![ক্ষেতলালে বাণিজ্যিকভাবে কুচিয়া চাষ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/16/abnews-24.bbbbbbbbbbbbbbbbb_120917.jpg)
ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট), ১৬ জানুয়ারী, এবিনিউজ : জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে মাছ চাষের পাশাপাশি কোন অর্থনৈতিক ঝ্ুঁকি ছাড়াই মানুষের পুষ্টি চাহিদা ও আমিষের ঘাটতি পূরণ এবং পরিবেশ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচনসহ জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় এনজিও (এসো) এর সহযোগিতায় এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা বাণিজ্যিকভাবে বাড়ীর পাশে নীচু পতিত জমিতে মৎস্য জাতীয় কুচিয়া চাষ করায় এলাকাতে ব্যাপক সারা ফেলেছে। ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের ভূতপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রায় অর্ধাংশের বেশী নারীরা আতœকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়ীর পাশে পতিত বা পরিত্যাক্ত জমিতে কুচিয়া ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু করেছে। এছাড়া ওই গ্রামের কিছু নারী কুচিয়া চাষ প্রদর্শনী খামারের মাধ্যমে হাপা বা ডিচ স্থাপন করে সেখানেও কুচিয়া চাষ করছে।
কুচিয়া চাষ করে উপজেলার ভূতপাড়া গ্রামের নারীরা নিজেদের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার জন্য তমারাণী, অঞ্জনারাণী, সুমতি,পঞ্চমী,সূর্য, পিপো,সুভদা, ইতি ও পবিত্র সহ প্রায় ৪০ জনের মত নারী কুচিয়া চাষের পথ বেছে নিয়েছেন। কুচিয়া চাষের জন্য প্রতিটি হাপা মাটির নীচ থেকে উপর অংশ পর্যন্ত ৩ ফিট গভীরতা সম্পূর্ন এর দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট এবং প্রস্থ্য ১৬ ফুট আয়তন বিশিষ্ট হাপায় ১ মাস বয়সের কুচিয়ার পোনা যার ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রামের মধ্যে মোট ২৩ কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়। হাপা তৈরীতে মাটির নীচে দেড় ফুট গর্তের মধ্যে নেট ও প্লাষ্টিকের ত্রিপালের উপরে আঠালো মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এছাড়া হাপাতে জমানো পানিতে কচুরিপানা দিয়ে পানি ঠান্ডা এবং জীবানু মুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় পটাশ জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য।
বর্তমান কয়েক প্রকার কুচিয়া চাষ করা হলেও এর মধ্যে সুস্বাদু ও দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যে রয়েছে দেশীয়, হাইব্রীড ও ইউরোপীয় প্রজাতির কুচিয়া উল্লেখযোগ্য। কুচিয়া মৎস্য জাতীয় হওয়ায় এরা বিশেষ করে মোলা, পুঁটি, ইছা, টাকি জাতীয় ছোট মাছ এদের প্রধান খাদ্য। চাষীরা নিয়মিত ওই সব ছোট মাছ সংগ্রহ করে কুচিয়ার খাদ্য হিসাবে হাপায় ব্যবহার করে থাকে। ৬ মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী প্রতিটি কুচিয়ার ওজন ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব ওজনের কুচিয়া বাজারে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে ক্ষেতলালে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে কুচিয়া চাষ করা হলেও বিক্রির জন্য স্থায়ী কোন বাজার না থাকায় চাষীরা গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া হাট ও বগুড়া জেলার আদমদিঘী, সান্তাহার ও নওগাঁ জেলা সদরে গিয়ে বিক্রি করে আবার কখনো পাইকাররা নিজ এলাকা থেকে ক্ষেতলালে এসে কুচিয়া সংগ্রহ করে। ক্ষেতলাল উপজেলার ভূতপাড়া গ্রামের কুচিয়া চাষী তমারাণী বলেন, নিজেদের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ সহ বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কুচিয়া চাষ করছি। এজন্য স্থানীয় এনজিও এসো কুচিয়া চাষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।
এহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশান (এসো) নির্বাহী পরিচালক মতিনুর রহমান বলেন, খাদ্য হিসাবে কিছু কিছু উপজাতীয় জনগোষ্ঠির নিকট জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কুচিয়া মাছকে খাদ্য হিসাবে অস্পৃর্শ মনে করে। যদিও ইহা শারীরিক দূর্বলতা, রক্তশূন্যতা, এ্যাজমা রোগ ,ডায়াবেটিস, বাতজ্বর, পাইলস সহ অনেক রোগ সারাতে মহৌষধের মতো কাজ করে। এজন্য আমরা এলাকাতে কুচিয়া মাছ চাষ করতে বিশেষ করে নারীদের উদ্ধুদ্ধ করে থাকি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাবেয়া ইয়াসমিন বলেন, কুচিয়া খাওয়ার উপযোগী। মানব দেহের পুষ্টি চাহিদা ও আমিষের ঘাটতি পূরণে কুচিয়াতে প্রায় ৭৫ ভাগ প্রোটিন পাওয়া যায়। স্বল্প খরচে বেশী লাভ হওয়ায় বর্তমান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৎস্য জাতীয় কুচিয়া চাষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ সহ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ভাবে কুচিয়া চাষ করছে। এসব নারীদের কুচিয়া চাষে উদ্বুদ্ধকরন সহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
এবিএন/মিজানুর রহমান/জসিম/তোহা