
ঢাকা, ১২ অক্টোবর, এবিনিউজ : অভিবাসন নীতি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বসবাস ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শতাধিক অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে ১১ বাংলাদেশিও।
ওই ১১ বাংলাদেশিসহ শতাধিক অভিবাসী নিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের বিশেষ বিমান স্থানীয় সময় বুধবার ভোররাতে দক্ষিণ এশিয়ার উদ্দেশে উড়াল দেয়।
বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন সেলিম আহমেদ, মোজাম্মেল হক, করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, বাবলু শরিফ, মোহাম্মদ বাদল রনি, মোহাম্মদ ফরিদুল মওলা, মনিরুল ইসলাম, নাসরিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আম্বিয়া ও খায়রুল আম্বিয়া।
সম্প্রতি ব্যাপক ধরপাকড়ে অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে দুই নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। যে কোনো সময় তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দ্রুত পাসপোর্ট দিয়ে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে সহযোগিতা করেছে। এতে ভুক্তভোগী অভিবাসী ও তাদের পরিবার আইনের সাহায্য নেয়ার আগেই বিতাড়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের আটক করার পর মার্কিন অভিবাসন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেট তাদের দেশের নাগরিক কি না, তা তদন্ত করে সময় নিলে ওই ব্যক্তির পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
মানবাধিকার সংগঠক, সাউথ এশিয়ান এডুকেশন স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং অর্গানাইজেশনের নির্বাহী মাজেদা উদ্দিন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে ২ নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে আছেন। তারা এখন অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে আছেন। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, নিউজার্সি ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে তাদের আনডকুমেন্টেড হিসেবে আটক করে ইমিগ্রেশন সার্ভিস। আটক ব্যক্তিদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আটক হওয়া ব্যক্তির পরিবারের বরাত দিয়ে মাজেদা উদ্দিন বলেন, আটক ব্যক্তিদের হাতে ইংরেজিতে ‘লো আর হাই’ লেখা বিভিন্ন রঙের ব্যান্ড লাগানো আছে। গত ৪ মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস ১৪ জনকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই দূতাবাস ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিচ্ছে এবং দূতাবাস আটক ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত করে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাদের মুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট না দিলে তারা আপাতত রক্ষা পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে পারতেন। পাকিস্তান দূতাবাস দেশটির আটক ব্যক্তিদের ট্রাভেলস ডকুমেন্ট না দেওয়ায় তারা বন্ড দিয়ে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকতে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
মাজেদা উদ্দিন বলেন, গত দেড় মাস আগে চারজন ও গত তিন-চার মাসে মোট ১৪ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হয়েছে।
বিতাড়নের শিকার হওয়া বাংলাদেশিরা অনেকেই দুই-তিন দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। এখানে বিয়ে করেছেন, সন্তান হয়েছে। বিতাড়নের শিকার বাবলু শরিফের পরিবার গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এভাবে যেন বিতাড়ন না করা হয়।
এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নতুন ৭০ দফা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা চূড়ান্তভাবে সমাধান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোয়াইট হাউস গত ৯ সেপ্টেম্বর ৭০-দফা পরিকল্পনা কংগ্রেসে উপস্থাপন করে। এ পরিকল্পনায় সীমান্তদেয়াল নির্মাণের কথাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান আইনে তিনটি পরিবর্তন রয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ আইনের শক্ত প্রয়োগ এবং বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ