ঝালকাঠি, ১৩ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ ও মন্ত্রনালয় থেকে নীতিমালা প্রনয়ন করলেও ঝালকাঠির মানপাশা শেরেবাংলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কজন শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দোখিয়ে তার সরকারি ভাবে নির্মিত বিদ্যালয় ভবনে বসেই এ অবৈধ বাণিজ্য চালালেও এদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। দীর্ঘদিন প্রকাশ্য দিনের বেলায় বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত অর্থের বিনিময়ে এ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় বলছে তারা এ বিষয়ে কিছুই জাননে না। ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ৮ টায় সরেজমিনে বিদ্যালয় দুটিতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
মানপাশা শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ সরেজমিনে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে গিয়ে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মামুনুর রশিদ শিশু শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে ব্যস্ত দেখতে পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়েই শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে শিক্ষক মামুন জানতে চাইলেন সমস্যা কি ? ছবি তুলছেন কেন ? এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় সোমবার আপনার বিদ্যালয়ে মডেল টেষ্ট পরীক্ষা শুরু। কিন্তু আপনি বিদ্যালয়ের সময়ের আগেই এসে এখানে প্রাইভেট পরাচ্ছেন কেন। উত্তরে তিনি জানান, আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অনুমতি সাপেক্ষে ও অভিভাবকদের অনুরোধে প্রাইভেট পড়াচ্ছি। টাকার বিনিময়ে এভাবে প্রাইভেট পড়ানো কি শিক্ষা নীতিমালায় ও প্রজ্ঞাপনে বৈধ কিনা জানতে চাইলেও তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। এসময় তিনি আরো জানালেন কয়েক মাস ধরে আমি প্রাইভেট-কোচিং পড়াচ্ছি।
এসময় তার সামনেই শিশু শিক্ষার্থীরা জানায় আমরা মামুন স্যারকে জনপ্রতি মাসে ৪শ টাকা করে দিয়ে প্রাইভেট-কোচিংয়ে পরছি। এ কথা বলার সাথে সাথে শিক্ষক মামুনুর রশিদ নীচে নেমে অপেক্ষমান শিশু শিক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে বাড়িতে যাবার জন্য নির্দেশ দিয়ে নিজেও বিদ্যালয় থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যান। বেশ কিছু সময়ের পর তিনি মটর সাইকেলে পুনরায় বিদ্যালয়ে আসলে প্রধান শিক্ষক চন্দনা হাওলাদারও বিদ্যালয়ে আসেন। এসময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তার ও বিদ্যালয় সভাপতির অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় তলায় প্রাইভেট বানিজ্য করার কথা সঠিক কিনা। এর উত্তরে প্রধান শিক্ষক জানান, একথা সম্পূর্ন মিথ্যা।
তাহলে এ অবৈধ বানিজ্যের বিষয়ে আপনি জেলা প্রশাসক বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেননি কেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি এ বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মজনু মোল্লাকে জানিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক মামুন প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে এসব কারনে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি অনুদানের বিষয় নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করিয়ে বিদ্যালয়ের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন করিয়েছে। যে বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পরিচালনা পরিষদের জানা আছে। বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষের চাবি শিক্ষক মামুন কিভাবে নিয়ে বিদ্যালয়ে এ প্রাইভেট পড়াচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন পিয়নের কাছ থেকে আসল চাবি নিয়ে নকল চাবি কাটিয়ে নিয়েছে।
শিক্ষক মামুনের বিষয়ে বিদ্যালয় সভাপতি মনিরুজ্জামান সরদার মুঠোফোনে জানান, শিক্ষক মামুন স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে এসব অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলেও সে কারো তোয়াক্কা করেনা। তাই আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই বেঁচে যাই। মামুন সাহেবের অবৈধ প্রাইভেট বানিজ্য একবার বন্ধ করে দিয়েছি। তাকে নিষেধ করা সত্বেও সে আবার শুরু করেছে। সভাপতি আরো জানান, এটিও মজনু মোল্লা শিক্ষক মামুনকে নিয়ে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার প্রভাব, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে সে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করাছে।
এ প্রসঙ্গে এটিও মজনু মোল্লা বলেন, এভাবে প্রাইভেট বানিজ্য হলে আমাকে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বলা উচিত ছিল। তাছাড়া প্রাইভেট পড়ানো বৈধ নয় মন্ত্রনালয়ের এই চিঠি প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনুদানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য না নেয়ার বিষয়ে এটিও জানান আমি প্রধান শিক্ষকের লিখিত বক্তব্য চাইলেও সে দেয়নি। আর শিক্ষক মামুনের মটরসাইকেলে স্কুল পরিদর্শনে যাবার বিষয়ে এটিও বলেন এটা ১ বছর ৪ মাস আগের কথা। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ে এরকম প্রাইভেট বানিজ্যের কথা আমার জানা নেই। এটা সম্পূর্ণ নিষেধই নয় এ বিষয়ে কোন রিপোর্ট পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয় হবে।
একই দিন সকাল সোয়া ৯ টায় মানপাশা শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে দেখা যায়, দুজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। একজন এ বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে অন্যজন শ্রেনী কক্ষ থেকে দ্রুত চলে যান। এসময় তার টেবিলের উপরে রাখা মোবাইল, একটি নোট বুকসহ চেয়ারের উপরে রাখ একটি ব্যাগ নিতেও তিনি ভুলে যান। তখন তার মোবাইল বাজলেও তিনি না থকায় কেহই রিসিভ করেনি। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা জানান, স্যার আপনাদের কথা শুনে দ্রুত ক্লাশ রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা জানায় আমাদের জনপ্রতি ৪শ ৫০ থেকে ৫শ টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়। এখানে আমরা ৭ম, ৮ম ও দশম শ্রেনীর ইংরেজি, গণিত বিজ্ঞান পড়ি। ক্লাশে ভাল করে না পড়ানোর কারনেই আমরা প্রাইভেট পরছি।
এভাবে বছরের পর বছর প্রাইভেট-কোচিং বানিজ্যের বিষয়ে শিক্ষকদের বক্তব্য না পেলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর জানান, বিদ্যালয়ে তাদের প্রাইভেট পড়ানোর কোন টাকা আমার স্কুল ফান্ডে জমা রাখার প্রশ্নই উঠেনা। কারন এটা তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়। এভাবে প্রাইভেট পড়া একবার বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। এ প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ গোপাল দে বলেন ভাই আমি ঝালকাঠি যোগদান করেছি মাত্র ১ মাস ১০ দিন। এভাবে স্কুলের ভিতরে টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানো হলে আমি অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/তোহা