মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলছে

খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলছে

খাগড়াছড়ি, ০৬ জানুয়ারী, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র(ইউপিডিএফ) সংগঠক মিঠুন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে ৯টি উপজেলায় সকাল সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলছে। আজ শনিবার সকাল থেকে এ অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধের কারণে সকাল থেকে খাগড়াছড়ির সাথে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অবরোধের সমর্থনে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের কোথাও কোনো পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী নৈশকোচগুলো কড়া পুলিশ প্রহরায় শহরে প্রবেশ করেছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্পর্শ কাতর এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো জেলা শহরের সেনা বাহিনী তহল জোরদার করা হয়েছে। স্কুল-কলেজে ছাত্র/ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে পায়ে হেতে যেতে দেখা গেছে।

বুধবার(৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা শহরের অপর্না চৌধুরী পাড়ার বাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে সুইচ গেট নামক এলাকায় মিঠুন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মিঠুন প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের সংগঠক ছিলেন। শুরু থেকে এ হত্যাকান্ডের জন্য নব গঠিত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সংগঠনকে দায়ী করছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। মৃত্যুর দিন ছিল একমাত্র ছেলে তিয়াজের দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী। মিঠুন চাকমার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ ও শেষকৃত্য সম্পন্ন; ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের(ইউপিডিএফ) সংগঠক মিঠুন চাকমার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষের মধ্য দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এর আগে ইউপিডিএফ নেতাকর্মীরা তার মরদেহে ফুল দিয়ে নিজ বাসায় শ্রদ্ধা জানান।

কড়া পুলিশ পাহাড়ায় শুক্রবার শহরের বিকেল সাড়ে ৩টায় মরদেহটি নিজ বাসা অর্পনাচৌধুরী পাড়ার বাসা থেকে মৌন পদযাত্রার মাধ্যমে বটতলীর মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বততলী শ্মশান এলাকায় মিঠুনের মরদেহে দলের পক্ষ থেকে ইউপিডিএফ পতাকা মোড়ানো কফিনে সর্বশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সেখানে সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করেন। ইউপিডিএফ’র দলীয় পতাকা মোড়ানো কফিনে সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে সেখানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতা থুইক্যচিং মারমা উপস্থাপনায় সংক্ষিপ্ত শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিফ’র বান্দরবান সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চংগ্যা, মানবাধিকার সংগঠক সাদিয়া গুলরুখ, কেন্দ্রীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এসএম শাহাদাত লেনিন, ইউপিডিফ’র গনতান্তিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমাসহ অন্যান্যরা।

মিঠুন চাকমা’র হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেয় ইউপিডিএফ এবং সমর্থিত অন্যান্য সংগঠনগুলো। শুরু থেকে এ হত্যাকান্ডের জন্য সদ্য নব গঠিত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সংগঠনকে দায়ী করেছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। “ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক মিঠুন চাকমাকে হত্যার ঘটনায় রাষ্ট্র জড়িত। এটা পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকা- ও ক্রসফায়ারের নতুন সংস্করণ। রাষ্ট্রীয় নীলনক্সা অনুযায়ী নব্য মুখোশ বাহিনীর দুর্বৃত্তদের দিয়ে দিন দুপুরে জনসম্মুখে মিঠুন চাকমাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে”। শুক্রবার(৫জানুয়ারি ২০১৮) বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ’ উম্মুক্ত মাঠের প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। সমাবেশ থেকে আগামীকাল শনিবার(৬ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এমএম পারভেজ লেনিন ও আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সংগঠক তিতাস চাকমা।

শান্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সেনা-পুলিশ প্রশাসনের বাধা ও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় মিঠুন চাকমাকে খুন করার প্রতিবাদে সমাবেশ থেকে ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা আগামীকাল শনিবার(৬ জানুয়ারি ২০১৮) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অবরোধ কর্মসূচি শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে তিনি জানান। অবরোধ সফল করতে ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে জেলার সকল যানবাহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনসাধারণে প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরস্থ’ পার্টি অফিসে মিঠুন চাকমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের সিদ্ধান্ত নেয় ইউপিডিএফ। কিন্তু‘ মিঠুন চাকমার মরদেহ পার্টি অফিসে আনতে বাধা প্রদান করে প্রশাসন। শোকার্ত মানুষদের বিরুদ্ধে রণ প্রস্তু‘তি নেয় পুলিশ। শুধু তাই নয়, মিঠুন চাকমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে খাগড়াছড়ি জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ আসতে থাকলে সেনা-পুলিশ পথিমধ্যে নানা পন্থায় হয়রানি ও বাধাগ্রস্থ করে। শ্রদ্ধা নিবেদনস্থল স্বনির্ভর খাগড়াছড়িতে আসতে দেয়নি। জেলার বিভিন্নস্থানে অস্থায়ী সেনা চেক পোস্ট বসিয়ে স্বনির্ভর অভিমূখি গাড়িগুলো ফেরত পাঠিয়ে দেয়।প্রশাসনের এমন অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়।

এদিকে ৯টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে সেনা-প্রশাসনের বাধা সত্ত্বেও শুক্রবার(৫ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ’ ইউপিডিএফ কার্যালয়ে মিঠুন চাকমা’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)। এর অংশ হিসেবে সকালে কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সস্পন্ন করা হয়েছে। অর্ধনমিত করে উত্তোলন করা হয়েছে দলীয় পতাকা। এতে ইউপিডিএফ, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ, শুভানুধ্যায়ী ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ মিঠুন চাকমার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। পারিবারিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে মিঠুনের মরদেহ পার্টি অফিসে আনার কথা ছিল।

অপরদিকে, মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান ভ-ুল করার উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ির পানছড়ি, দীঘিনালা, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, জালিয়া পাড়া, গুইমারা, মাটিরাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসা লোকজনকে গাড়ি আটকিয়ে তল্লাশি ও বাধা প্রদান করা হচ্ছে।

তবে সেনা-প্রশাসনের বাধা সত্ত্বেও ঢাকা, রাঙামাটি, বান্দরবান, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে খাগড়াছড়িতে এসে পৌঁছেছেন। ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সচিব চাকমা সেনা-প্রশাসনের বাধাদানের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, মিঠুন চাকমা হত্যার ঘটনায় সেনা-প্রশাসন যে জড়িত আজকের এই বাধা দানের মাধ্যমেই তা প্রমাণিত হচ্ছে। তিনি শত বাধা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত