বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • হোসেনপুরের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ
পিপলাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের

হোসেনপুরের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ

হোসেনপুরের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ), ১৭ নভেম্বর, এবিনিউজ : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পাঁচ সদস্য এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লিখিতভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন। অভিযোগ পত্র ও শিক্ষা বোর্ডের একটি পত্র থেকে জানা গেছে, গত ১১/১২/২০১৬ ইং তারিখে পিপলাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পরের দিন অর্থাৎ ১২/১২/২০১৬ ইং তারিখে কমিটির সভাপতি আল আমিন একক সিদ্ধান্তে বিতর্কিত শিক্ষক রাবেয়া সুলতানাসহ শিক্ষকদের বেতন বিলে স্বাক্ষর করেন।

কিন্তু কমিটির অনুমোদনের চিঠিতে উল্লেখ আছে ‘ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ প্রথম সভার তারিখ হতে পরবর্তী ২ (দুই) বছর কার্যকর থাকবে’। এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৪/১২/২০১৬ ইং তারিখ অতচ সভাপতি বিলে স্বাক্ষর করেন ১২/১২/২০১৬ ইং তারিখ যা এখতিয়ার বর্হিভূতও ক্ষমতার অপব্যবহার। আর এর মাধ্যমে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিক্ষীত ও প্রমানিত ভূয়া নিবন্ধনধারী, সভাপতি আল আমিনের মামী এবং আগের মেয়াদে এডহক কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে নিয়োগকৃত গত ১০/০৩/২০১১ ইং তারিখে যোগদানকৃত রাবিয়া সুলতানার দীর্ঘদিনের বন্ধ থাকা বেতনের ছাড় করা হয়। যা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের সামিল। যাহা প্রবিধান ২০০৯ ইং এর ৩৮(১) অনুযায়ী সভাপতি পদ বাতিল যোগ্য অপরাধ। উল্লেখ্য, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে পূর্ববর্তী ম্যানেজিং কমিটির ০৭/০৬/২০১৫ ইং তারিখের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাবিয়া সুলতানার বেতন বন্ধ ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ১৭/০৫/২০১৭ ইং তারিখে এক পত্রে রাবিয়া সুলতানার বেতন বন্ধ ও এ যাবত গৃহীত সমস্ত অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমাদান এবং প্রয়োজনে পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী ফৌজদারী মামলা দানের যে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি এই ব্যাপারে এখনো কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। গত ৯ আগস্ট ২০১৬ ইং তারিখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ.কে.এম জাকির হোসেন ভূঞা স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে যে নির্দেশনা দেয়া আছে তা অমান্য করে ম্যানেজিং কমিটির সাথে কোনো মিটিং ও আলোচনা ছাড়াই সভাপতি সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন ও রেজিঃ ফি বৃদ্ধি করেছেন। যা ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি নির্দেশ অমান্যকরণ। ফলে প্রবিধান ৩৮ (১) অনুযায়ী সভাপতির পদ বাতিল যোগ্য অপরাধ।

গত ৩০/১২/২০১৬ ইং তারিখ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সভাপতি নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাই। এসব বিষয়ে নির্বাচিত পাঁচজন অভিভাবক সদস্য গত ০৫/০৬/২০১৭ ইং তারিখ ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবান করার জন্য লিখিত আবেদন করার পরও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। সভাপতি দম্ভ করে বলেন যে, তিনি বি.এন.পি পন্থী সভাপতি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো সভা আহবান করা হবে না। সভাপতি একক ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সভাপতির নিজস্ব প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগদানের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সূত্রিতা করছেন। এ বিষয়টি অভিভাবক সদস্যসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যেই জানাজানি রয়েছে।

বিদ্যালয়ের কাজে সভাপতি মো. আল আমিনের অনীহা, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি, অর্থ লিপ্সার কারণে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন দিবস পালন হচ্ছে না। যা অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অভিভাকরা মনে করেন সভাপতি তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জনই সামগ্রিক কাজে দীর্ঘ সূত্রিতার পথ অবলম্বন করছেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো পরিবেশ, উত্তপ্ত হচ্ছে বিদ্যালয়-সমাজ এবং এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের মাঝেও।

সভাপতি মোঃ আল আমিনের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা ২০১২ ইং সারে তার আগের মেয়াদের কমিটি ভেঙ্গে দেয়। এর পর সভাপতি এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ০৩/০৪/২০১৩ ইং তারিখে রিট পিটিশন করেন এবং রিট আদেশের মাধ্যমে পরবর্তী মেয়াদ পূর্ণ করেন। এ বিদ্যালয়ের এতোসব অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি আদেশ অমান্যকারি মোঃ আল আমিনকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করে নির্বাচিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন সভাপতি নির্বাচন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন আবেদনকারি পাঁচজন অভিভাবক সদস্য।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আবু বকর ছিদ্দিক জানান, অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য ইউএনও’র কাছে শিক্ষা বোর্ড থেকে চিঠি এসেছে। এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাক্ষীদের জবানবন্ধি নেওয়া হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট কবে যাবে তা আমরা জানি না। এতোসব অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আল আমিন জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তদন্ত কাজ শুরু হয়নি। তদন্ত কাজ শেষে এবিষয়ে জানা যাবে কে দোষী?। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সর্বই মিথ্যা ও উদ্দেশ্য মূলক।

এদিকে সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর এ.টি.এম. মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত গত ১৫/১০/২০১৭ ইং তারিখের এক পত্রে হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগসমূহ সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ একটি প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএও) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তদন্ত প্রতিবেদন গোপনে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে কাউকেই বিস্তারিত বলা যাবে না।

এবিএন/খায়রুল ইসলাম/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত