![ঝালকাঠীতে ওসি’র বিরুদ্ধে অপহরণ ও গুমকারীদের সাথে আতাঁতের অভিযোগ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/09/26/abnews-24.bbbbb_101919.jpg)
ঝালকাঠি, ২৬ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : ঝালকাঠির রাজাপুরে অপহরন ও গুমের শিকার স্বামীকে ফিরে পেতে থানায় জিডি করতে গিয়ে অসহায় স্ত্রীকে রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ মুনির উল গিয়াস ও নানা রকম হয়রানী ও প্রতারণা করা হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগে করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে শহরের সদর রোড এলাকার একটি সামাজিক সংগঠনের সভা কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ ব্যক্তির বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে মারিয়া (১৩) ও তাসিয়া (৩), তার মামা পরিবহন ব্যবসায়ী মোঃ বাহাউদ্দিন সহ তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
কলেজ ছাত্র নির্যাতন, খুনের আসামী ছেড়ে দেয়া, মাদক ষ্পট-অটোরিক্সা থেকে মাসোহারা আদায়, তক্ষক পাচার, বহু মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়কারী রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনির উল গিয়াস এ পর্যন্ত অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে একাধিক ঘটনায় পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভৎষনার শিকার হলেও ওসি মুনিরের ‘একান্ত আপন’ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু মন্ত্রী-এমপিসহ উর্ধতন মহলে দৌড়ঝাপ করে তাকে বহাল তবিয়তে রাখছেন বলেও উপজেলা জুড়ে প্রচারনা রয়েছে। তবে বর্তমানে ওসি মুনিরের কর্মকান্ডে ঝালকাঠি পুলিশের অর্জিত সুনামে কালিমালিপ্ত হলেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে চাপা ক্ষোভের জন্ম হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ভূক্তভূগী পরিবার জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্ত্রী মোসাম্মদ নারগিস বেগম জানান, রাজাপুরের বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী মো. খায়রুল মীর গত ৮ সেপ্টেম্বর অপহরন ও গুমের শিকার হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে সম্ভব সব জায়গায় খোজার পর ১১ সেপ্টেম্বর রাজাপুর থানায় একটি জিডি করতে গেলে ডিউটি অফিসার ‘ভালো ভাবে খোঁজার পর’ জিডি করতে পরামর্শ দিলে সে বাড়ীতে চলে আসেন। এরপর বেশ কয়েকবার রাজাপুর থানা পুলিশের কাছে ছুটে গেলেও গুমের বিষয়ে ডায়েরী বা সহযোগীতা না করে নানা ভাবে হয়রানী ও তালবাহানা করেন। এ অবস্থায় ঘটনার ৭ দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর ফের জিডি করতে থানায় গেলে অফিসার ইনচার্জ শেখ মুনির উল গিয়াস ‘তার স্বামী মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী’ মর্মে উল্লেখ করে ডায়রী করতে বললে সে থানা থেকে ফিরে আসেন। এরপরেও তার সন্ধান না পেয়ে নিরুপায় হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর থানায় গিয়ে কাকুতি-মিনতী করলে ডিউটি অফিসার মোবাইলে ওসি মুনীরের সাথে কথা বলেন এবং বকশির মাধ্যমে একখানা দরখাস্ত লিখিয়ে অশিক্ষিত নারগিসের স্বাক্ষর নিয়ে জিডি করে একটি কপি তাকে দেন। তবে বাড়ি ফিরে জিডির কপি সবাই দেখলে ‘খায়রুল মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী এবং সে মাদক আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে’ লেখা দেখে বিস্মিত হয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, খায়রুল গুমের ঘটনায় একাধিকবার মামলা করতে রাজাপুর থানয় গেলেও ওসি মুনির তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিলে ২১ সেপ্টেম্বর ছোটভাই মীর সিরাজ বাদী হয়ে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে ৫জন নামধারীসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। আদালত রাজাপুর থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসাবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিলে ২৪ সেপ্টেম্বর জেহাদ (২৮), রিয়াদ তালুকদার (৩৮), কাজল (২৭), পলি বেগম (২৫) ও রুস্তুম (৪৫) এর বিরুদ্ধে এজাহার রেকর্ড করেন। তবে সে দিনই রাজাপুর থানার এসআই ফিরোজসহ কয়েক পুলিশ সদস্য খায়রুলের বাড়ীতে গিয়ে মাদক স¤্রাট রিয়াদ তালুকদারের বিরুদ্ধে থানায় যেনো কোন অভিযোগ না করি সে ব্যাপারে সাশিয়ে আসেন।
ভূক্তভুগীদের লিখিত বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জানান, রাজাপুর থানার বিতর্কিত ওসি শেখ মুনির উল গিয়াস উপজেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী লালন-পালন ও মাদক ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রধান আশ্রয়দাতা বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজী, হত্যা-ডাকাতীসহ চিহৃত মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নির্ভিগ্নে মাদক বানিজ্য পরিচালনা করলেও মাসিক মাসোহারা ও মোটাঅংকের উৎকোচ দিয়ে ওসি শেখ মুনিরকে তাদের কেনা গোলামে পরিনত করেছে। যে কারনে হতভাগ্য গৃহবধূ নারগিস বেগম ও তার প্রতিবন্ধীসহ দুই শিশু কন্যা মীর খায়রুলকে অপহরন ও গুমের ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তার ও তদন্ত পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচারের দাবী জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে রাজাপুর থানার ওসি মুনীর উল গীয়াস সাংবাদিকদের জানায়, যে দিন ওই নারীর জিডি রেকর্ড গেছে সেদিন আমি থানায় ছিলাম না, ডিউটি অফিসার জিডিটি রেকর্ড করেছে। আর তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়রানী ও থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা দাবী করে তিনি বলেন, যাকে অপহরন ও গুমের কথা বলা হচ্ছে সেই মীর খায়রুল একাধিক মাদক মামলার আসামী । সর্বশেষ এঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর তার ভাই আদালতে মামলা করলে আদালতের নির্দেশে রাজাপুর থানায় এজাহার রেকর্ড ও সেই মামলার তিন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওসি শেখ মুনির জানান।
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/তোহা