ঝালকাঠি, ২৩ আগস্ট, এবিনিউজ : অবশেষে ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগলপাশা গ্রামে ভূমিলোভীদের নেইম র্যাক গ্রুপের গ্রাস থেকে মন্দিরের ৮২ শতাংশ জমি উদ্ধার করে সীমানা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় ইউপি চেলারম্যান মুক্তিযোদ্ধ মোবারেক হোসেন মল্লিকের কঠোর ভূমিকা ও জেলা পুজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবীর মুখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আরডিসি শাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত থেকে মন্দিরের নামে রেকর্ডিও ওই সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপনসহ মন্দিরের সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে এই জমির সীমানা নির্ধারণ করে সেবাইতদের কাছে বুজিয়ে দেয়ার সময় জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ও জিপি অ্যাডভোকেট তপন কুমার রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র দে তরণী, ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ হালদার, অসীত বরণ সাহা ও সদর থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ‘নেইম র্যাক এ্যাগ্রো ফার্ম লিঃ’ নামে সম্পত্তিলোভী চক্রটি উক্ত জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় কোন ধরনের নোটিশ না দিয়ে বা কাগজপত্র প্রদর্শন না করে একতরফাভাবে এ সীমানা নির্ধারণ করেছে বলে কথিত মালিক ও পরিচালক মহসিন বাকলাই অভিযোগ করেছে।
বাসন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন মল্লিক ও জেলা-উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ ছিল, আগলপাশা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮২ শতাংশ দেবোত্তর সম্পত্তিতে শতাধিক বছর ধরে কালী ও শীতলা মাতার মন্দির ছিল। নানা চরাই-উতরাই পেরিয়ে গত ৩/৪ বছর ধরে মন্দিরের সেবায়েতরা নিয়মিন পূজা অর্চনা করে আসছিল। কিন্তু আকস্মিক ভাবে জনৈক নব্যঅর্থশালী তৌহিদুল দুয়ারী ‘নেইম র্যাক এ্যাগ্রো ফার্ম লিঃ’ নামে একটি প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুলায় ও তার বোন জামাই চিহ্নিত স্বন্ত্রাসী মহসিন বাকলাইয়ের নেতৃত্বে উক্ত প্রকল্পের সংলগ্ন রেকর্ডিয় দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে নেয়। এমন কি গত ১১ মে রাতে সে শহর থেকে ভাড়াটে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বুলডোজার দিয়ে মন্দিরটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলে স্থানীয় সংখ্যালগু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
অপর দিকে আগলপাশা গ্রামে সর্বসাধারনের চলাচলের জন্য কয়েক যুগ পূর্ব থেকে সরকারের রেকর্ডিয় ২৪ শতাংশ সম্পত্তি উক্ত প্রকল্পের মধ্যে দখল করে নেয়ায় অভিযোগ করেন ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম বেলায়েত হোসেনের পুত্র সোহেল মাহমুদ ও তার পরিবার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার পিতার আমলে ঐ এলাকায় ক্রয়কৃত কিছু জমিজমা রয়েছে। যেখানে যাতায়াতের জন্য আমরা ও আশেপাশের গ্রামবাসী উক্ত রেকর্ডিয় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতাম। কিন্তু সম্প্রতি ‘নেইম র্যাক এ্যাগ্রো ফার্ম লিঃ’ নামে একটি প্রকল্পের মালিক তৈাহিদুল দুয়ারীর স্বন্ত্রাসীরা সরকারের রেকর্ডিয় সেই রাস্তাটি সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে ও গায়ের জোড়ে দখল করে নেয়ায় আমরা সহ গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা চরম দূর্ভোগের মধ্যে পরেন।
এ অবস্থায় ভূমিলোভীদের দখল থেকে উক্ত রাস্তাটি উদ্ধার করে সর্বসাধারনের চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবী জানায়। এমন কি এ ঘটনার পরে ওই মন্দিরের সেবাইত ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ মন্দিরের বেদি ও অবকাঠামো ভাঙচুরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মানবন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তদন্ত করে মঙ্গলবার এই জমি সেবাইতদের কাছে বুঝিয়ে দেন।
অপরদিকে নেইমর্যাক এগ্রো ফার্ম লি: এর প্রজেক্ট ম্যানেজার দাবীদার মহসিন বাকলাই ও তাদের আইনজীবী বনি আমীন বাকলাই জানায়, এখানে ৮২ শতাংশ জমির মধ্যে ৪৬ শতাংশ জমির ক্রয় সূত্রে মালিক আমরা নেইমর্যাক এগ্রো ফার্ম লি:। এ জমির মালিকানা বিরোধ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। জেলা ম্যাজিস্টেট আদালতে ওই জমিতে স্থিতিবস্থা জারী করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে তাদের নোটিশ না করে প্রশাসনের লোকজন এখানে এসে জমির সীমানা নির্ধারণ করেছে যেটা সম্পূর্ন বেআইনি। আমার এর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিব।
এ ব্যাপারে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোঃ শাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কখনো প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলিনি। আমাকে ডিসি স্যার দায়িত্ব দিয়েছে আমি তা পালন করেছি।
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/নির্ঝর