![হকার ইস্যুতে শামীম-আইভি সমর্থকদের সংঘর্ষ: আহত ৫০](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/16/ivy-abn_120931.jpg)
নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি, এবিনিউজ : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান মঙ্গলবার বিকেল থেকে শহরের ফুটপাতে হকারদের বসার নির্দেশ দেয়ার পর হকারদের ঠেকাতে রাস্তায় নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগর ভবন থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শহরের চাষাড়া যান তিনি।
সেখানে পৌঁছার পর মেয়র আইভী ও এমপি শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তাই সত্য হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মঙ্গলবার বিকালে বন্দর নগরীর আহত হয় অন্তত ৫০ জন। এদের একজন স্বয়ং মেয়র আইভী।
জানা যায়, শামীম ওসমান মঙ্গলবার বিকাল থেকে শহরের ফুটপাতে হকারদের বসার নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশের পর হকাররা ফুটপাতে বসলে তাদের ঠেকাতে রাস্তায় নামেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি নগর ভবন থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে চাষাড়া যান। পরে আইভী সেখানে পৌঁছালে দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে নগরী থেকে হকার উচ্ছেদ করেছিল সিটি করপোরেশন। আর তাদেরকে বসতে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শামীম ওসমান। সোমবার তিনি মেয়রকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, হকাররা নারায়ণগঞ্জে বসবে, এটা তার অনুরোধ নয়, এটা তার নির্দেশ। মেয়র আইভীও জবাব দেন এভাবে যে, নারয়ণগঞ্জ শহর শামীমের এলাকা না। এখানে তার নির্দেশ চলবে না।
দুই নেতার অনঢ় অবস্থানের কারণে সকাল থেকেই নগরীতে ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশও।
বিকাল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান আইভীর পক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন। পরে নেতাকর্মীদের নিয়েই আইভী হকার উচ্ছেদ করতে করতে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন।
অপর দিকে হকার এবং শামীম ওসমানের অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছিলেন চাষাঢ়া শহীদ মিনারে। আইভী যখন চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসেন, তখন শামীম ওসমানের লোকজন আইভীর লোকজনদের বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে মেয়র আইভী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফুদ্দীন সবুজ ও শামীম ওসমানপন্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন।
পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আর কয়েকশ পুলিশ এসে দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দেয়।
বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাব থেকে বের হন শামীম ওসমান। নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি চাষাঢ়া সায়াম প্লাজা পর্যন্ত শোডাউন করেন।
এর আগে আইভী তার নেতাকর্মীদের নিয়ে চাষাড়া ত্যাগ করেন। পরে শামীম ওসমান রাইফেলস ক্লাবে ফিরে যান।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গতকাল শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে উচ্ছদ হওয়া হকারদের ফুটপাতে বসার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কাউকে অনুরোধ করতে আসি নাই। আমি সেলিম ওসমান না আমি শামীম ওসমান। আমি আমার ভাই সেলিম ওসমানের মতো ভদ্রলোক না। তাই অনুরোধ নয়, আমি নির্দেশ দিচ্ছি নারায়ণগঞ্জের হকাররা আজ মঙ্গলবার থেকে ফুটপাতে বসবে।
শামীম ওসমান বলেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে হকারদের উঠাতে পারবেন না। তবে শামীম ওসমানের মৃত্যুর পর পারবেন। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের হকারদের পাশে থাকার নির্দেশও দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, বাংলাদেশের গরিব মানুষ না খেয়ে থাকবে সেই জন্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হননি। মানুষের রোজগার উঠিয়ে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হননি, মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাই বলছি অন্যায় করবেন আপনি (আইভী) গালি খাবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা তা নারায়ণগঞ্জের মাটিতে হবে না। গরিব মানুষের পেটে ভাত জোগানোর জন্য রাজনীতি করেন। অহংকার দাম্ভিকতা ভালো না। গরিব মানুষের কষ্টের কথা একবার ভাবেন, তারা কী অবস্থায় জীবন-যাপন করছে।
পুলিশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির উপদেষ্টা হিসাবে বলতে চাই হকারদের ওপর লাঠিচার্জ কিংবা অন্য কিছু করতে পারবেন না। কোনো পুলিশ লাঠিচার্জ তো দূরের কথা হকারদের গালিও দিতে পারবেন না। কারও কথায় হকারদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করবেন না। আমি আমার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলাম নারায়ণগঞ্জের হকারদের আওয়ামী লীগের কিংবা অন্য কেউ যদি কোনো কিছু বলে তাহলে তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। বাকিটা আমি শামীম ওসমান দেখবো। আর হকাররা আমাকে কথা দিতে হবে- আজকের পর থেকে কাউকে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে একটি টাকাও দেবে না।
শামীম ওসমান বলেন, গরিব মানুষকে খাবার দিতে পারবেন না, কিন্তু তাদের মুখের খাবার কেড়ে নিতে পারেন। হকাররা কিন্তু কোটিপতি কিংবা ধনী হওয়ার জন্য রাস্তায় বসে ব্যবসা করেন না। তারা তাদের সন্তানদের পেটে দুই বেলা খাবার দেয়ার জন্য এবং সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য রাস্তায় নামেন। এটা কী তাদের অপরাধ। হকারদের একটাই অপরাধ তারা কাজ করে খায়, তারা ইয়াবা বিক্রি করে খায় না। যারা ইয়াবা বিক্রি করে তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি