ঝালকাঠি, ২৪ অক্টোবর, এবিনিউজ : প্রায় এক যুগ ধরে বিধ্বস্থ নলছিটির গোপতেরহাট গ্রামে পরপর ৩টি পাকা ব্রিজের উপর সুপারী ও বাঁশ গাছ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সাঁকো ব্রীজ বানিয়ে চলাচলে বাধ্য হচ্ছে ৫০টি গ্রামের বাসিন্ধারা। অর্ধেক পাকা ও অর্ধেক সুপারী আর বাঁশ গাছ দিয়ে সচল রাখা সাকোঁব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সরমহল গোপতেরহাটে বিধ্বস্ত এ ব্রিজগুলো এলাকাবাসী চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হলেও গত একযুগেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা সংস্কার বা পুননির্মানের উদ্দোগ নেয়নি। ঝালকাঠি-নলছিটি আসনের সংসদ সদস্য, নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কেউই ভেঙ্গে যাওয়া ব্রীজ ৩টি চলাচলের উপযুগী করার ব্যবস্থা না নেয়ায় নিরুপায় এলাকাবাসী প্রতিবছর চাঁদা তুলে কোনমতে সচল রাখছে বলে জানাগেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, একযুগ ধরে বিধ্বস্থ এ ৩টি পাকা সেতু প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামের আন্ত:সংযোগ রক্ষাকারী ও অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ব্রীজগুলোর মাধ্যমে ৫০টি গ্রামের জনসাধারন ও স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী পারাপারসহ নলছিটি-ঝালকাঠি যোগাযোগ রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করলেও কেউ সংস্কারের নাম নিচ্ছেনা। ২০০৭ সনের সিডরে পাকা সেতু ৩টির অর্ধেকাংশ ভেঙ্গে ধ্বসে পড়ার পর এতোগুলো বছর অতিবাহিত হলেও সরকার, স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ ও স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী কারোই সুদৃষ্টি পরছেনা। এঅবস্থায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দুই উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সামনে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী যাতে অন্তত অস্থায়ী ভাবে মেরামত করে পায়ে হেটে চলাচল করতে পারে সেজন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যদের কাছ ঘুরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বিকল্প উপায় হিসাবে এলাকাবাসী প্রতি বছর চাঁদা তুলে মেরামতের মালামাল ক্রয় ও শ্রমিকের মজুরি প্রদান করছে। সকলে চাঁদা দিয়ে ভাঙ্গা ব্রীজ ৩টির অবশিষ্ট অংশের সাথে সুপারী গাছ ও বাশ গাছ দিয়ে সাঁকো তৈরী করে বাকী অংশের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। তবে নিজেদের চিন্তায় চলাচলের উপযুগী করা এ কাঁচা-পাকা সাকোব্রীজ গুলো অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও মরন ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত এক যুগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কম করে শতাধিক বার এ বিষয়ে অবহিত করলেও তাদের টনক নড়েনী । এ সেতু ৩টির পশ্চিম পাড়ে নলছিটি উপজেলার মানপাশার জমজমাট বাজার, সরমহল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরমহল সরকারী প্রা.বি. ও একটি দাখিল মাদ্রাসা, জামে মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা রয়েছে। অথচ সেতু ৩টির ওপর দিয়ে কোন প্রকার ইঞ্জিন চালিত এমননি রিকশা, ভ্যান পর্যন্ত চলাচল করতে পারছেনা। এ ভাবে প্রায় একযুগ ধরে ওই এলাকার অধিবাসীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহালেও সম্পূর্ন উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উন্নয়নের রুপকারেরা।
ইউনিয়নের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল হক, ও গোপতের হাটের ব্যাবশায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক জানান, সেতুটি মেরামত না হওয়ায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের আমরা বহুবার এ সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এলাকাবাসীর নিজস্ব সহ্য়তায় প্রতিবছর হাজার হাজার টাকা খরচ করে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে পারাপারের ব্যবস্থা করে।
সরমহল পুনিহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: আ: মান্নান জানান, বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকোর অংশটি দিয়ে পারাপার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। যে কারনে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকেরও বেশী শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এতে তাদের লেখাপড়ায় চরম ক্ষতি হয়। আর অভিভাবকরা আমাদের কাছে এ নিয়ে উদ্বেগ্ন নয়, রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আমরা কিছু করতে পারছিনা। এখানে নতুন সেতু হওয়া অত্যান্ত জরুরী।
এ ব্যাপারে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর হোসেন সিকদার জানায়, “২০০৭ সালের সিডরে সেতু ৩টির স্লাপ ও অন্য অংশ ধসে পড়ে ছিল। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার অবহিত করা হলেও এ যাবৎ কিছুই হয়নী। খোজ নিতে গেলেই এইতো হবে, হচ্ছে বলে সান্তনা দিয়েই বিদায় দিচ্ছে। প্রতি বছর এলাবাসী চাঁদা তুলে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে। আমরা পকেট থেকে দু/এক হাজার টাকা দিতে পারলেও বরাদ্ধ না পেযে তো স্থায়ী ভাবে সংস্কার করতে পারছিনা। এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লা-হেল বাকী জানান, প্রক্কালে আমাদের দপ্তর থেকে বহুবার উদ্বর্তন কতৃপক্ষের কাছে বার বার লিখিত ভাবে পাঠানো হয়েছে।
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/তোহা