গোপালগঞ্জ, ২১ নভেম্বর, এবিনিউজ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় সুপারভাইজার ও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ শ’ টাকা বেতনের চাকরি পেতে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে চাকরি প্রত্যাশীদের। স্থানীয় এনজিও কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়োগের নামে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরুর আগেই নিয়োগের নামে ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে পুরো প্রকল্পের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সরকারের লক্ষ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক সাক্ষরতা কর্মসূচির (৬৪ জেলা) আওতায় ১৪ থেকে ৪৫ বছরের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলায় মৌলিক সাক্ষরতা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ‘কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট সংস্থা’ (সিডিএস) নামে একটি স্থানীয় এনজিও দায়িত্ব পেয়েছে। ছয় মাসের জন্য গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে ৩শ’ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ করার কথা রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পের কমিটির উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও এবং প্রকল্পের উপজেলা প্রোগ্রাম অফিসার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ চূড়ান্ত করার বিধান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর ব্যাজলাইন সার্ভের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক সাক্ষরতা কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও কমিউনিটি ডেভপলপমেন্ট সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোর্শেদ আলী খান ওই এনজিও কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাজলাইন সার্ভে কর্মীদের মাধ্যমে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে তিনি সুপারভাইজার ও শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মিশনে নেমেছেন।
প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি ইউএনও এবং প্রোগ্রাম অফিসার ও কমিটির মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগামী মাসে সুপারভাইজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মোর্শেদ আলী খান কতিপয় কর্মীদের মাধ্যমে সুপারভারইজার ও শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার নামে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে ৩-৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।
এছাড়াও কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট সংস্থা (সিডিএস) নামে ওই এনজিও’র বিরুদ্ধে বিদেশী সাহায্য সংস্থা ‘হাইসাওয়া’ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং কর্মী নিয়োগের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার পাথরগ্রামের অপর্ণা বল বলেন, ‘আমি মৌলিক সাক্ষরতা কর্মসূচি প্রকল্পে শিক্ষকতার জন্য সিডিএস এনজিওতে আবেদন করি। কিছুদিন পর ওই এনজিওর ব্যাজলাইন সার্ভের দায়িত্বে থাকা অনুপম বালা আমার চাকরি নিশ্চিত করতে অফিসের কথা বলে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা চায়। আমি তাকে ২ হাজার টাকা দেই। কিন্তু সে আজও পর্যন্ত আমাকে ভাইভা কার্ড দেইনি।’
এভাবে সে উপজেলার সিংগা ও হাতিয়াড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক লোকের কাছ থেকে চাকরির জন্য ৩-৫টাকা করে নিয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এভাবে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ব্যাজলাইন সার্ভে পরিচালনার জন্য সিডিএস এনজিও’র নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে চাকরির জন্য টাকা কালেকশন করে নির্বাহী পরিচালককে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিডিএস এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মো: মোর্শেদ আলী খানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যদি আমার বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার প্রমাণ থাকে তাহলে নিউজ করেন।’
এ প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, এস, এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘কে বা কারা চাকরির জন্য টাকা-পয়সা লেনদেন করছে, তা আমার জানা নেই।’
এবিএন/লিয়াকত হোসেন লিংকন/জসিম/এমসি