
সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) থেকে হ্যাপি রহমান, এবিনিউজ :প্রতি বছরের মত এবারো অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (বিএমএস)-এর বার্ষিক সায়েন্টিফিক মিটিং, সাধারণ সভা ও নৈশভোজ। এটি ছিল সপ্তম বারের মত আয়োজন।
আনুমানিক প্রায় ৪৫০ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক বসবাস করছেন নিউ সাউথ ওয়েলসে। বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস সংগঠন (বিএমএস)-বাংলাদেশি চিকিৎসকদের একটি অলাভজনক সংগঠন। এটি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। এর নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ৩০০ জনেরও বেশি। সংগঠনটি বহুমাত্রিক সমাজসেবামূলক ও জনহিতকর নানা কর্মকান্ডে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার সিডনির নভোটেল হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ আয়োজন। সারা দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। কর্মসূচি শুরু হয় সকাল ৮.৩০ মিনিটে। শুরুতেই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফারুক রিফাত তাঁর পেশাগত কাজ ও অভিজ্ঞতার আলোকে পর্যালোচনা করেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় এএমসি ক্লিনিক্যাল মক টেস্ট (অগঈ পষরহরপধষ সড়পশ বীধস). এ পর্ব পরিচালনা করেন উক্ত সংগঠনের শিক্ষা সম্পাদক চিকিৎসক নাজমুন নাহার ও চিকিৎসক জান্নাতুন নাইম। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা এই কোর্সগুলোর পর্যবেক্ষক ও পরীক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অধ্যাপক রেজা আলী এবং শায়লা ইসলাম। আরও ছিলেন নাসিম জেসি চৌধুরী, রেবেকা পারভেজ, ইশরাত জাহান, সুলতানা সৈয়দা, আয়েশা আবেদিন ও পুষ্পেন মণ্ডল।
মধ্যাহ্নভোজের পর অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক সায়েন্টিফিক মিটিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মিরজাহান মাজু। এ পর্বেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন চিকিৎসক নাজমুন নাহার, চিকিৎসক রেজা আলী, চিকিৎসক শায়লা ইসলাম ও চিকিৎসক জান্নাতুন নাইম।
সায়েন্টিফিক মিটিং-এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ডঃ স্টিফেন টো (উৎ.ঝঃবঢ়যবহ ঞবড়), ডঃ ডেভাং পারিখ (উৎ. উবাধহম চধৎরশয), ওয়েন্ডি পিট্রাস(ডবহফু চরবঃৎধং) এবং ডঃ শাকিল আহমেদ। বৈকালীন চা বিরতি দিয়ে আবারো শুরু হয় আলোচনা সভা। এ পর্বে অংশগ্রহণ করেন টিমোথি বোয়েন (ঞরসড়ঃযু ইড়বিহ), ডঃ সুলতানা সায়েদা, বদিউজ্জামান এবং ডঃ নাসিম জেসি চৌধুরী।সায়েন্টিফিক মিটিং শেষে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি মতিউর রহমান।
চিকিৎসক আয়াজ চৌধুরীকে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অব অস্ট্রেলিয়া-র সভাপতি ঘোষণা করা হয়। এসময় উপস্থিত সকলেই তাঁকে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান।
নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয় সবাইকে। নৈশভোজের পর শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। সভাপতি মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ পর্বে সাধারণ সম্পাদক মিরজাহান মাজু প্রধান সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেন। বক্তব্য প্রদান করেন উক্ত সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ চিকিৎসক জেসমিন শফিক। সংগঠনটির বার্ষিক আয়-ব্যয় ও তহবিল সংক্রান্ত যাবতীয় লেনদেনের হিসাব বিবরনী তুলে ধরেন জেসমিন শফিক। এসময় উপস্থিত সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তারা।
সাধারণ সম্পাদক মিরজাহান মাজু তাঁর বক্তব্যে জানান- মৌলিক জ্ঞান ও দক্ষতা সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে অন্যান্য কমিউনিটির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এ ধরনের সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। নজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ে সহায়ক হয় এ ধরনের সাধারণ সভা-সেমিনার।
তিনি আরও জানান-এ সংগঠনটির উদ্যোগে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে বার্ষিক নৈশভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাধারণ সভা, সায়েন্টিফিক মিটিং, ঈদ পুনর্মিলনী ও বার্ষিক বনভোজন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সংগঠনটির সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন একজন বাংলাদেশী ছাত্র কিবরিয়া। তাঁর মরদেহ দেশে পাঠানো ও অন্যান্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সংগঠনটি। পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে দেশে বন্যা দূর্গতদের সাহায্যার্থে আর্থিক অনুদান দিয়েছে বিএমএস এবং রোহিঙ্গাদেরও আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
সভাপতি মতিউর রহমান সমাপনি বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন- যোগ্যতার মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিয়ত অগ্রণী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে তাঁদের অবদান বিশ্বমানের চেয়ে পিছিয়ে আছে এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
উল্লেখ্য, কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তারা হলেন; সভাপতি ডা. মতিউর রহমান, সহসভাপতি ডা. রশিদ আহমেদ, ডা. শফিকুর রহমান ও ডা. সাব্বির সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক ডা. মিরজাহান মাজু, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মেহেদি ফারহান ও ডা. কাজী শাহরিয়ার রানা, কোষাধ্যক্ষ ডা. জেসমিন শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শায়লা ইসলাম, শিক্ষা সম্পাদক ডা. নাজমুন নাহার, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. শায়েক খান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. ফখরুল ইসলাম। কার্যকরী সদস্যরা হলেন; ডা. রফিকুর রহমান (বাবুল), ডা. আয়াজ চৌধুরী, ডা. শরীফ উদ দৌলা, ডা. জেসি চৌধুরী, ডা. শফিকুল বার চৌধুরী, ডা. আমিন মুতাসিম, ডা. মামুন চৌধুরী, ডা. রেজা আলী, ডা. জান্নাত নাইম, ডা. জাকির পারভেজ, ডা. মইনুল ইসলাম, ডা. খালেদুর রহমান, ডা. শামসুল আলম ও ডা. আইরিন কবির, আয়শা আবেদিন, হোসেন আহমেদ প্রমুখ।
এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর