![লক্ষ্মীপুরে মাদকের ফাঁদে শিক্ষার্থীরাও](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/10/16/abnews-24.bbb_105535.jpg)
লক্ষ্মীপুর, ১৬ অক্টোবর, এবিনিউজ : লক্ষ্মীপুর শহরসহ পুরো জেলায় এখন মাদকের ছড়াছড়ি। জমজমাট হয়ে উঠেছে ব্যবসা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। নেশায় জড়িয়ে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরাও। উঠতি বয়সীরা নেশাগ্রস্ত হয়ে বিপদগামী হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িয়েছে মাদক ব্যবসায়। মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আর প্রশাসন বলছেন, মাদকের বিরুদ্ধে থেকে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের গ্রেফতার চালানো হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকা থেকে ৭৬ লিটার সোলাইমদসহ মাদক ব্যবসায়ী পারভেজের বসতঘরে থেকে পারভেজ (৪০), খোকন পাটোয়ারী (৪৫), আবদুস সহিদ (৫৫) ও মো. মফিজকে (৪৫) গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ১৬ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ এলাকা ৮২ পিস ইয়াবাসহ মো. আরিফ হোসেন (২২) নামে এক যুবককে আটক করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এছাড়া চন্দ্রগঞ্জে ১১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কুমিল্লার কোতোয়ালি শাহপুর এলাকার জুয়েল ও আবুলকে আটক করা হয়। রায়পুরে অভিযান চালিয়ে মদ তৈরির ৫টি কারখানায় মাটি খুঁড়ে ১০ হাজার লিটার চোলাই মদসহ দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। ২৫ মে ভোরে রামগঞ্জ শেখপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেনকে (৩৫) আটক করে পুলিশ।
মাদকসংক্রান্ত ঘটনায় জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ৩৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৮, মার্চ মাসে ৫৬, এপ্রিল মাসে ৪৪, মে মাসে ৬২, জুন মাসে ৫২, জুলাইসহ আগস্ট মাসে ৮৮টিসহ মাদকদ্রব্য আইনে মোট জেলায় ৩৭৯টি মামলা হয় মাদকসহ বিক্রেতা ও সেবীদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীসহ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র। এ চক্রের ব্যবসায়ী সদস্যরা মাদক চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও টেকনাফ থেকে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডেল এনে বিক্রি করেছে রায়পুর, রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর পৌর শহরসহ চন্দ্রগঞ্জ মান্দারী ও জকসিন বাজার এলাকায়। নারীদেরও এই কাজে ব্যবহার করা হয়। মাদক সেবনে কিছু শিক্ষকও জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নুরুল্যাপুর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফ উদ্দিনের ইয়াবা সেবনের ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয় বলে জানা গেছে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নামেন। প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও মাদকমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। অবশ্য এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফ উদ্দিন জানান, তিনি বিদ্যালয়ে মাদক সেবন করেননি। তাকে সরাতে একটি মহল এ কাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি বৈঠকে মাদক প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দিন দিন যেন মাদক বেড়েই চলছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা দেওয়ান বলেন, সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকসেবীদের প্রতিহত করা না হলে এই মরণ নেশায় এলাকার যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের সামনের খোলা অংশে স্থাপিত শহীদ মিনার এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী বাধা দিতে গিয়ে এর আগে বেশ কয়েকবার হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
কয়েকজন মাদক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এ অঞ্চলে ঢুকছে। এখন ভারত থেকে ইয়াবা ও হেরোইন বেশি আসছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চাকমা জানান, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্মীপুর পুলিশ প্রশাসন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এবিএন/অ. আ.আবীর আকাশ/জসিম/তোহা