![চট্টগ্রামে চুক্তির ২০বছরেও বাস্তুভিটা ফেরত পাননি ভারত প্রত্যাগতরা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/12/17/khagrachari--indea-refuge_115617.jpg)
খাগড়াছড়ি, ১৭ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে দুই দশক পূর্তি গত(২রা ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিক হয়ে গেল। দীর্ঘ দুই যুগের বেশী ধরে পাহাড়ে বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে হাজারও আদিবাসী(পাহাড়ী) জনগোষ্ঠী ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়। শরণার্থীদের দেশে এনে নিজ বাস্তুভিটা ফেরত দেয়াসহ ২০দফা প্যাকেজ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তি। চুক্তির আলোকে শরণার্থীরা দেশে ফিরলেও দীর্ঘ ২০বছরেও ফেরত পাননি নিজ বাস্তুভিটা। এতে করে হতাশা বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে। দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যগত পুনবার্সন, অভ্যন্তরীন পুনবার্সন শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স সূত্রে জানা যায়, ২০দফা প্যাকেজ শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ১৯৯৭খ্রি: সালের ২৮মার্চ প্রথম দফায় ৫হাজার ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ী শরণার্থী প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮খ্রি: সালের ২০ জানুয়ারী ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন টাস্কফোর্স গঠিত হয়। টাস্কফোর্স গঠনের পর ২০দফা প্যাকেজ চুক্তিতে বাস্তুভিটা ফেরতসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে ১২,২২২(বার হাজার দুই শত) পরিবারের ৬৪,৬১২(চৌষত্তি হাজার ছয় শত বার) শরণার্থীকে দেশে ফেরত আনা হয়। ২০দফা প্যাকেজে শরণার্থীদের নিজ বাস্তুভিটা পুনর্বাসন, রেশন সুবিধা, চাকুরী ফেরত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী প্রদানের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২০বছরেও শরণার্থীদের নিজ ভিটা জমি ফেরত না দিয়ে খন্ডখন্ড ভাবে সরকারি খাসভূমিতে কিছু সংখ্যক শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা হলেও আর্থিক সঙ্কটে অভাব অনটনে দিনযাপনের সহায় সম্বলহীন ভারত প্রত্যাগতরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীঘিনালা বন বিহার সংলগ্ন এলাকার ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী গৌরি চাকমা বলেন, ’৮৬ইং সালে বাবার সাথে ৩ভাই ও ১বোন মিলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নিই। চুক্তির পর জায়গা জমি ফেরতসহ বিভিন্ন শর্তে আমাদের দেশে ফেরত আনা হয়। কিন্তু সেই সব শর্তের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে আমরা বঞ্চিত।
শরনার্থী বিমলেন্দু চাকমা বলেন, তিন বছর ধরে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে বসে আছি। কোন কাজকর্ম করতে পারি না। সরকার যে রেশন দেয় সেটি নিয়মিত না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।
বিমল কান্তি চাকমা বলেন, শান্তি চুক্তিতে শরণার্থীদের চাকুরী পুর্নাবহাল ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী প্রদানের প্রতিশ্রুতি থাকলেও শরণার্থীরা সে সুবিধা পাচ্ছি না। এছাড়া ভূমি জটিলতা সমাধান না হওয়ায় দীর্ঘ ২০বছরেও আমরা নিজ ভূমি বসত ভিতা ফেরত পায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সূত্র জানা যায়, পঞ্চদশ সংশোধনীতে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনের পর সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২৩হাজার ৮৬০টি আবেদন এসেছে কমিশনে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল জানান, দুই দশকেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধি, প্রবিধান প্রণয়ন না হওয়ায় কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেনা। দ্রুত গঠিত ভুমি কমিশনকে কার্যকর করে ভূমি সমস্যা সমাধানের জোর দাবি জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা পন্থীর কেন্দ্রীয় সভাপতি সুধা সিন্ধু খীসা জানান, সরকার পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সাথে চুক্তি বান্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘ ২০বছর ধরে তামাশা করছে। এতে করে পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠীরা আওয়ামীলীগ সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী পুনর্বাসন টাস্কর্ফোসের সাবেক চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী) যতীন্দ্র লাল ত্রিপুুরা বলেন, ২০দফা প্যাকেজ চুক্তির মৌলিক ধারা সমূহের অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সরকারের মেয়াদেই ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধি প্রবিধান প্রণয়ন করে সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দুইযুগ ধরে চলা বিরাজমান পরিস্থিতি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ালীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এবিএন/ চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর