![ঝালকাঠির নলছিটিতে লাশ চুরির আতংক](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/10/06/konkal_abnews_103639.jpg)
ঝালকাঠি, ০৬ অক্টোবর, এবিনিউজ : ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানের কবর থেকে একের পর এক লাশ চুরির অভিযোগ উঠেছে। অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে কবর থেকে লাশ তুলে এক ধরনের ওষুধ (মেডিসিন) দিয়ে মাংস ছাড়িয়ে (হাড়গুলো) কঙ্কালগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে যে সব পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুবরন করেছে তাদের কবর ও লাশের নিরাপত্ত নিয়ে শোকাক্রান্ত স্বজনরা অজানা আতঙ্কিত ও উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। নলছিটি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে গত দুসম্পাহে কমপক্ষে ১০টি লাশ চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেক শোকাহত স্বজনরা মৃতের দু:খ ভূলে কবর ও লাশের নিরাপত্ত রক্ষায় রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছে বলে জানাগেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নলছিটির কুশঙ্গল ইউনিয়নের জামুড়া, মাদারঘোনা ও সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে একটি সংঘবদ্ধচক্র স¤প্রতি এভাবে অনেকেরই লাশ চুরি করে নিয়ে গেছে। এরমধ্যে জামুড়া গ্রামের মুজাহার হাওলাদার, মাদারঘোনা গ্রামের বেলাতুন্নেছা বেগম ও লিয়াকত আলী খানের মৃত্যু হলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার দুই/তিন মাসের মধ্যে রাতের আধাঁরে কবর খুঁড়ে লাশ তুলে দুর্বৃত্তরা (হাড়গুলো) কঙ্কালগুলো লুটে নিয়েছে। প্রত্যন্ত এ গ্রামাঞ্চলে অন্য আরো দুটি কবর খোঁড়ার সময় শব্দ পেয়ে স্বজনরা বের হয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন গ্রামবাসী জানায়, কয়েকটি কবরের কাছে গিয়ে তারা দেখতে পায় কবর থেকে লাশগুলো তুলে এক ধরনের ওষুধ (মেডিসিন) দিয়ে মৃতদেহের মাংসগুলো ছাড়িয়ে (হাড়গুলো) কঙ্কালগুলো লুটে নেয়া হয়েছে। কী কারণে কঙ্কাল চুরি হচ্ছে, বা কারা এধরনের কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে ষ্পষ্ট করে তা কেউই বলতে পারছেনা। এঅবস্থায় এসব গ্রামে সদ্য মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছে। এহেন মানবতা বিবর্জিত ও ন্যাক্কার জনক কাজে জড়িত দুর্বৃত্তচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবি জানিয়েছে মৃতের ক্ষুব্ধ স্বজনরা।
খোজ নিলে জামুড়া গ্রমের মাসুম হাওলাদার জানায়, তার পিতা মুজাহার হাওলাদার ছয় মাস আগে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর ২২ দিন পর এক সকালে কবরস্থানে গিয়ে কবরের মাটি খোঁড়া ও লাশের মাংস পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে মেডিসিন দিয়ে মাংস ছাড়িয়ে (হাড়গুলো) কঙ্কালটি লুটে নিয়ে গেছে দৃর্বুত্তরা। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানানা এবং যারা এহেন পশুবৃত্তিক কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান।
একই গ্রামের নাসির উদ্দিন হাওলাদার জানায়, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার পিতা চান মিয়া হাওলাদারের মৃত্যু হলে তাঁকে বাড়ির পাশেই দাফন করা হয়। প্রতিবেশী কয়েকজনের লাশ চুরি হওয়ায় তারা রাতে ঘুমাতে না পেরে রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছিন। তিনি চাকরি সুবাদে ঢাকায় বসবাস করায় এভাবে আর কতদিন রাত জেগে কবর পাহারা দেব তাই নিয়ে চিন্তিত আছেন। আবার বাড়ি থেকে চলে গেলে লাশ চুরি হয়ে যেতে পারে তাই নিয়ে পরিবারের সবাই আতঙ্কে আছেন।
এ ব্যাপারে কুশঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ‘ কিছুদিন আগ থেকে আমাদের ইউনিয়নে এমন তিন-চারটি ঘটনা বলে শুনেছি। আমার মনে হয়, সংঘবদ্ধ কোন কুচক্রিরা লাশগুলো চুরি করছে। তাই ইউপি মেম্বারদের এ বিষয়টি নজরদারি করার জন্য বলেছি। কোন একজনকে ধরতে পারলেই এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। ’
এ ব্যাপারে নলছিটি থানার নবাগত ওসি তদন্ত আঃ হালিম তালুকদার জানান, ‘এ ধরনের কোন ঘটনার লিখিত বা মৌখিক কোন ধরনের অভিযোগই থানা পুলিশ পায়নি। তাছাড়া কুশঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও তাদের জানানো হয়নি। তবে এধরনের জঘন্ন্য ঘটনার অভিযোগ পেতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা খুবই অমানবিক। ভূক্তভুগীদের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/এমসি