শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

বেরোবির ভর্তি পরীক্ষা: শিকলে বাঁধা হায়াতুজ্জামানের মেধা

বেরোবির ভর্তি পরীক্ষা: শিকলে বাঁধা হায়াতুজ্জামানের মেধা

বেরোবি (রংপুর), ২৬ নভেম্বর, এবিনিউজ : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক সম্মান ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ১ম দিনের ‘এ’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষার সময় বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট দিয়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে লাইন ধরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রচন্ড ভিড়ে শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ, আনসার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হঠাৎ দুই পায়ে শিকল বাধা অবস্থায় এক পরীক্ষার্থী সবার নজরে পরে। এ সময় এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পায়ে শিকল বাধা দেখে শুরু হয় প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদ। গেটের বাইরে থেকে তার পিতা আব্দুর রহমান অনুমতি নিয়ে ভিতরে আসলে তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ড. আবু কালাম মো: ফরিদ-উল ইসলামের হস্তক্ষেপে সহকারী প্রোক্টর ড. শফিক আশরাফ তাকে পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের কৃষক পিতা আব্দুর রহমানের একমাত্র ছেলে সে। তার একমাত্র বোন কুড়িগ্রামের একটি কলেজ থেকে স্নাতকে পড়াশুনা করছে। হায়াতুজ্জামানের পিতা আব্দুর রহমান জানান, আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। ৫ম শ্রেনীতে মেধাতালিকায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে হঠাৎ অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করতো সে। পড়ে ডাক্তারকে দেখালে অতিরিক্ত টেনশন ও ঘুম কম হওয়ার ফলে মন্তিষ্কের সমস্যার কথা জানায়। সে যাতে হারিয়ে না যায় তাই তার পায়ে শিকল দিয়েছি।

হায়াতুজ্জামানের মস্তিষ্কের সমস্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার সময় পড়াশুনা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব থাকায় রাত জেগে পড়াশুনা করতো। সে জন্যই এই সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবে। এখনো পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেশি।

আমার বিশ্বাস সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে। গেট থেকে পরীক্ষার হল যাওয়া পর্যন্ত হাটতে হাটতে হায়াতুজ্জামানের সাথে কথা হয়। সে জানায়, আমার স্বপ্ন একদিন অনেক বড় হবো আমি। দেশের সেবা করবো। পায়ে শিকল বাধার বিষয়ে সে জানায়, আমার মাথায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরিবার থেকে পায়ে শিকল বেধে দেয়। এ সময় বারবার এই প্রতিবেদকের কাছে দোয়া চাচ্ছিলেন হায়াতুজ্জামান।

পরীক্ষা শেষে তার পিতা আব্দুর রহমান ছেলের পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে জানিয়ে বলেন, আমি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আশা করি সে একদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করবে।

এবিএন/তপন কুমার রায়/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত