শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ঝালকাঠির বিষখালি-সুগন্ধায় থামছেনা মা ইলিশ হত্যা
প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অসাধু জেলেদের সিন্ডিকেট

ঝালকাঠির বিষখালি-সুগন্ধায় থামছেনা মা ইলিশ হত্যা

ঝালকাঠির বিষখালি-সুগন্ধায় থামছেনা মা ইলিশ হত্যা

ঝালকাঠি, ১৫ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : ঝালকাঠি জেলাধীন বিষখালি-সুগন্ধা নদীর বিস্তৃন এলাকা জুড়ে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না মা ইলিশ হত্যা। ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি ও অসাধু জেলেদের নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে অবৈধ ভাবে মা ইলিশ শিকার করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলার প্রধান এ দুটি নদীর বেশ কিছু পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শক্তিশালি এ সিন্ডিকেট মা ইলিশ শিকারের মহোৎসবে মেতে উঠেছে।

সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সবধরনের মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও সেই ঘোষনা কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ থাকলেও কার্যকর হচ্ছেনা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারী, অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও সিন্ডিকেটের অপকৌশলের কাছে তা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা ভংগকারী এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট রীতিমত পুলিশ ও প্রশাসনকে পাহারা দিয়ে তাদের মৎস্য নিধন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখছে বলে সহসা দমন করা যাচ্ছেনা বলে জানগেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এলাকাবাসী জানায়, সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট যেমন ঝালকাঠি জেলার গাবখান সুগন্ধা নদীর মোড়, জেলা শ্মাসান ঘাট বরাবর পয়েন্টে, নলছিটি উপজেলার ষাইটপাকিয়া ফেরী ঘাট এলাকা থেকে সুগন্ধা নদী হয়ে দপদপিয়া ব্রীজ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩/৪টি পয়েন্টে আর বিষখালি নদীর ভবানীপুর, নাচনমহল ও মোল্লারহাট এলাকার একাধিক স্থানে চলছে রাজাপুরের বড়ইয়া, পালট, মোল্লাপাড়ার, মঠবাড়ি ও কাঠালিয়ার কয়েকটি চক্র এ অবৈধ ইলিশ শিকারের সাথে জাড়িত রয়েছে। এ চক্রটি বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে দুই নদীতে নিরাপদে মৎস্য শিকার করে যাচ্ছে। এরমধ্যে বড়ইয়া ইউনিয়নের পালট গ্রামের চিহ্নিত দালাল আলমগীর চৌকিদার, পালট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী বাদশা, মঠবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দেলোয়ার, বাদুরতলা কাইচচোরার এলাকার সুজন ও নলছিটির রানাপাশা ইউনিয়নের মন্টু মেম্বর প্রতিবছর এ অবৈধ ইলিশ শিকারের সাথে জড়িত থাকে জানাগেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানাগেছে, জেলা-উপজেলা থেকে সুগন্ধা-বিশখালী নদীর দূরত্ব স্থান বেধে ৫ থেকে ১০ কিঃমিঃ বা তারও বেশী হওয়ায় ইলিশ শিকারের সংবাদ পেয়ে অভিযান শুরু করতে না করতেই অসাধু জেলেরা সটকে পরছে। আবার প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ফিরে গেলেই দিনরাত চলছে মা ইলিশসহ অন্যান্য মৎস্য শিকার। এমন কি প্রশাসনের তৎপরতা থেকে বাঁচতে তারা কিছু সোর্স কে মোবাইল নিয়ে নদী ও স্থল পথের নজরদারীর দায়িত্ব দিয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে। এসব সোর্সেরা প্রশাসনের কোন গাড়ী বা বোর্ড দেখলেই নদী থাকা জেলেদের মুঠোফোনের মাধ্যমে আগেভাগে খবর পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে প্রশাসনের কর্তারা পৌছার আগেই তারা নিরাপদ স্থানে গা-ডাকা দিচ্ছে আর তারা চলে যেতে না যেতেই আবার মা ইলিশ শিকারে মেতে উঠছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অকিবহল অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে নদনদীতে ইলিশসহ মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ঘোষনার পূর্বেই শক্তিশালী এ সিন্ডিকেট নলছিটি-রাজাপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জদের সাথে গোপন দফারফা করেছে। দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা অনেক অসাধু কর্মকর্তা ও থানার ওসির সাথে প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেট নগদ অর্থ, শিকারকৃত মাছের ভাগ ও বড় মাছ পেলে তাদের বাসায় পাঠিয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আর সিন্ডিকেটের নির্ধারিত সদস্যরা জেলেদের নৌকাপ্রতি নগদ টাকা চাঁদা তুলে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিয়েছে। সেই সুযোগে একদল অসাধু জেলে উৎসব করে ‘মা’ ইলিশ শিকার ও বিক্রি করছে সিন্ডিকেটে সদস্যদের পকেট ভারী করছে। আর মা ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারী কার্যক্রম ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের কয়েক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রকৃত জেলেরা জানায়, ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে ব্যাপক প্রচার ও জেলেদের পুর্নবাসন কার্যক্রমের সাথে আরো কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। এরমধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর জনপ্রতিনিধি, সচেতন ও গণ্যমান্যদের নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন, নদীর তীরবর্তী কয়েক কিঃমিঃ পরপর প্রতিরোধ কমিটি-পুলিশের সমান্বয় ক্যাম্প স্থাপন এবং শক্তিশালী পরিবহণ ব্যবস্থা করতে পারলে এ মা ইলিশসহ মৎষ্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মতব্যক্ত করেন।

এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত