![লক্ষ্মীপুরে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির শেষ নেই](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2017/12/20/1-34-640x350(2)_116212.jpg)
লক্ষ্মীপুর, ২০ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : কীসের মাঝে কী পান্তা ভাতের ঘি, যে দেশে ১০০% বিদ্যুত, রাস্তা ঘাট, গ্যাস, পানি নিষ্কাষনের ড্রেন নাই। সে দেশে এনালগ মিটার নিয়ে ডিজিটাল মিটার? ডিজিটাল মিটার নিয়ে জোর জুলুম করে প্রি-পেইড মিটার লাগিয়ে দিচ্ছে বিদ্যুৎ অফিস।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে আলাপকালে এবিষয়ে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আমাদের মিটার ছিল। আমরাতো বলি নাই নতুন মিটার দেওয়ার জন্য। একবার টাকা দিয়ে মিটার এনেছি। এখন সরকার প্রি-পেইড সিস্টেম চালু করতে গিয়ে আগের কিনা মিটারটি খুলে নিচ্ছে। সে সময়ে তারা বলেছিল মিটার বাবদ কোনো টাকা দিতে হবে না। তাহলে আবার কেন মিটারের জন্য টাকা দেব? প্রি-পেইড মিটার লাগানোর সময় তখন মিটারের টাকার কথা বলেনি। কিন্তু এখন প্রতিমাসে মিটার ভাড়া বাবদ কার্ড রির্চাজ করা মাত্রই ৪০ টাকা কেটে নিচ্ছে।
এমনটাই বললেন লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডে সমসেরাবাদ গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা এড. মোহসিন কবির স্বপন। তাদের বাড়িতে মোট ১৮ টি মিটার রয়েছে। পৌর শহরের ৯ নং ওয়ার্ড সমসেরাবাদ লামচরি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুর রহমান (৫৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১১ নভেম্বর ঘন্টার পর ঘন্টা লক্ষ্মীপুর ঝুমুর হল এলাকা পিডিপি বিদ্যুৎ অফিসে লাইনে দাড়িয়ে ৫০০ শত টাকার একটি কার্ড (বিদ্যুত বিলের জন্য দেয়া আগাম টাকা জমা দেয়ার রসিদ) নিতে পেরেছি। কার্ড রির্চাজ করার পর বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেয়ার পর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারব মাত্র ৩৫১ টাকা ১৯ পয়সা। মিটার ভাড়া কেটেছে ৪০ টাকা, সার্ভিস র্চাজ ১০ টাকা, ডিমান্ড চার্জ ৭৫ টাকা ও ভ্যাট বাবদ কাটা হয়েছে ২৩ টাকা ৮১ পয়সা। তিনি আরো বলেন এর আগে ৩০০ টাকার একটি কার্ড কিনে পেয়েছিলাম ১৫০ টাকা।
১৬ অক্টোবর ৫০০ শত টাকা রির্চাজ করার পর দেখি ৩৪০ টাকা ৪৮ পয়সা মিটারের রয়েছে, ২৯ অক্টোবর ৫০০ শত টাকা রির্চাজ করার পর ভ্যাট কেটেছে ২৩ টাকা ৮১ পয়সা। তাদের বাড়িতে ৯ টি মিটার রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এর আগে ৩০ নভেম্বর কিলো ও লোড বাবদ পূবালী ব্যাংকে লক্ষ্মীপুর শাখা ১১২৫ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর আইনজীবী সমিতির এড. বোরহান উদ্দিন জানান, ৩০০ শত টাকা রির্চাজ করার পরও ৩ দিন যাবত আমার মিটার বন্ধ রয়েছে। এটা একটি বাড়তি জামেলা।
পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর মজুপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ৩০০ শত টাকা রির্চাজ করার এক দিন পর দেখি এক টাকাও মিটারের নেই।
বৃহস্পতিবার আরো ৩০০ টাকা রির্চাজ করলাম, আগে মিটারতো ভালোই ছিলো। এখনতো বিদ্যুৎ অফিস ডাকাতি শুরু করেছেন।ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হয় আজ সকালের বিভিন্ন সময়ে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন বর্তমানে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে এখন প্রি-পেইড মিটার সংযোগ দিচ্ছে। শুরুতে গ্রাহক সুবিধার কথা বলা হলেও বর্তমানে প্রিপেইড মিটার গলায় ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদেরকে অন্ধকারে রেখে এ সিস্টেম চালু করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে।
বিদ্যুৎ প্রি-পেইড মিটার নিতে অধিকাংশ গ্রাহকের অনাগ্রহ রয়েছে। প্রতি মাসে গ্রাহকদের প্রতিটি সিঙ্গেল ফেজ মিটারের জন্য ৪০ টাকা এবং থ্রিফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা জমা দেয়ার সময়েই কেটে নেয়া হচ্ছে।
একজন গ্রাহককে দশ বছর ধরে প্রতি মাসে মিটারের জন্য এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহকেরা বলেছেন, প্রিপেইড মিটার ‘পোষ্টপেইড’ যন্ত্রনা শুরু হয়েছে। এক দিকে চায়না প্রি-পেইড মিটার নিয়ে বিপাকে আছেন গ্রাহকেরা। তার ওপর লোডের বিষয় নিয়েও আছে চরম বিপত্তি। এরই মাঝে প্রতি মাসে আবার বিলের সাথে যুক্ত হচ্ছে মিটারের ভাড়া।
গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই প্রি-পেইড মিটার লাগানো শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, দশ বছর ধরে মিটারের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু কোনো মিটার যদি কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একজন গ্রাহক আবার নতুন মিটার নিলে তার মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি কেমন হবে। এসব বিষয়ে কোনো ধরনের প্রচারণা নেই কর্তৃপক্ষের। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অন্ধকারে রেখে এ সিস্টেম চালু করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। সব মিলিয়ে প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রায়করা ক্ষোভে ফুঁসছে।
পৌর শহরের শাখারী পাড়ার রোডের প্রিপেইড মিটারের গ্রাহক জহির হাওলাদার জানান, প্রি-পেইড মিটার নিয়ে নানান ঝামেলায় আছি। বাড়তি কোনো লোড দেয়া যায় না। আমাদের কিনা পুরানো মিটার খুলে যখন নতুন প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছিল তখন বলেছিল মিটারের জন্য কোনো মূল্য নেয়া হবে না। এখন দেখছি প্রতি মাসে রির্চাজকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ গ্রাহক এখনও বিষয়টা পরিপূর্ণভাবে জানে না বলে তিনি জানান।
ফ্রি-মিটার ক্রয় বাবত প্রতি মাসের রির্চাজকালে টাকা নেয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি বলে উল্লেখ করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এড.হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রতি মাসে মিটারের ভাড়া নেয়ার কথা আগে বলেনি পিডিপি লক্ষ্মীপুর । এটা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বাড়তি বোঝা হবে। প্রতি মাসের রির্চাজকৃত টাকা থেকে মিটারের ভাড়া কেটে নেয়ার পিডিবির সিদ্ধান্তটি কোনো অবস্থাতেই যৌক্তিক হবে না। তাহলে আমাদের যে মিটার গুলো নিয়েছে সে মিটারের কী হবে পিডিপি তো সে মিটারের ক্ষতি পূরন গ্রাহকদের দেয় নাই।
ওজোপাডিকো’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, একটি প্রি পেইড মিটার ক্রয়ে আমাদের খরচ পড়েছে ৪৮ ডলার । সেই সাথে ৩০ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়েছে। সে হিসেবে একজন সিঙ্গেল ফেজ মিটারের গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে মিটারের জন্য ৪০ টাকা এবং থ্রি পেইজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা বিদ্যৎ বিলের সাথে প্রদান করতে হবে। যা গ্রাহকদের মাসিক রির্চাজকৃত টাকা হতে কেটে নেয়া হবে।
(ওজোপাডিকোলি) আরেকটি সূত্র জানায়, সিঙ্গেল ফেজ প্রি-পেইড মিটারের মূল্য চার হাজার আট শত টাকা। থ্রি ফেইজ মিটারের মূল্য ২০ হাজার টাকা। বিদ্যুতের গ্রাহকদের প্রি পেইড মিটার স্থাপনের সময় বিনা মূল্য দেওয়া হয়েছে। তবে এখন মন্ত্রনালয় থেকে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। মাসিক বিলের সাথে মিটারের টাকা আদায়ের জন্য। এমনিতে একটি প্রি-পেইড মিটারের মেয়াদ ১০ বছর । আর এ ১০ বছরের মধ্যে মিটারটি নষ্ট হলে অবার নতুন মিটার সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় বিতারন বিভাগ নিবার্হী প্রকৌশলী গাজী গিয়াস উদ্দিন জানান, এখন পযর্ন্ত্র পৌর এলাকায় ত্রিশ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রি পেইড মিটার বার হাজার লাগানো হয়েছে। অবশিষ্ট মিটার পর্যায়ক্রমে লাগানো হবে বলে জানান তিনি। প্রি-পেইড মিটার বাধ্যগত কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্ত্রনালয়ের রাষ্ট্রপ্রতি স্বাক্ষরবিহীন একটি কয়েক পিষ্টার কাগজ সাংবাদিকদের ধরিয়ে দেন। যাতে লেখা আছে বকেয়া বিলের আদায়ের জন্য লাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।
বহু গ্রাহক অভিযোগ করেন তাদের মিটার ইউনিট পাওনা আছে তাদের মিটার ইউনিট গুলো ফেরত দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঘরে বসে মিটার রিডিং করার কারনে কিছু বিদ্যুৎ গ্রাহক ইউনিট পাওনা রয়েছে।এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা।
এবিএন/আবীর আকাশ/জসিম/রাজ্জাক