ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট), ২৯ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : এস এম আলতামাস, ১৯৫৪ সালের আগস্ট মাসে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বিনাই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম কৃষক পরিবারে জন্ম। বাবার নাম- আব্দুর রহমান, মাতার নাম- আলেয়া বেগম। ১৯৭১ সালে সেদিনের উত্তাল সময়ে কোনমতে তিনি জয়পুরহাট সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
যদিও সে পরীক্ষায় বাঙালি শিক্ষকরা দায়িত্বপালন করেননি, পাক সেনাদের তত্ত্ববধানে সেদিনের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে সে পরীক্ষা আবারও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ও দেশ মাতৃকার অমোঘ টানে দেশকে ভালবেসে পরীক্ষা শেষ করে আগস্ট মাসে বাবা-মাকে না জানিয়ে এই গ্রামের সেদিনের তরুণ মোজাম্মেল হককে সাথে নিয়ে পাড়ি জমান ভারতের শিলিগুডি ও দার্জেলিং ট্রেনিং কাম্পে।
ট্রেনিং শেষে ৭ নং সেক্টরে লৈঃ কনৈল কাজী নূরুজ্জামানের অধীনে পাগলা দেওয়ান ও ভুটিয়াপাড়া এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে শত্রু সেনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেদিনের সেই তরুন এসএম আলতামাস মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৮ সালে এই অকুতোভয় বীরযোদ্ধা বাংলাদেশ সমাজ কল্যা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন।
এর আগে তিনি ১৯৬৯ সালে গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে, এসএসসি, ১৯৭২ সালে জয়পুরহাট সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি, একই কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে ডিগ্রী ও ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পূর্বভাগ করতে পারলেও শেষভাগ সমাপ্ত করতে পারেননি।
পরে ১৯৭৭ সালে রাজশাহী সরকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট থেকে বিএড ডিগ্রী অর্জন করেন। ইংরেজীতে তুখোড় হওয়ায় আশেপাশের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতার অফার আসতে থাকে একের পর এক। তার হাতের ইংরেজী ও বাংলা লিখা যেন কম্পিউটারের ইটালিক প্রিন্ট ভার্সন। অনেকবার সরকারী চাকুরী ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদান করতে চেয়েছিলেন কিন্ত সরকারী চাকুরী ছাড়তে সুহৃদ স্বজনরা সমর্থন দেননি।
তারপরও এলাকার অনেক ছাত্র অভিভাবকদের অনুরোধে তার কাছে ইংরেজীতে প্রাইভেট পড়েছেন, যার বিকল্প আজও খুঁজে মেলা ভার। অবসর সময়ে অনুরোধ করে তার কাছে যারা ইংরেজী শিখেছেন, তারা আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।
১৯৭৫ সালে তৎকালীন মুজিবুর রহমানের মহিলা কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী, বর্তমান বিনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফজিলাতুন নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
সর্বশেষ ২০১২ সালে তিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে (সুপারভাইজার) তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাকুরীর বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধি করলেও শারীরিক অসুস্থতায় তিনি সে সুযোগ গ্রহ করেননি। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন-যাপন করছেন।
মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শোকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, মানব সেবার ব্রত নিয়ে ছোট ভাইকে ডাক্তারী পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। এখন আরও এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দেশ সেবায় নিয়োজিত আছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছোট ছেলেও চিকিৎসক হয়ে মানব সেবায় নিয়োজিত আছে। অন্য ছেলে ও মেয়ে চাকুরীজীবি এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া নেই।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শুধু একটাই চাওয়া বাংলাদেশ ভাল থাকুক।
এবিএন/মিজাানুর রহমান/জসিম/এমসি