![শালিখার আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩টি উদ্ভাবনী কার্যক্রমের বাস্তবায়ন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/07/28/arpara-primary-school-magur_90996.jpg)
মাগুরা, ২৮ জুলাই, এবিনিউজ : জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দানের জন্য ২৩টি উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে । এসব উদ্ভাবনীর মাধ্যমে সেখানে ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’ বা ভালো শিক্ষার প্রয়োগ চর্চার পাশাপাশি শিশুদের মেধা বিকাশ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রসারিত হচ্ছে।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীরা সকালে স্কুলে এসে ডিজিটাল আইডি কার্ড মেশিনে ছুঁয়ে দিয়ে হাজিরা দিচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের নিয়মিত উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ।
স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতেই অভিভাবকদের জন্য রয়েছে ‘আনন্দ পাঠাগার’। শিশুদের জন্য অপেক্ষাকালে মায়েরা শিশু বিষয়ক গল্পের বইসহ বিভিন্ন বই পড়েন এ পাঠাগারে। বাড়িতে গিয়ে মায়েরা সেগুলো সন্তানদের শোনান। যা শিশুদের মেধা বিকাশে ব্যাপকভাবে সহায়ক বলে উল্লেখ করলেন আনন্দ পাঠাগারে অপেক্ষারত স্কুলের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী লামিয়া আফরোজের মা শিউলী খাতুন ও একই শ্রেণীর জান্নাতুন নাঈমের মা নাজমা পারভিনসহ অনেক অভিভাবক। তারা জানান, শিশুদের জন্য এখানে যে উদ্ভাবনীগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা অসাধারণ। উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন উপকরণ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ায় স্কুলে শিক্ষার গুণগত মান নশ্চিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে অভিভাবকরা।
স্কুলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইয়াসমিন, তাসনিয়া জামান, তন্ময় চক্রবর্তী, দীপ্ত চক্রবর্তীসহ অনেকে বলেন, প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তারের উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে তাদের শিক্ষা দান করছেন। ডিজিটাল হাজিরা, মালিন্টমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাসসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করায় তারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।
আড়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার জানান, বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের’ অংশ হিসেবে তিনি স্কুলে ২৩টি উদ্ভাবনী বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ, শারীরিক, মানসিক মেধা বিকাশ লাভ করে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করছে বলে তার বিশ্বাস।উদ্ভাবনীগুলো হচ্ছে : স্কুল ডিজিটাল সার্ভিস পয়েন্ট স্থাপন, মাল্টি ডাইমেনশনাল এসএমএস সার্ভিস, অনলাইন ভর্তি, ডিজিটাল এটেনডেন্স ও ম্যাসেজিং সিস্টেম, ‘এই দিনে’ নামক তথ্য বোর্ড, সিসি ক্যামেরায় শ্রেণী পর্যবেক্ষণ, অনেস্টি সপ, মহানুভবতার দেয়াল, অভিভাবক আনন্দ পাঠাগার, গুণীজন গ্যালারী, আলোকিত আচরণ সংগ্রহশালা, শ্রেণী কক্ষের নামকরণ, শাখার নামকরণ, শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, মিড ডে মিল, শিক্ষকদের ড্রেস কোড, বিদ্যালয়ের নিজেস্ব ওয়েবসাইট, বিদ্যালয়ের ফেসবুকের পাতা, স্কুল ডিজিটাল সার্ভিস পয়েন্ট, দেশ প্রেমের আয়না, ডিজিটাল ঘন্টা, টিফিনের টাকা সঞ্চয় বক্স এবং পাখির আভয়আশ্রম।
তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলে যোগদানের পর ২০১৪ সালে স্থানীয় এলকাবাসী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি এ উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন কর্যক্রম বাস্তাবায়ন করেছেন। বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৫০২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে এসব উদ্ভাবনী ও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষা দান করার পাশপাশি শিশুদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। এ বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল ইনভেশনের উপর উদ্ভাবন চর্চায় খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন কর্তৃক ২০১৭ সালের বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক ক্রেস্ট পেয়েছে। তিনি যোগদানের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোর্শেদুল আলম জানান, আলোকিত মানুষ গঠনে শিশুদের জন্য নেয়া উদ্ভাবনীসহ বিভিন্ন কর্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
শালিখা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অরুণ চন্দ্র ঢালী জানান, আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উদ্ভাবনীসহ সকল কার্যক্রম মিলিয়ে বিদ্যালয়টি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। এখানে স্থানীয় এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, উপজেলা শিক্ষা অফিস, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নতি কমনা করছি।
জেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসার রুহুল আমীন বলেন, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩টি উদ্ভাবনীনহ যেসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা এক কথায় অসাধারণ। জেলার অন্য তিন উপজেলার মডেল স্কুলগুলোতে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি