![মানিকগঞ্জে কমতে শুরু করছে যমুনার পানি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/08/19/untitled-1_95488.jpg)
মানিকগঞ্জ, ১৯ আগস্ট, এবিনিউজ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট পয়েন্টে আজ শনিবার থেকে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার শিবালয়, হরিরামপুর, ঘিওর, সাটুরিয়া, দৌলতপুরসহ ৫টি উপজেলার অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে রয়েছে।
যমুনা নদীতে ৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এবারের বন্যায় যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে পানি বেড়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপরে।মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টের দায়িত্বরত গেজ রিডার মো. ফারুক হোসেন জানায়, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত যমুনার আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি। তবে গত কয়েক দিনে যমুনা ও পদ্মা নদীতে হুট করে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সেই পানি প্রবাহিত হয়ে জেলার শাখা নদ-নদী ও খাল বিল দিয়ে। যার প্রভাবে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, শিবালয়, ঘিওর, দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলার প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলার বানভাসি মানুষের বাড়ি-ঘরে হাটু ও কোমড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহ বন্দি হয়ে পড়েছে তারা। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে জেলার ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দারা। এসব উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ খাবার ও জ্বালানী সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এসব এলাকার লোকজন নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ভাসমানভাবে বসবাস করার সুযোগ পেলেও বিপাকে পড়েছেন তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে। বন্যার পানি প্রবেশ করেছে হরিররামপুর উপজেলা পরিষদ চত্তরে। পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে জেলার সাথে হরিরামপুর উপজেলার।
এ দিকে কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও যমুনা নদীর বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনা নদীর তীরবর্তী দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নের নদীর পাড়ের চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়, চরকাটারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ,মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক, চরকাটারী বাজার সহ শত শত মানুষের বাড়ি ঘর আবাদি জমি জমা নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। দৌলতপুরের চরকাটারী, বাচামারা, বাঘুটিয়া, জিয়নপুর, খলসী, চকমিরপুর এই ৬ টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার বানভাসি মানুষের বাড়ি ঘরে হাটু ও কোমড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহ বন্দি হয়ে রয়েছে।চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষ লাকড়ির অভাবে রান্না বান্না করতে না পেরে অর্ধাহারে অনাহারে ঘরে ও বাড়ির উঠানে মাঁচা পেতে মানুষ, গরু -ছাগল এক সাথে বসবাস করছে।
চরকাটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মন্ডল জানায়, চরকাটারী ইউনিয়নে শত শত বাড়ি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে । কয়েক হাজার বানভাসি মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ দিকে যমুনা নদীর ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদ,ভূমি অফিস,চরকাটারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যান কেন্দ্র, চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়, ২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ১২ শতাধিক বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। সরকারী ভাবে ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে । বরাদ্দকৃত ত্রান চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হক জানায়, এ পর্যন্ত চলতি বর্ষার পানি আসার পর ১ হাজার ৯শ ৮৫টি পরিবারে বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে চরকাটারী,বাচামারা,বাঘুটিয়া, জিয়নপুর, খলসী, চকমিরপুর এই ৬ টি ইউনিয়নের জন্য সরকারী ভাবে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা জানায়, চরকাটারী ইউনয়নে ভাঙ্গন রোধে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগে বালি ভর্তি যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধ কল্পে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা মুলক কাজ করা হয়েছিল পানির তোরে তা নদী গর্ভে চলে গেছে । বন্যায় প্লাবিত ৬ টি ইউনিয়নে সরকারী ভাবে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই চাল সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করছে। বন্যায় পানিবন্দি এসব মানুষের বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
এবিএন/মো: সোহেল রানা খান/জসিম/এআর