![বিষাক্ত বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদীসহ এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/11/20/savar_111832.jpg)
সাভার, ২০ নভেম্বর, এবিনিউজ : হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর হওয়া ট্যানারি শিল্পের বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন না করে ধলেশ্বরী নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে। এতে ধলেশ্বরী নদীর পানিসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। মরে ভেসে উঠছে নদীর মাছ। ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত এই পানি নদী তীরবর্তী এলাকার ভূগর্ভস্ত পানির সাথেও মিশছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব এলাকার টিউবওয়েল ও কূপের পানিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এমনকি পুকুরের পানিও কেমিক্যাল দূষণের কবলে পড়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার আবাদী জমিও রয়েছে হুমকির মুখে। ইতিপূর্বে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা পরীক্ষাতেও দূষণের প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো প্রতিকার হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণরোধে হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুর হরিনধরা এলাকায় চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়। কিন্তু বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে গিয়ে এখন ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশ এলাকা মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। অনেক ট্যানারি শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য ওভার ফ্লো হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলে এই সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর রূপ ধারণ করে। এই পরিবেশ দূষণ বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
২০০১ সালে দেয়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চামড়া কারখানাগুলো হাজারীবাগ থেকে সাভারের হরিনধারায় সরিয়ে নিতে ২০১৩ সালে তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সে মোতাবেক হরিনধরা এলাকায় ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির উপর পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৭ বার। ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। সেখানে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণসহ ১৫৫টি কারখানার জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সিইটিপি নির্মাণ ও অন্যান্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৩৯ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সাভারে ট্যানারি শিল্প এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে যায়। বর্তমানে মাত্র কয়েকটি ট্যানারি চালু হওয়াতে যেভাবে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে তাতে একসঙ্গে ৫০টি ট্যানারি কারখানা চালু হলেই পুরো এলাকা বর্জ্যে তলিয়ে যাবে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
এখানে ফেলা ট্যানারির কঠিন বর্জ্য এবং ঝিল্লির অংশ পচে সৃষ্টি হয় উতকট গন্ধের। এই তীব্র দুর্গন্ধে আশেপাশের লোকজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ধলেশ্বরীর সঙ্গে সংযুক্ত কালিগঙ্গা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ নদী ও কর্ণতরী বিল একইভাবে ট্যানারির বর্জ্যে দূষিত হবে। এভাবে ক্ষতিকর রসায়নিক বর্জ্য ক্রমাগত নদীতে ফেলা হলে ধলেশ্বরী নদীর অবস্থাও কয়েক বছর আগেকার বুড়িগঙ্গার মতো হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)র সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, যে যুক্তিতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ট্যানারি শিল্প মালিকদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু সে যুক্তি কার্যকর হবে না যদি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া না হয়। সাভারের চামড়া শিল্প পল্লীতে এখনো সিইটিপি পুরোপুরি তৈরি হয়নি। সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। হাজারীবাগে যেখানে বড় বড় ড্রেনেই পানি উপচে পড়ে সেখানে সাভারে ছোট ডায়ামিটারের পাইপ দিয়ে ড্রেনেজ চালু করা হয়েছে। এরইমধ্যে যে কয়টি ট্যানারি ওয়েট ব্লুর কাজ শুরু করেছে, তাতেই ওই এলাকায় ওভার ফ্লো হচ্ছে। সেই পানি ধলেশ্বরীতে পড়ে মাছ মারা যাচ্ছে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইয়ার্ডের কাজও শুরু হয়নি। এই অবস্থায় হাজারীবাগের সকল ট্যানারি স্থানান্তর করে উৎপাদনে গেলে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কর্মকর্তাদের দাবি, তরল বর্জ্য পরিশোধন কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নির্মাণাধীন চারটি মডিউলের কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়ে গেছে। এই চামড়া শিল্পনগরীতে ইতোমধ্যে ৫৩টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করেছে। প্রায় ৫০টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কাজ শুরু করেছে। যে ধরনের নেট শিল্প ইউনিটসমূহে ব্যবহার করার কথা এখনো সব মালিক সে ধরনের নেট ব্যবহার না করায় সাভার ট্যানারি শিল্প এলাকায় পাইপ থেকে ওভার ফ্লো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ট্যানারি মালিকগণ তাদের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য যে রাস্তা খনন করেছেন তা তাদেরই সংস্কার করার কথা। কিন্তু বিসিক থেকে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তারা তা করছেন না। কঠিন বর্জ্য সমস্যার অচিরেই সমাধান হবে।
এবিএন/সোহেল রানা খান/জসিম/এমসি