
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট), ১৮ জানুয়ারি, এবিনিউজ : জয়পুরহাটের পাঁচবিবির কৃতি সন্তান মুনিপ শাহরিয়ার মানুষের দেহের ক্ষতিগ্রস্থ শ্বাসনালীর শ্বাস কার্য পরিচালনার জন্য প্রচলিত যন্ত্র ট্রাকিওস্টোমি টিউবকে মডিফাই করে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ট্রাকিওস্টোমি টিউবের একটি মডেল উদ্ভাবন করেছেন। যন্ত্রটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও রোগী বান্ধব। মুনিপ সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের ৫শ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার উদ্ভাবনে শিক্ষক ও সহযোগী শিক্ষার্থীদের অভিভুত করেছে।
মুনিপ শাহরিয়ার জানান, ল্যারিঞ্জিয়াল, হাইপোফ্যারিঞ্জিয়াল, কারসনোমো (ক্যান্সার), এপিগ্লোটিস প্রদাহ, দুর্ঘটনা জনিত কারণে শ্বাসনালীর ক্ষতি ও মেজর হেড-নেক অপারেশনের ঘটনায় ট্রাকিওস্টোমিও নামক অস্ত্রপচার করা হয়। এতে শ্বাসনালীর উপরের অংশের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে গেলে শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য গলায় ছিদ্র করে ট্রাকিওস্টোমিও টিউব স্থাপন করা হয়। যার মুখ উন্মুক্ত থাকে। মুনিপ জানান এধরণের মুখ খোলা টিউব ব্যবহারে রোগীর মৃত্যুঝুকিসহ অনেক প্রতিবন্ধক অবস্থায় পরতে হয়। যেমন এই ধরণের রোগী মশারি ছাড়া ঘুমাতে পাড়বে না, এতে করে টিউবের খোলা মুখ দিয়ে মশা বা কীট-পতঙ্গ ঢুকে রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ ধরণের রোগীরা নদী-পুকুরে কিংবা দাঁড়িয়ে মাথায় পানি ঢেলে গোসল করতে পারবে না, তাদের নৌকায় বা মটরবাইকে ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষেধ। এতে মুখ খোলা টিউবের ভিতর দিয়ে পানি, বাইকে ভ্রমনকালে অতিরিক্ত বাতাস ফুসফুসে ঢুকে রোগীর মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। এসব সহ আরো কিছো অসুবিধার কথা ভেবে অনেক মেধা ও শ্রম ব্যয় করে তিনি একটি সম্পূর্ণ রোগী বান্ধব ও ট্রাকিওস্টোমিও টিউবের মডেল উদ্ভাবন করেন। তার এই কাজে তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজের নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ নন্দ কিশোর সিংহা। সার্বিক পরামর্শ প্রদান করেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ নুরুল হুদা নাঈম। গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে তিনি মডেলটির গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ে বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে উপস্থাপন করলে সকলে তার প্রসংশা ও তাকে উৎসাহ প্রদান করেন।
মুনিপ আরো জানান, তার উদ্ভাবিত ট্রাকিওস্টোমিও টিউব ফ্রেক্সিবল রাবার টিউব দ্বারা গলায় আটকানো থাকবে। রাতে ঘুমানোর সময় ডায়াফ্রাম কন্ট্রোলার সরিয়ে সাইট চ্যানেল বন্ধ করে রোগী ঘুমাবে এতে মশা বা কীট পতঙ্গ টিউবের মুখ দিয়ে অনুপ্রবেশ করে রোগীর মৃত্যুর কারণ হবে না। নৌকা বা গোসলের সময় এতে যুক্ত থাকবে লম্বা নলযুক্ত ইমার্জেন্সি বেলুন যা ট্রাকিওস্টোমির খোলা মুখকে পানির উপর ভাসিয়ে রাখবে। তাছাড়া টিউবের মাধ্যমে সাকশন ক্লিয়ারেন্স, অক্সিজেন সরবারাহ ও ড্রপার যোগে ঔষধ প্রদানের জন্য রয়েছে সাকশন ড্রপার পোর্ট। তিনি আরো বলেন, এটিকে আরো অত্যাধুনিক করার জন্য চেষ্ঠা করে চলেছেন।
এ তরুণ ও মেধাবী শিক্ষার্থী জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাট্টা গ্রামের রমজান আলী ও নার্গিস বেগমের তৃতীয় সন্তান। তার এ কাজে সফলতার জন্য তিনি তার মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, তিনি সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী।
এবিএন/সজল কুমার দাস/জসিম/তোহা