![চিতলমারীতে নায্যমূল্য না পেয়ে হতাশায় চিংড়ি চাষিরা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/10/16/bagerhat_abnews_105611.jpg)
বাগেরহাট, ১৬ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রায় ১১ হাজার চিংড়ি চাষি চরম হতাশায় ভুগছেন। চিংড়ি চাষ করে এখন তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। হাজার টাকা দরের চিংড়ি’র কেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকায়। এছাড়া নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে চিংড়ি চাষ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। গত ২ যুগ ধরে এলাকার চাষিরা এটি চাষ করে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে তাদের লোকসান হচ্ছে। এতে চিংড়ি চাষিরা পথে বসতে চলেছেন। অনেক চাষিরা দেনার দায়ে ঘরছাড়া হচ্ছেন।
স্থানীয় চিংড়ি চাষিরা জানান, সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়ে থাকে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এখানকার চিংড়ি চাষিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। বিদেশে রপ্তানিকৃত চিংড়ির সিংহভাগ দক্ষিণাঞ্চল তথা এই এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। এখানকার আবাদি-অনাবাদি জমিতে ঘের তৈরি করে গলদা, বাগদা ও রুই, কাতলসহ নানা জাতের মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান। যার ফলে মাছ চাষের উপর এখানকার অধিকাংশ পরিবার নির্ভরশীল। এখানকার নারী-পুরুষ সকলেই সমানতালে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন চিংড়ি চাষের পেছনে। তাদের আশা-ভরসা এই চিংড়ি শিল্পের উপর।
কিন্তু বর্তমানে তাদের সেই আশা-ভরসা এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। গত কয়েক বছর ধরে পর পর বন্যা ও অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে চিংড়ি চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণে চাষিরা চিংড়ির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে বিদেশে সুনাম ক্ষুন্ন করার ফলে বিদেশি কোম্পানি গুলি এদেশের চিংড়ি ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে। পাশাপাশি ঘেরে বিষ দিয়ে চিংড়ি চুরি ও নিধনের প্রবনতা বেড়েছে।
বর্তমানে চাষিরা বাজারে পুরোদমে বিক্রির জন্য ঘের থেকে চিংড়ি বাজারে তুললেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা নানা কারসাজির মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে চিংড়ির বাজার দর নিম্নমূখী করে রেখেছে বলে চাষিরা অভিযোগ করে জানান। এতে হাজার টাকা কেজি দরের চিংড়ি মাছ তাদের মাত্র ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চাষিদের লাভের মুখ দেখা দূরে থাক মহাজনদের দেনা শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অনেকে জানান। এছাড়া চিংড়ি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, হ্যাচারীর ভেজাল রেণু পোণা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালশিরা গ্রামের চিংড়ি চাষি মিলন মন্ডল, সাধন অধিকারী ও চরবানীয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের চাষি শওকত শেখ, প্রদীপ বৈরাগীসহ অনেকে জানান, বাজারে চিংড়ি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি বৃদ্ধি হচ্ছে। অথচ চিংড়ির বাজারদর একেবারে কমে যাচ্ছে। হাজার টাকা কেজি দরের চিংড়ি বর্তমানে মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকে দেনার দায়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, এ উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার চিংড়ি চাষি রয়েছে। চিংড়িতে বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করার কারণে বাইরের দেশগুলি এদেশের চিংড়ি কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে বাজারে দামের প্রভাব পড়ছে। উৎপাদিত চিংড়ির নায্যমূল্য পেলে অবশ্যই চাষিরা লাভবান হবেন বলেও তিনি জানান।
এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/এমসি