলা দায়ের করেন অন্তর মাহমুদ। মাটিরাঙা থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) সুনীল চন্দ্র সূত্রধর খাগড়াছড়ি হাসপাতালে এসে অন্তর মাহমুদ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে মামলা গ্রহণ করেন। এসময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা যুবলীগ সহ-সভাপতি শওকত আকবর পলাতক আছেন বলে জানায় পুলিশ।

উল্লেখ্য, সাংবাদিকদের নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করার প্রতিবাদের জেরে রোববার দুপুরে মাটিরাঙার হলুদ বাজার এলাকায় দৈনিক ভোরের কাগজ’র মাটিরাঙা প্রতিনিধি অন্তর মাহমুদকে কাঠের টুকরো দিয়ে আঘাত করে আহত করে শওকত আকবর। হামলার পর প্রথমে মাটিরাঙা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় অন্তর মাহমুদকে।

এবিএন/ চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত