শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • পদ্মার ভাঙ্গন থেকে মানিকগঞ্জে স্কুল রক্ষার্থে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চেষ্টা

পদ্মার ভাঙ্গন থেকে মানিকগঞ্জে স্কুল রক্ষার্থে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চেষ্টা

পদ্মার ভাঙ্গন থেকে মানিকগঞ্জে স্কুল রক্ষার্থে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চেষ্টা

মানিকগঞ্জ, ১৫ জুলাই, এবিনিউজ : চোখের সামনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে প্রিয় বিদ্যালয়টির মাঠ। যে কোন সময় স্কুলের ভবন গিলে খাবে নদী। তাই ছোট ছোট শিশুরা ও শিক্ষকরা মিলে ভাঙ্গন ঠেকাতে বাধ আর বালু ভর্তি বস্তা ফেলছে নদীতে স্কুল রক্ষার জন্য। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পদ্মার পারে অবস্থিত কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় শতবছরের পুরোনো স্কুলটির দুটি ভবন দাড়িয়ে আছে সর্বনাশা পদ্মার পারে। স্কুলটির খেলার মাঠ পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে পদ্মার স্রোতে। অবশিষ্ট আছে স্কুলের ভবন দুটি তাও যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে সর্বনাশা নদীর ভাঙ্গনে। তারপরও থেমে নেই স্কুলের পাঠদান। স্কুলের ছোট ছোট শিশুরা ও শিক্ষকরা মিলে ভাঙ্গন ঠেকাতে বাধ আর বালু ভর্তি বস্তা ফেলছে নদীতে। স্থানীয়রা জানায় স্কুল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে ছিল পদ্মা নদী কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই স্কুলটি নদী ভাঙ্গনের মুখে পরেছে। কর্তৃপক্ষ নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ বছর হুমকির মুখে পড়েছে স্কুলের ভবন দুটি।

কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ শামিমুর রহমান জানায়, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক, ৩ জন শিক্ষিকা সহ প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পুর্বে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি থাকলেও নদীর ভাঙ্গনের শিকার হওয়ায় বিদ্যালয় থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। স্কুলের ভিটে মাটি প্রায় পুরোটাই চলে গেছে, ভবন দুটিও যায় যায় অবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহায়তা না পেয়ে স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া আর্থিক ১০ হাজার টাকা সহায়তায় স্কুলের ভাঙ্গন রোধ করতে সামান্য বাধের চেষ্টা করছি। খুদে শিক্ষার্থীদের নিয়েই কোন রকমে বাঁশ আর বালুর বস্তা ফেলে নদী শাসনের কাজ করছি। ওদের দেখাদেখি স্কুলটি রক্ষায় কিছু প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরাও এগিয়ে এসেছে সাহায্যের জন্য। কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ আক্কাছুর রহমান জানায়, আমাদের এলাকার মান্দ্রাখোলা, কুষ্টিয়া, আরোয়া, জগৎদিয়া দক্ষিন সালজানা মিলে ৫টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা এই স্কুলে লেখা পড়া করে থাকে। শতবছরের পুরোনো এই স্কুলটি আমাদের চোখের সামনেই আজ স্কুলটি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। মনের শান্তনা পেতে তাই নিজেরা সামান্য বাধ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি নদী ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা করা হত তাহলে শত বছরের ঐতিয্যের স্কুলটি রক্ষা পেত। কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মো: হাতেম আলী জানায়, আমরা কয়েক দফা চেষ্টা করেছি স্কুলটিকে রক্ষা করার জন্য কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছি না। এক সময়ে আমরা এই স্কুলে পড়েছি আমার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করেছে এখন আমার নাতি নাতনিরা এই স্কুলে লেখা পড়া করছে। আমাদের পাঁচ গ্রামের মধ্যে এই একটি মাত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ভেঙ্গে গেলে আমাদের পাঁচ গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা আর সহায়তা পেলে স্কুলটি রক্ষা করা সম্ভব, তাই আমি জোর দাবি জানাই স্কুলটি রক্ষার্থে যেন সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।

শিবালয়ের আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান খান মাসুম জানায়, বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য এখনি যদি পরিকল্পিত বাধ নির্মাণ ও বালির বস্তা না করা হয়, তাহলে নিশ্চিত বিলীন হয়ে যাবে কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। শিক্ষার হাতে খড়ি থেকে বঞ্চিত হবে মান্দ্রাখোলা, কুষ্টিয়া, আরোয়া, জগৎদিয়া ও দক্ষিন সালজানাসহ কয়েটি গ্রামের ছেলে মেয়েরা। শিবালয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মাইনুল ইসলাম জানায়, কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একদম ভাঙ্গনের মুখে আছে। বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বালির বস্তা ফেলার জন্য লিখা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত স্কুলটি রক্ষার জন্য কোন সরকারী বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। স্কুলটি রক্ষার জন্য স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা নিজেরাই বালির বস্তা ভরে ভাঙ্গন স্থানে ফেলছে বলে তিনি জানায়।

এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত