শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

আজ বাউফল পাক হানাদার মুক্ত দিবস

আজ বাউফল পাক হানাদার মুক্ত দিবস

বাউফল (পটুয়াখালী) , ০৮ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : আজ ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস। ১৯৭১সালের এইদিন পাক হানাদারকে উৎখাত করে বাউফল থানা দখলেনেয় মুক্তিবাহিনী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী কর্তৃক পটুয়াখালী বাউফলের শতাধীক মানুষ গণহত্যা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এখনও পায়নি কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা। সেই ৭১ সালের লোমহর্ষক ঘটনার দৃশ্য ও প্রিয়জনদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি স্মরন করে আজও চোঁখের পানি ফেলছেন অনেক পরিবার।

স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো ৭১ সালের পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক হত্যা নির্যাতনসহ আগুনে পোড়ানো ঘটনা তুলে ধরেন। ৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে বহু হৃদয় বিদারক ঘটনার স্বীকার হয়ে ছিলেন উপজেলার শত শত পরিবার। বিভিন্ন এলাকায় পাক-হানাদার কর্তৃক ৭১ সালের নিষ্পাচারিত ঘটনার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, ১৭ সেপ্টেম্বর-কালিশুরীর শিবপুর এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ, ৬ আগষ্ট-ধুলিয়া এলাকায় গনহত্যা চালায় হানাদার বাহিনী। একের পর এক হত্যাযজ্ঞসহ ২৬ সেপ্টেবর-মদনপুরা চন্দ্রপাড়া গ্রামে আগুন দিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ ১৩ জন নিরিহ মানুষকে গুলি করে হত্যা সহ ১১ সেপ্টেম্বর কালিশুরী বন্দরের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় ওই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। রাজাকারের গতিবিধি ও লক্ষ্যবস্তু জানার বিশেষ ডিউটি পালনসহ মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষন দেন আবদুল কাদের সিকদার। দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন ক্যাম্পে অপারেশন চালিয়ে মেলেসিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণসহ সনদ প্রদান করেন। দীর্ঘদিন ভিডিআর চাকরী করে অবসর জীবনে বৃদ্ধ বয়সে নানা রোগে ভুগছে। এ দিকে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বাছাই চললেও আব্দুল কাদের সিকদার সেই তালিকার নাম অর্ন্তভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে।

উপজেলার বাউফল ইউপির অলীপুরা গ্রামের বাসিন্দা ওয়াজেদ তালুকদার কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন থেকে পালিয়ে পাক হানাদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে করেন। মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়ার কারনে পাক সরকার বহিস্কার করেছে চাকরী থেকে। যুদ্ধকালীন সময় পাকহানাদার বাহিনী ছোড়াগুলিতে সহমুক্তিযোদ্ধা আক্কাচ আলীর মাথার ওপর গুলি লেগে ঢলে পড়ে যোদ্ধা ওয়াজেদ তালুকদার বুকে। সেই দিনের আহত মুক্তিযোদ্ধার চিৎকার কানে ভেসে আসে এবং রক্তের ফোয়ারা চোঁখে ভাসে আজও। তবুও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখাতে পারেনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পক্ষে পুলিশ লাইন কুষ্টিয়া জেলার-৪৮৫ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাক সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনী দ্বারা পুলিশ লাইনে ঘেরাও করে রাখে এবং জোরপূর্বক অস্ত্রশস্ত্র সহ আতœসর্মপন করে অস্ত্র তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। দুই তিনদিন পর কৌশলে পালিয়ে কুষ্টিয়া শহরে পার্কশী হাডিং ব্রিজের কাছে পাক সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। সেখান থেকে নিজ থানা বাউফল ৯ নং সেক্টর মেজর এম,এ, জলিল এর অধীনে আর্মি নায়েক গাজী পঞ্চম আলী গ্রুপে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহন করে। বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা ঘোষনা করলে ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা বাউফল থানা কমান্ডারের কাছে হেফাজতে থাকা অস্ত্র (রাইফেল নং ১৭৭০ পটুয়া) জমা দেন এবং একখানা সনদপত্র নিয়ে পূর্ব কর্মস্থালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন যোগদান করে। চাকরী শেষে বর্তমানে অবসরে অলীপুরা বাড়ীতে অবস্থান করেছেন। ২৫শে মার্চের পর পাক সরকার বাহিনী থেকে পালিয়ে আশার পর তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। যুদ্ধ সময়কালীন ওয়াজেদ তালুকদার বয়স ২১ হলেও বর্তমানে ৬৯ বছর পড়েছে। বয়সের ভারে অনেক কিছু ভুলে গেছে। স্বাধীনতার যুদ্ধকলীন সময়ের তারিখও স্থানের নাম মনে নেই তার।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তথ্যানুসারে বাউফল উপজেলায় ৫৬৮ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভ’ক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১ জন মারা গেছে। ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। বেসরকারি জরিপ বলছে, বাউফল উপজেলায় সহ¯্রাধীক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। যাদের ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহন ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শর্তানুসারে প্রমানপত্র উপস্থাপন ব্যর্থ হওয়ায় ওইসব মুক্তিযোদ্ধাগন সরকারি গেজেটভুক্ত তালিকায় নাম অর্ন্তভ’ক্ত হতে পারেনি। ফলে আর্থিক সংকট, বার্ধক্যজনিত রোগ ও শারিরীক নির্যাতনের ক্ষত বুকে নিয়ে ক্ষোভে কষ্টে দিনাতিপাত করছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।

সেই দিনের পৌশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নেই নামফলক। সংরক্ষন করা হয়নি গন কবরগুলো। এমনকি যুদ্ধকালীন স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। সময়ের সাথে ইতিহাসগুলো ভুলে যাচ্ছে এই প্রজম্মের মানুষগুলো।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মো: শামসুল আলম মিয়া বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগ সরকার নিকট ওই সব ক্ষতিগ্রস্থসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দাবী হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ক্ষেত্রে বৈষম্য নয়, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি মাধ্যমে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তি করে প্রয়োজনীয় সহয়তা দিয়ে স্বাধীন দেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা হোক।

এবিএন/মোঃ দেলোয়ার হোসেন/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত