রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
logo

সাভা‌রে বিলের জন্য ১৬ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তর

সাভা‌রে বিলের জন্য ১৬ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তর

সাভার, ২৫ নভেম্বর, এবিনিউজ : বিল পরিশোধ করতে না পারায় এবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এক নারীর লাশ আটকে রাখার অভিযোগ করেছে স্বজনরা। পরে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে ১৬ ঘণ্টা পর স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে মৃতদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

রোগীর স্বজনরা জানায়, প্রসবজনতি জটিলতায় শিলা সূত্রধর (২৯) নামের ওই নারীর মৃত্যুর পর প্রায় দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হলেও আরও পাঁচ লাখ টাকা বিল দাবি করে হাসপাতাল।

আজ শনিবার সকালে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সামনে একটি ট্রলিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই নারীর লাশ। তিনি আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি শঙ্কর সূত্রধরের স্ত্রী।

শঙ্কর সূত্রধরের অভিযোগ, গত ৩ নভেম্বর তার স্ত্রী ও নবজাতককে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউতে) ভর্তি করা হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে রোগী ভালো হয়ে যাবে বলে জানায়। এরপর টানা দুই সপ্তাহের বেশি দিন চিকিৎসা শেষে চার দিন আগে শিলা সূত্রধর সুস্থ হয়ে গেছে বলে জানিয়ে তাকে সাধারণ বেডে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে তত দিনে আইসিউতে লক্ষাধিক টাকা বিল বকেয়া পড়ে যায়। বিল পরিশোধ করতে না পারায় শিলাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউতেই আটকে রাখে।

শঙ্কর বলেন, হঠাৎ করে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে দাবি করে। পরে রাতেই শিলা সূত্রধর মারা যান। শনিবার সকাল দশটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। রোগী মারা যাওয়ার ১২ ঘণ্টা পর হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করে লাশ নিয়ে যেতে বলে জানান শঙ্কার।

পরে লাশ আটকে রাখার খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ছুটে গেলে পরে দুপুরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করে।

শিলার চাচা জহর লাল সূত্রধর জানায়, চার দিন আগেও তার ভাতিজি সুস্থ ছিলেন। তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন শিলা। তবে হাসপাতালে তার স্ত্রী ও শিশু বাচ্চার প্রায় ৭ লাখ টাকা বিল হয়েছে। অনেক কষ্টে শঙ্কার প্রায় ২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। তবে ৫ লাখ টাকা বকেয়া থাকায় তার স্ত্রীর লাশ হাসপাতাল আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি টাকার জন্য নবজাতককেও আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক আশরাফ উল্লাহ চৌধুরী সাইফুল জানায়, হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারলে তারা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কেন চিকিৎসার জন্য আসেন। অন্য কোথাও তো যেতে পারে। এ ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার শিরিন ও রেজাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: আমজাদুল হক বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে রোগীর অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর যদি অবহেলায় তার মৃত্যু হয় তাহলে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো: এহসানুল করিম বলেন, বিল পরিশোধ করতে না পারলে মৃতদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রাখতে পারবে না এ সংক্রান্ত একটি আদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আর যেহেতু এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক একজন সাংসদ তারও এ বিষয়টি জানার কথা। এ ছাড়া বিনা চিকিৎসায় অথবা অবহেলায় রোগী মারা গেলে সে বিষয়েও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

দুই মাস আগেও আনিছুর রহমান নামের এক ব্যক্তির নবজাতক সন্তান ও তার স্ত্রীকে বকেয়া বিল এবং সেলিম মিয়া নামের অগ্নিদগ্ধ এক যুবক চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল এই স্বনামধন্য হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।

‌এবিএন/মো: সো‌হেল রানা খান/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত