শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ভোলায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিশোরীদের সেবা

ভোলায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিশোরীদের সেবা

ভোলায় কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিশোরীদের সেবা

ভোলা, ১৩ জানুয়ারি, এবিনিউজ : স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।

এর মাধ্যমে সর্বস্তরের কিশোর-কিশোরীরা এই কর্ণারে এসে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি, আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম, মাসিককালীন পরির্চযা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বাল্যবিবাহর কুফলসহ নানা বিষয় সেবা পেয়ে থাকে। ইতিমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন ৩টি উপজেলার তৃর্ণমূলের কিশোর-কিশোরীরা। পর্যায়ক্রমে যা অন্যান্য উপজেলায় চালু করা হবে। এখানে সেবা নিতে আশা অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য বলে জানা যায়। এই কর্ণার পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

সরোজমিন ঘুরে জানা যায় যে, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের ফারজানা বেগম (১৪)। এবছর অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠছে। প্রতিদিনই তার সহপাঠীদের সাথে নিয়মিত স্কুলে যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই সে মাসিককালীন নানা সমস্যা পরে যায়। ফলে তার সাময়িক স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি কিশোরী ক্লাবে যেই মেয়ে নিয়মিত অংশ নিয়ে কিশোরীদের মাতিয়ে রাখতো সেই মেয়ের ক্লাবে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

খবর পেয়ে কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের মাঠকর্মী ইয়াছমিন আক্তার সহায়তায় তাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মাসিককালীন পরির্চযা ও আয়রন ট্যাবলেট দেয়া হয়।

ফরজানা জানায়, আমি আসলে মাসিককালীন সময়ে কি করা উচিত তা আমি জানতাম না। ফলে যখন মাসিক হতো তখন নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। এমনকি ভয়ে বাবা-মাকে জানায়নি। এর ফলে দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে যেতে লাগলাম। মনে হতো বড় কোন রোগে আক্রান্ত হইছি। কিন্তু কিশোরী কর্ণারে গিয়ে যখন মাসিককালীন করনীয় ও বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে পরার্মশ পেয়েছি এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ বোধ করছি। এখন মাসিক এর সময় পরিস্কার পরিচ্ছন থাকি। নিয়মিত স্যানেটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে আমি আমার মতো যতো কিশোরী রয়েছে তাদেরকে আমি এই কিশোরী কর্নারে নিয়ে আশি সেবা নেয়ার জন্য। এখন কিশোরী কর্ণারে সেবা ও পরার্মশ নিয়ে আমি যেমন সুস্থ রয়েছে। তেমনি আমার ক্লাব ও সহপাঠীরাও সুস্থ রয়েছে।

শুধু ফরাজনা নয় এই কিশোরী সেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা রতনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমা, সালমা, ফাতেমা, লিপি, লিজা সহ আরো অনেকেই জানায়, আমরা আগে এই ইউনিয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাতায়ত করতাম। কিন্তুু এখানে যে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য যে একটি কর্ণার রয়েছে তা আমরা জানতাম না। এখন জানার পরে আমরা নিয়মিত এখানে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই। বর্তমানে রক্তস্বল্পতা দূর করতে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে ২টি করে আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছি। এখানে আমাদের ওজন, বিভিন্ন টিকা দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমরা আগের থেকে অনেক সুস্থ।

শিবপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরির্দশিকা সেলিনা আক্তার জানায়, আগে কিশোরীরা অনেক কম আসতো। বর্তমানে কিশোরী কর্ণার হওয়ার পরে এখন কিশোরীদের সেবা নেয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে নিয়মিত ১০-২০ জন সেবা নিচ্ছেন। কিশোরীদের আমরা স্যানিটারী প্যাড এর ব্যবহার, বয়ঃসন্ধি সময়ের খাবার-দাবার, বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোরের ঝুঁকি, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়, বয়ঃসন্ধিকাল ও শরীরের পরিবর্তন, ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছনতা সহ বাল্যবিবাহ কুফল সম্পর্কে আমরা কিশোরীদের সচেতন করে থাকি।

শিবপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: মোসলেউদ্দিন মসু বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিশোরী কর্ণার হওয়াতে কিশোরীরা এখানে নিয়মিত সেবা নেয়। ফলে এলকায় অসুস্থ কিশোর-কিশোরীর হার কমে যাচ্ছে। তবে এতো কিছুর মধ্যে সমস্য হলো এখানে ঔষুধ সরবরাহ খুবই কম। ফলে অনেকেই সেবা নিতে এসে ঔষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। তাই সরকরার যে জনগনের দোড় যে সেবা দিতে যাচ্ছে তা অনেকটা সংকটের মধ্যে পরে যাচ্ছে।

ইউনিসেফের এর বরিশাল বিভাগের প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে মোট জনসংখার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী। এদের মধ্যে কৈশোরকালে সন্তান জন্মদানের হার এখনো অনেক বেশি। মোট বার্ষিক জন্মের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সন্তান জন্ম দিচ্ছে কিশোরী মায়েরা। এদের শিক্ষা, জীবন-দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। আর এর জন্য সবার আগে চাই সচেতনতা। তাই আমরা কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমরা ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু করেছি কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।এর মাধ্যমে কিশোর- কিশোরীরা তাদের বয়ঃসন্ধিকালের নানা বিষয় সর্ম্পকে পরার্মশ পাবে।

ভোলা জেলা সিভিল সার্জেন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল একজন কিশোর-কিশোরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় কিশোর-কিশোরীরা যাতে ভুল পথে না বাড়ায় তার জন্য আমাদের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। এখানে আগত্ব কিশোর-কিশোরীদের আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা সহ বিভিন্ন পরার্মশ দিয়ে থাকি। যাতে এরা ভুল পথে পা না বাড়ায়।

এখানে আমরা বাল্য বিবাহর কুফল থেকে মাদক এর কুফল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসছি। বর্তমানে ৩টি উপজেলায় এর কার্যক্রমের সেবা নিচ্ছে প্রতিদিন ২০০-৩০০ জন কিশোর-কিশোরী। আমরা ভবিষ্যৎতে আমরা ভোলা ৭টি উপজেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের আগামী দিনের সুস্থ সবল কিশোর-কিশোরীরা সেবা নিয়ে ভালো থাকবে।

এবিএন/তপু/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত