গাজীপুর, ২৮ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় ‘মাহমুদ জিন্স লিমিটেড’ কারখানার অপরিশোধিত দূষিত পানিতে আশপাশের কয়েকটি পুকুরের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকার মাছ মারা গেছে। আর এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ওইসব মৎস্য খামারীরা। কারখানার কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালী পনার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ মৎস্য খামারীদের।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাহমুদ জিন্স কারখানার দূষিত পানিতে আশপাশের বেশ কয়েকটি পুকুরের মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠেছে। কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ হয়ে গেছে একেবারে বন্ধ। দূষিত নোংরা পানি কেবল পুকুরে নয় মানুষের বসবাস করার ঘরেও উঠেছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে দূর্বিসহ যন্ত্রনা।
ছোট শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষ পানির দূর্গন্ধে হয়ে পড়ছে অসুস্থ্য। দিন দিন দূষিত বর্জ্যরে এমন অবস্থার কারণে স্থানীয় এলাকায় বসবাস করাও কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
দূষিত পানির বর্জ্যে দেখা মিলে অসংখ্য মশার। মশার অভয়ারণ্য হিসেবে দূষিত পানিকেই দায়ী করছে স্থানীয়রা। মশার উপদ্রবের কারণে এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকায় দায় হয়েছে। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার যেন কোন পথই খোলা নেই সেখানে। যদিও পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকাটি। কিন্তু সময়মত পৌর কর পরিশোধ করে তেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না ওই এলাকার বাসিন্দরা।
দূষিত পানির এমনই দশা যে বাসা বাড়িতে ঢোকার জন্য কলাগাছের ভেলায় করে বাসা বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। দূষিত পানির কারণে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনগণ। আর এসব কিছুর জন্য স্থানীয় মাহমুদ জিন্স কারখানার অবহেলা ও দূষিত পানি ইচ্ছাকৃত ভাবে আশপাশে ছড়িয়ে দেয়াকে দায়ী করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় ৫টি পুকুরের মালিক ভুক্তভোগী এক মৎস্য বাবসায়ী বলেন, মাহমুদ জিন্সের অপরিশোধিত দূষিত পানিতে তার ৪টি পুকুরের প্রায় সব মাছ মরে গেছে। এতে করে তার প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন এই অবস্থার কারণে একেবারে বৌ- ছেলে-মেয়ে নিয়ে একদম পথে বসে গেছে। শেষ সম্বল বলতে তার আর কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার গেলেও তারা কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং উল্টো কারখানায় না যেতে বলেছে। অনেক সময় দাড়োয়ান দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেন যাতে করে কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং সেই সাথে তার যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন পূরণ হয়।
স্থানীয় এক মহিলা বসিন্দা বলেন, দূষিত পানির কারণে বাচ্চাদের নিয়ে বাহিরে বের হওয়া যায় না। দূষিত পানির গন্ধে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া মশা চারপাশ ঘিরে রেখেছে। মশার কারণে ঠিক মত এক জায়গায় বসে থাকা যায় না। মশারি টাঙ্গিয়েও কোন ফল আসে না বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে মাহমুদ জিন্স লিমিটেডের সিনিয়র-ব্যবস্থাপক (এইচআর, এডমিন এন্ড সিএসআর) মো: রফিকুল ইসলাম পুকুরের মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কারখানার ডাইং এর পানি ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) এর মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাহিরে যায়। কিন্তু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নতি হওয়ার কাজের জন্য ওই ড্রেনেজ ব্যবস্থাটি বন্ধ রয়েছে। তাই বিকল্প পথ হিসেবে আরেকটি সুয়ারেজ লাইন করা হয়েছে। যা আশপাশের পুকুর সহ স্থানীয় অনেক স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। ইটিপি থেকে যে পানি বের হয় তা মাছের জন্য উপযুক্ত নয় বিধায় মাছ মারা গেছে।
এ ব্যপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিএন/আলমগীর হোসেন/জসিম/রাজ্জাক