![বঙ্গবন্ধুকে লেখা ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীর চিঠি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/10/09/letter-to-bangabandhu1_104134.jpg)
বরিশাল, ০৯ অক্টোবর, এবিনিউজ : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে মনের সব আকুতি প্রকাশ করে চিঠি লিখেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ফারিহা ফালাক। সে বরিশাল কালেক্টরেট স্কুলে পড়াশোনা করে। কেন এই চিঠি লেখা, সে ব্যাখ্যা পরে দেওয়া হচ্ছে, তার আগে চিঠিটা পড়ে নেওয়া যাক-
শ্রদ্ধেয় বঙ্গবন্ধু,
আমার সালাম নেবেন। আমি ফারিহা। বরিশাল কালেক্টরেট স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। আশা করি ভালো আছেন। আমিও আমার বন্ধুরা আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। কারণ আপনার জন্যই আমাদের এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনার ৭ই মার্চের ভাষণ আমি টিভিতে দেখেছি। এ রকম ভাষণ আমি কাউকে দিতে দেখিনি। আমি শুনেছি আপনার সেই ভাষণ শুনেই বাঙালিরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আপনি খুব সাহসী ও জনদরদী ছিলেন। আমিও বড় হয়ে আপনার মতো হতে চাই।
আপনি দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু আমরা শিশুরা এখনো স্বধীন হতে পারিনি। বৃষ্টি নামলে আমি ভিজতে চাই। কিন্তু মা বলে ‘জ্বর হবে! ভেতরে এসো।’ বিকেলে আমি বন্ধুদের সাথে খেলতে চাই। কিন্তু মা বলে, 'ব্যাগ নিয়ে রেডি হও, কোচিংয়ে যাবে, কোনো খেলা নেই।' সন্ধ্যার পর আমি খেলতে বসি। কিন্তু মা বলে ‘কাল টেস্ট পরীক্ষা পড়তে বসো। ফুল মার্ক পেতে হবে’।
শুক্রবার বন্ধের দিনেও রেহাই নেই। পড়াশুনা, গানের ক্লাস, কবিতার ক্লাস- আপনিই বলুন আমি খেলবো কখন? টিভিতে কার্টুন দেখতে পারিনা। রিমোট মায়ের কন্ট্রোলে। মা তো সারাদিন সিরিয়াল দেখে। টিভি দেখবো কখন? আমি বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে ফুসকা খেতে চাইলে বাবা মা বারণ করে। বলে- ‘বাইরের খাবার খেতে হয় না’। কিন্তু মা যখন আন্টিদের সাথে ফুচকা খায় তখন কেউ বারণ করে না।
ক্লাসে আমি আমার বন্ধুকে একটা পেনসিল দিয়ে দিলেও বকা শুনতে হয়। আমি বইতে পড়েছি আপনি ছোটবেলায় আপনার ছাতা, গায়ের চাদর বন্ধুদের দিয়ে দিতেন। আপনার বাবা মা কি বকা দিতো? আপনার মতো বড় হতে হলে আমাকে কি একটু স্বাধীনতা দিতে হবে না?
আমি জানি আপনার মেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও শিশুদের খুব ভালোবাসেন। তাই স্কুলে আমাদের শাসন করতে বারণ করেছেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বকবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরা কি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন? সব সময় কি তারা শাসনের মধ্যে ছিলেন? আমরা শিশুরা আমাদের স্বাধীনতা চাই, খেলতে চাই, বৃষ্টিতে ভিজতে চাই, ছঁবি আকতে চাই, ইচ্ছে মতো কবিতা লিখতে চাই। আপনি আমাদের জন্য কিছু করুন।
আমি প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি আপনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। আর ৭ই মার্চের মতো ডাক দিচ্ছেন- ‘এবারের সংগ্রাম শিশুদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম শিশুদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। আপনি আমাদের জাতির জনক। এই সবুজ শ্যামল সুন্দর রাষ্ট্রের স্রষ্ট্রা। বঙ্গবন্ধু, আমি কি আমার চিঠির উত্তর পাবো? নাকি ছোট বলে আপনিও আমাকে অবহেলা করবেন? প্রিয় বঙ্গবন্ধু, আমার এই ছোট্ট স্বপ্ন কি সত্যি হবে? আমি কি স্বাধীন হবো? ভালোবাসা আর অনেক অনেক সালাম রইলো আপনার প্রতি।
ইতি
আপনার আদরের
ফারিহা ফালাক
###
বরিশালের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীর সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাল-সবুজ সোসাইটি। সংগঠনটি সম্প্রতি দুই জেলায় তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে বরিশাল ও বরগুনা জেলার প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তার এর মধ্য থেকে ফারিহা ফালাকের চিঠিটা সেরা নির্বাচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সেরা ২০টি চিঠি রচয়িতা শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে গত ১৯ আগস্ট।
প্রতিযোগিতার জন্য দুই জেলার ২২টি স্কুলে বক্স রেখে আসা হয়। চিঠি জমা দেওয়ার জন্য ১০ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। তারপর চিঠিগুলো একত্র করে মূল্যায়ন করা হয়। চিঠি বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করেন বরিশালের কবি ও লেখক হেনরী স্বপন।
এরপর আয়োজক সংগঠনের কিশোর-তরুণ সদস্যরা সেরা ২০ চিঠি নিয়ে একটি প্রকাশনা বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কারো অর্থনৈতিক সহযোগিতা না পেয়ে তারা প্রকাশনা বের করার হাল ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত তারা চিঠিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই লক্ষ্যে সংগঠনটির সভাপতি ও বরিশাল বিএম কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী তাহ্সীন উদ্দীন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া চিঠিটি রবিবার রাতে তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর চিঠিটা নজরে আসে।
এ বিষয়ে তাহ্সীন উদ্দীন বলেন, আমাদের ভীষণ ইচ্ছে ছিল, শিশু-কিশোরদের কোমল হাতে জাতির পিতার কাছে মনের কথা লেখা সেরা ২০টি চিঠি নিয়ে প্রকাশনা বের করার। আর এ জন্য স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়েও কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে হাল ছাড়তে হচ্ছে। কারণ লাল-সবুজ সোসাইটির সবাই শিক্ষার্থী। প্রকাশনা বের করার জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা যোগান দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই।
ফারিহা ফালাকের স্কুল শিক্ষক মা আয়শা ফারজানা আজ সোমবার সকালে বলেন, ওর মনের ভেতর আমাদের উপর যে লুকানো অভিমান ছিল, সেটা আমরা এতদিন বুঝতেই পারতাম না। চিঠিটি দেখার পরে আমরা তা জানতে পারি। এরপর থেকে আমরা ওর উপর পড়ালেখার বাড়তি প্রেসার কমিয়ে দিয়েছি।
ফারিহা ছবি আঁকতে, বই পড়তে, গল্প লিখতে ও গান গাইতে ভীষণ পছন্দ করে। সে বরিশাল বেতারে শিশু শিল্পী হিসেবে নিয়মিত গান গায় বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ূন কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা নিঃসন্দেহ একটি ভালো উদ্যোগ। এর মধ্যদিয়ে শিশু-কিশোর ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে যাচ্ছে। শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি