শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

সুপারীর রাজ্য কাউখালী, চাষীদের হতাশা

সুপারীর রাজ্য কাউখালী, চাষীদের হতাশা

কাউখালী, ৩১ অক্টোবর, এবিনিউজ : উপকূলীয় পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা সুপারীর ফলনে তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কালের বিবর্তনে ধান, পান হারিয়ে গেলেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে সুপারি।

কাউখালী উপজেলায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হয়ে আসছে। এখনকার সুপারী মানে ভাল বলে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠেছে। এবার এ উপজেলায় সুপারীর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সুপারীর বাজার ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়া চাষীরা আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন না। গত মৌসুমে চাষীরা সুপারীতে ভাল দাম পেয়ে লাভবান হলেও এবার ভালো দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাচটি ইউনিয়নে প্রায় ৩৭০একর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। এখন সুপারীর ভরা মৌসুম। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপারির উৎপাদন ও বিক্রি চলবে। এবার সুপারীর আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন চাষীরা। তবে দাম গত মৌসুমের তুলনায় কিছুটা কমতির দিকে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সুপারী একটি অর্থকরী ফসল। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসরের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনা-বেচা হয় কাউখালীতে। কৃষক ও সুপারি ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে দক্ষিনাঞ্চলের কাউখালী সুপরিচিত।

বর্তমানে দেশে উৎপাদিত সুপারির বড় অংশ দক্ষিনাঞ্চালের কাউখালীতে উৎপাদিত হয়। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার। উপকূলে সুপারীর সবচেয়ে বড় মোকাম কাউখালী। দক্ষিনাঞ্চলের ১২টি উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারী নিয়ে বিক্রির জন্য কাউখালী শহরে গড়ে উঠা সুপারির হাটে আসেন। এখানে প্রতিসপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন সুপারীর হাট বসে।

এছাড়া গাজিরহুলা, চৌরাস্তা, তালুকদারহাট, মিয়ারহাট, ধাবড়ী, নতুন বাজার, কেউন্দিয়া সহ ১০/১২টি ছোট বড় হাটে সুপারি কেনা-বেচা হয়। এসব হাটে সারাবছরই সুপারি কেনা-বেচা চলে। তবে শুকনো সুপারির পিক মওসুম ফাগুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং পাকা সুপারীর পিক মওসুম শ্রাবণ থেকে অগ্রহায়ন পর্যন্ত।

এ সময় বেশির ভাগ সুপারি ক্রয়-বিক্রি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারত সহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠান। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পারসাতুরিয়া গ্রামের জামাল হোসেন জানান, আমার মতো অনেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি থেকে সুপারি কিনে এনে এসব হাটে বিক্রি করেন। এখানে বছরে কোটি কোটি টাকার সুপারি কেনা-ব্চো হয়।

অনেক কৃষকদের অভিযোগ সুপারি আমদামি ছাড়াও বাজারে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সুপারীর দাম কমিয়েছে বলে অভিযোগ. সুপারী চাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। দালাল বাজারের সুপারী চাষী সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সুপারীর ফলন ভালো হওয়ায় খুশি হলেও ফলন অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় হতাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। কাউখালীর সুপারি ব্যবসায়ী শেখ লিটন জানান, কাউখালীতে প্রতি হাটে প্রায় অর্ধকোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়।

প্রতি বছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকি। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে এবং ঢাকা,সিলেট, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

তিনি জানান, গত মৌসুমে সুপারীর দাম ছিল অনেক ভাল। তবে এবার সুপারীর দাম অনেক কমতির দিকে। গত মৌসুমে ২১ ঘার(২১০টি) এক কুড়ির কাঁচা সুপারির মূল্য গত মৌসুমে শ্রেণী ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমান মৌসুমে ২১ ঘা (২১০টি) এক কুড়ি কাঁচা সুপারির মূল শ্রেণী ভেদে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক কম।

ব্যবসায়ী নাছির হোসেন জানান, শুকনো সুপারি সাধারনত ফালগুন মাস থেকে বিক্রি শুরু হয় তা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে এবং শ্রাবন মাস থেকে কাঁচা সুপারি অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে।

এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চাষীদের পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বেড়েছে ফলন।

এবিএন/সৈয়দ বশির আহম্মেদ/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত