![মানিকগঞ্জে ম্যানেজিং কমিটি সভাপতির ভয়ে শিক্ষকদের স্কুল যাওয়া বন্ধ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/08/01/manikganj-map2@abnews_91798.jpg)
মানিকগঞ্জ, ০১ আগস্ট, এবিনিউজ : স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) সভাপতির হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।সোমবার নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষকের সবাই স্কুলে না গিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে হাজিরা দেয়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে তারা হুমকির অভিযোগ এবং নিরাপত্তা চেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অাবেদন করেছে।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এবং অভিযোগের সুত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ারপর থেকেই সেলিম মিয়া শিক্ষকদের সাথে চরম দুর্ব্যহার শুরু করেন। কথায় কথায় ধমক দেন। গত ২৬ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির সভায় সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিনকে ধমক দিয়ে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন। বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক চেয়ার ছেড়ে দিলে সেলিম মিয়া সেই চেয়ারে বসে সভা শুরু করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এজেন্ডা অনুযায়ী পরিচালনা না করে সভাপতি হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষককে এই স্কুল থেকে বদলি হয়ে যেতে বলেন। এ জন্য তিনি সাত দিনের সময় দেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন জানায়, গত অর্থ বছরে রাজস্ব বিভাগ থেকে স্কুল মেরামত বাবদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। ব্যাক্তিগত এবং স্কুল ফান্ডের স্লিপ মানি থেকে তিনি স্কুল মেরামত করে বিল ভাউচার দেয়ার পর গত ২০ জুন চেক পান। সভাপতি জোর করে চেকে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তলোন করেন। কিন্তু সেই টাকা এ পর্যন্ত ফেরৎ দেন নি। টাকা চাইলে সভাপতি বলেন তাকে কোন টাকা দেয়া হবে না। প্রধান শিক্ষক আরও জানান, রাতে স্কুলের ক্লাস রুমে বসে সভাপাতি মাদক সেবন করেন বলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন বলে সভাপতি অভিযোগ তুলেছেন। এই মিথ্যা সন্দেহে সভাপতি তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে।
নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা জানায়, সভাপতি স্কুল পিয়নকে দিয়ে তাদের হাজিরা খাতা চেক করানোর সন্মানহানীকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভাপতি কোন ধরণের সন্মান না দেখিয়ে তাদের সাথে চরম অভদ্র আচরণ করে। সন্মান নিয়ে এই স্কুলে চাকুরী করা সম্ভব নয়।
সভাপতি সেলিম মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন ভুয়া হিসাব দেখিয়ে টাকা পয়সা আত্বসাৎ করে। হিসাব চাওয়ার কারনেই তিনি মিথ্যা অভিযোগ করেছে। প্রধান শিক্ষক সহ আরও কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান। প্রাইভেট না পড়লে সেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়। স্কুল মেরামতের টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন তার কাছে টাকা জমা রয়েছে। হিসাব করে টাকা ফেরৎ দেয়া হবে। স্কুলে বসে মাদকের আড্ডার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেক তৌহিদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়া বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভয়ে শিক্ষকরা স্কুলে যেতে পারছে না। তাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তারা হাজিরা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসি শিখা জানায়, নতুনবস্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে র্দুব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ আমরা পেয়ে তা খতিয়ে দেখছি। প্রমান পেলে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে এডহক কমিটি গঠন করা হবে। অার ওই স্কুলের শিক্ষকরা সবাই নারী। তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
এবিএন/মো: সোহেল রানা খান/জসিম/নির্ঝর