শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • মেলান্দহে বিপর্যয়ের মুখে কৃষি-প্রকৃতি ও ফসলি জমি
১৮টির মধ্যে ১ ইউনিয়নেই ১০টি ইটভাটা

মেলান্দহে বিপর্যয়ের মুখে কৃষি-প্রকৃতি ও ফসলি জমি

মেলান্দহে বিপর্যয়ের মুখে কৃষি-প্রকৃতি ও ফসলি জমি

জামালপুর, ২৭ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : জামালপুরের মেলান্দহের ১৮টি ইটভাটার মধ্যে শুধু ৫নং নয়ানগর ইউনিয়নেই ১০টি ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। এরমধ্যে ৩ গ্রাম বজরদ্দিপাড়া, বুরুঙ্গা এবং মেঘারবাড়িতেই ৮ টি এবং ছেন্না (সাবেক নয়ানগর ইউনিয়ন) গ্রামে ১টি।

এই ১০টি ছাড়াও মেলান্দহ উপজেলায় আরো ৮টিসহ মোট ১৮টি ইটভাটা ফসলী জমি-জন বসতির উপর গড়ে ওঠেছে। এই ইটভাটাগুলো টপসয়েল সাবাড় করে চলেছে। আইনে বলা আছে, ফসলি জমি, বসতি এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল এরিয়া এবং সদর রাস্তার পাশে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলের অনৈতিক সম্পর্কের সূত্র ধরেই এ সব ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ইটভাটাগুলো সদর রাস্তার পাশে, ফসলি জমি এবং বসতি এলাকায় গড়ে ওঠেছে। এদের মধ্যে একটি সরকারি কলেজ ও হাসপাতাল ঘেষে, একটি উপজেলা পরিষদ ঘেষে, তিনটি কমিউটি হাসপাতাল ঘেষে, ৪টি শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন।

মেলান্দহে বিপর্যয়ের মুখে কৃষি-প্রকৃতি ও ফসলি জমি

মালিকরা প্রতিযোগিতামূলক কৃষি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় নিচ্ছে। আর এই কৃষি জমির মাটি সংগ্রহের জন্য দালাল নিয়োগ করেছে। এই দালালরাই সহজ-সরল কৃষকদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে টপসয়েল গ্রাস করেই চলেছে। এতে আবাদী জমি এখন শেষের দিকে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই এলাকায় কৃষি উপযোগি জমি থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন-কৃষি অধিদপ্তরের লোকসহ সচেতন মহল। কৃষক শফিকুল ইসলাম (৩৮) মনে করেন ভরামৌসুমেও ধান-চালের বাজার চড়া। পিয়াজের মূল্য একশ’ টাকার উপরে। সারাদেশে এভাবেই ইটভাটায় মাটি গ্রাস করছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন নাহলে দাম বাড়বেই।

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়েছে কৃষি ফসল, সব্জি, গাছের ফলমুলেও। গবাদি পশুসহ মানুষের উপরও। অনেক গাছপালার ফলন কমেছে। ফল ধরা বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে নারিকেল-সুপারি-কলাতেও অজানা রোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এসব ইটভাটা পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। ফলে কৃষি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও প্রশাসন নি:রব।

ইটভাটার আওতায় উদনা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুর রহিম (৫৫), সেলিনা বেগমসহ জানান-আমার বাড়ী থেকে ৮টি ইটভাটায় খুব কাছাকাছি। বাড়ী ও ক্ষেতের জায়গা পড়ছে মাঝখানে। আগের চেয়ে ধান উৎপাদন কমে গেছে। অনেক নারিকেল গাছেই ফল ধরছেনা। দু’একটি গাছে যা; ধরছে, তাতে পানি নাই। ভাটার কালো ধুয়ায় আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। এই ক্ষতির কথা কাকে বলমো,বলার জায়গা নাই। ইতোপূর্বে এই এলাকার শত শত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছিল। এরপরও প্রশাসন ইটভাটা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় নি।

উদনাপাড়া, বুরুঙ্গা, বানিপাকুরিয়া, মামাভাগিনা, বজরদ্দিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাতে ঢুকতেই চোখে পড়ছে ফসলি জমির টপ সয়েল মাটি কেটে নেয়ার ভয়াবহ চিত্র। মাটি কাটার বেকুপ (মাটিকাটার বৃহৎ) মেশিন দিয়ে দিনরাত টপ সয়েল উত্তোলনের দৃশ্য নজরে পড়ে।

কৃষক গুনু মিয়া বলেন, টপ সয়েল মাটি কেটে ফেললে ফসল উৎপাদন কম হবে জেনেও মাটি দেয়া ছাড়া আমার উপায় ছিলনা। ফাঁদে পড়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। পাশের ক্ষেতের মালিক মাটি দেওয়ায় আমার ক্ষেতে বোর আবাদের পানি উঠেনা। উচু ক্ষেত থেকে নিচের ক্ষেতে পানি নেমে যায়। ক্ষেতের আইল ভেঙ্গে সীমানা হেরফের হয়ে যায়। একই ফাঁদে পড়েছেন কৃষক জহুরুল হক(৪৬) , ওয়াদুদ (৪৫) ও আব্দুল্লাহ (৬০)সহ অনেকেই। তাদের অনেকের ক্ষেতে বারো মাসই পানি জমে থাকছে। আবাদ করা যাচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স বিহীন-ফসলিজমি লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি রয়েছে কিনা? প্রশ্ন করা হলে নূরুল ইসলাম নবাব ও বাদশা ব্রিক্সের মালিক বাদশা মিয়া বলেন, পরে একসময় দেখা কইরেন। নবাগত ইউএন তামীম আল ইয়ামিন বলেন-আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খবর নেয়ার পর বলতে পারবো।

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( সার্বিক) রাসেল সাবরিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন এবং আইন না মেনে ফসলিজমি ও বসতিতে স্থাপনকৃত বেশক’টি ইটভাটায় ইতিমধ্যে বন্ধ করেছি। মেলান্দহের নয়ানগর ইউনিয়নে ফসলি ও বসতি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

এবিএন/ মো.শাহ্ জামাল/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত