![কাশিয়ানীতে ছোট ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বড় ভাইয়ের নাম](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/11/10/gopalgonj-map_110207.jpg)
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ), ১০ নভেম্বর, এবিনিউজ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ছোট ভাইয়ের নামের বানান ভুলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বড় ভাইয়ের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে আগামী ১৩ নভেম্বর দু’পক্ষের শুনানী শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, কাশিয়ানী উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের শাহাবুর রহমান ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ট্রেনিং শেষে ৭১ সালের ফেব্রুয়ারীতে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গ্রাম থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে ফিরে যান। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি গেজেটভূক্ত হন। তাঁর গেজেট নং ৩২৩৯। মুক্তিবার্তা ও লাল বইতে সিরিয়াল নং ০১০৯০৪৭৭৬। সনদ নং ১৭৯৬২২। এসব কাগজপত্রে ভুল বসত তার নাম শাহাবুর রহমানের স্থলে মাহবুর রহমান (সেনাবাহিনী) লেখা হয়।
২০০০ সাল থেকে শাহাবুর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। নামে ভুল থাকার সুযোগ নিয়ে শাহাবুরের আপন বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মাহবুর রহমান মুক্তিবার্তা, লাল বইতে তার নাম রয়েছে দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তখন শাহাবুর রহমান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে নাম সংশোধন চান। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে শাহাবুর রহমাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুর রহমানকে হয়রানী না করার জন্য মাহাবুর রহমানকে সতর্ক করেন। এর কয়েক দিন পর মাহাবুর রহমান মারা যান। মাহাবুর রহমানের মৃত্যুর পর শাহাবুর রহমানের মুক্তিবার্তা নম্বর ব্যবহার করে গোপনে মাহাবুর রহমানের নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করা হয়। মুক্তিবার্তা ও লাল বইতে মাহাবুর রহমান সেনাবাহিনী লেখা রয়েছে। মাহাবুর রহমান কখনো সেনা বাহিনীতে ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ মাস পুলিশ বাহিনীতেই কর্মরত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সেনা সদস্য শাহাবুর রহমানই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি গত ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন।
শাহাবুরের সহযোদ্ধা ইদ্রিস আলী মিয়া বলেন, ‘শাহাবুর আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের সময় তিনি উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের বোয়ালিয়ায় পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে জীবন নিয়ে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।’
মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুর রহমানের আপন ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ মশিউর রহমান বলেন, ‘আমার ভাই শাহাবুর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেনাবাহিনীও তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্ত বড় ভাই মাহাবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নয়। শাহাবুরের মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্রের নামের বানান ভূল ছিল। পিতার নাম, গ্রাম, উপজেলা ও জেলা একই ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাহাবুর মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মোক্তাদির হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর দু’ পক্ষকে আমার অফিসে ডাকা হয়েছে। শুনানী শেষে দ্রুত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
এবিএন/লিয়াকত হোসেন লিংকন/জসিম/নির্ঝর