বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • লক্ষ্মীপুরে নামধারী কসাই ডাক্তার প্রমিলেন্দু দাশ

লক্ষ্মীপুরে নামধারী কসাই ডাক্তার প্রমিলেন্দু দাশ

লক্ষ্মীপুরে নামধারী কসাই ডাক্তার প্রমিলেন্দু দাশ

লক্ষ্মীপুর, ১৮ অক্টোবর, এবিনিউজ : তিনি ফার্মেসী মালিক, কোন ডাক্তার নন, তারপরও দিনের-পর দিন অপ-চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা পূর্ব বাজারের ‘মেডিসিন হাউজ’ এর প্রোপ্রাইটর প্রমিলেন্দু দাশ।

ডাক্তার না হয়েও তিনি শিশুরোগ থেকে শুরু করে সব-বয়সী মানুষকে ব্যবস্থাপত্র ঔষধ লেখেন। একসময় তিনি ব্যবস্থাপত্রে ডাক্তার লেখতো। কিন্তু সম্প্রতি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ভুয়া ডাক্তারকে বিনাশ্রম কারাদন্ড ও নগদ অর্থ জরিমানা করেন। এমন সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রমিলেন্দু দাশের মতো অনেক ফার্মেসি মালিক ডাক্তার শব্দ ব্যবহার না করে কৌশলে প্রোপ্রাইটর শব্দ ব্যবহার করেন ব্যবস্থাপত্রে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা শহীদ মাজহারুল মুনীর সড়কের পাশে অবস্থিত হাওলাদার মার্কেটে ‘মেডিসিন হাউজ’ নামে একটি ঔষধি ফার্মেসি খুলে বসেন ভুয়া চিকিৎসক প্রমিলেন্দু দাশ।

তবে প্রমিলেন্দু দাশ ফার্মেসির পাশাপাশি নিজেই ব্যবস্থাপত্র লেখেন এবং চিকিৎসা দেন। তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে যথাক্রমে:- নবজাতক, শিশু ও কিশোর, মেডিসিন, গ্যাস্ট্রিক, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিস, বাত ব্যাথা, মেরুদন্ডসহ অসংখ্য রোগের।

এছাড়াও তিনি নতুন রোগী দেখলে ১শ’ টাকা, পুরাতন রোগী ৫০টাকা নেন। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন তিনি। প্রমিলেন্দু দাশের মতো পুরো জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত এরকম চিকিৎসক। কেউবা আবার নাম ধারী ডাক্তার। তবে বিষয় গুলো দেখার কেউ নেই।

জান্নাতুল ফেরদাস নামে ৬ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে পল্লী-চিকিৎসক প্রমিলেন্দু দাশের কাছে নিয়ে আসেন উপজেলার তেওয়ারিগঞ্জ গ্রামের জহির-সুমি দাম্পত্য। তারা বলেন, গত কয়েকদিন আগে তাদের শিশু জ্বর দেখা দেয়। তারা ওই ডাক্তারে কাছে আনলে তিনি ১ শ’ টাকা ভিজিট নেন ব্যবস্থাপত্র বাবদ। ব্যবস্থাপত্র ৩ টি সিরাপ লেখেন। সিরাপ গুলি খাওয়ার পরও কিছুতে জ্বর ভালো না হওয়ায় গত শনিবার সকালে আবার তাঁর কাছে নিয়ে গেলে তিনি আবার ব্যবস্থাপত্র বাবদ ৫০ টাকা ও ৩শ’ ৯০ টাকা দামের ৩টি নতুন সিরাপ দেন।

একইদিন কথা হয় ফারুক ও নয়নের সাথে, তারা আন্ধারমানি গ্রাম থেকে এসেছেন প্রমিলেন্দুর দাশের কাছে, তাদের ১ বছরের শিশু পুত্র মো.ফাহাদের সর্দি জ্বর নিয়ে। এসময় তারা বলেন, ডাক্তারবাবু ফাহাদকে ২ থেকে ৩ মিনিট দেখে এজেদ, এক্সপা ও টেলফাস্ট নামে ৩ ফাইল ঔষধ দিয়ে বলেন ৩শ’ ৮০ টাকা দেন। ৭দিন পর আবার নিয়ে আসবেন।

চৌরাস্তা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কুন্ডুল বাবু বলেন, ৩ মাস পূর্বে তাঁর ৭ বছরে মেয়ে উলমি পালের কান ব্যাথ্যা দেখা দেয় পরে পল্লী ডাক্তার প্রমিলেন্দু দাশের কাছে নিয়ে আসলে তিনি এক সপ্তাহর জন্য ঔষধ দেয়। ঔষধ খেয়েও কোনো উন্নতি না দেখে এক সপ্তাহ পর নিয়ে আসলে তিনি ৫ দিনের ঔষধ দেন। পাশাপাশি কান অপারেশন করতে হবে বলে তিনি বলেন। আমি কোনো উপায়-উত্তর না পেয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ৫ টাকার একটি টিকেট কেটে ডাক্তার দেখালে একটি ড্রপ ৪টি ট্যাবলেট দেয়। এ গুলি সেবন ও ব্যবহার করে আমার মেয়ে ভালো হয়।

অভিযুক্ত পল্লী-চিকিৎসক প্রমিলেন্দু দাশ বলেন, একসময় আমি ব্যবস্থাপত্রে ডাক্তার ব্যবহার করতাম। যেদিন থেকে সরকার নিষেধ করেছে সেদিন থেকে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করিনা। বর্তমানে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লেখি। কেউ ১শ’ টকা কেউ ২শ’ টাকা দেয়। অনেকে আবার দেয়না।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল-সার্জন ডা. মোস্তাফা খালেদ বলেন, এমবিবিএস ছাড়া কেউ ব্যবস্থাপত্র লেখতে পারে না। যারা লেখেন তারা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও অবৈধ ভাবে এসব করে সমাজের সাধারণ মানুষক প্রতারিত করেন। যেসব পল্লী চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ডাক্তার লেখেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এবিএন/অ আ আবীর আকাশ/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত